মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
মাইলস্টোন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা প্রত্যেক শহীদ ও আহতের পরিবারকে আত্মনির্ভরশীল করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি: মাফরুজা সুলতানা জাতীয় ঐক্যের জন্য সংলাপে বসবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইসলামে অভিমান করে কথা বন্ধ রাখার বিধান মমতার বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরুপ: ফখরুল ‘চামচা পুঁজিবাদ’ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ‘ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ও নেতৃত্ব’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ ইউনিয়ন ব্যাংকে ‘মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধ’ শীর্ষক কর্মশালা ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভাঙচুর, জাতীয় পতাকা ছিড়ে আগুন

ভিনগ্রহী বন্ধু

আহমেদ বায়েজীদ
  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

ধারাবাহিক উপন্যাস

তার স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ আর ৫ বছরের একটা নাতি আছে বাড়িতে। নাতিটাকেই বেশি মনে পড়ছে প্রফেসর রিকির। সারাদিন বাড়িটা মাতিয়ে রাখে পিচ্চিটা। বিকেলে বাড়ির সামনের ছোট্ট মাঠটাতে নাতির সাথে ফুটবল খেলা কিংবা সন্ধ্যায় লিভিং রুমে খুনসুটি করে অবসর সময়টা কাটতো তার। বাচ্চাটা না জানি কতটা একা হয়ে পড়েছে- ভাবছেন প্রফেসর। হয়তো খেলতে না পেরে মন খারাপ করে থাকে সারাদিন।
ভাবতে ভাবতে চোখের কোণে পানি এসে জমা হলো প্রফেসরের। হাত বাড়ালেই পাশের টেবিল থেকে টিস্যু নিতে পারতেন; কিন্তু ইচ্ছে হলো না তার। চশমা খুলে হাতের উল্টো পিঠ দিয়েই মুছলেন চোখের পানি। আগেও গবেষণার জন্য বাইরে গিয়ে একটানা কয়েক সপ্তাহ থাকার অভ্যাস আছে তার; তাই বাড়ির বড়োদের হয়তো খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না; কিন্তু প্রফেসর জানেন এবারের আসাটা সম্পূর্ণ আলাদা। এবার বাড়ির সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারছেন না, আবার কবে এখান থেকে মুক্তি পাবেন সেটাও জানে না। যে কারণে প্রায়ই মন খারাপ হয় তার। গবেষণা আর পড়াশোনার কাজ ছাড়া বাকি সময়টা পরিবার নিয়ে ভেবেই পার করেন। কারণ কাজের বাইরে পরিবারই তার আপন জায়গায়। কাজ আর পরিবার- এ দুটো ছাড়া প্রফেসর দীর্ঘ পেশাজীবনে অন্য কোনোকিছুতে সময় ব্যয় করেননি; কিন্তু আজ সেই কাজের জন্য পরিবার থেকে সরে থাকতে হচ্ছে।
কে তার সাথে এই আচরণটা করছে সেটাও এখন পর্যন্ত জানতে পারেননি। তবে সে যেই হোক- তার উদ্দেশ্য যে মহৎ নয় সেটা বুঝতে পারছেন প্রফেসর। আর তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই উদ্দেশ্য সফল হতে দেবেন না কিছুতেই। কারণ লোকটা যা চাইছে এবং যেভাবে পৃথিবীর সবাইকে অন্ধকারে রেখে কাজ করিয়ে নিচ্ছে- তাতে মানুষের জন্য কল্যাণকর কিছু যে নেই তা নিশ্চিত। আর সারাজীবন পৃথিবীর কল্যাণে কাজ করে যাওয়া প্রফেসর রিকি তাই জীবন দিয়ে হলেও এই অসৎ উদ্দেশ্য ঠেকাবেন। এই সিদ্ধান্ত তিনি কয়েকদিন আগেই নিয়েছেন; কিন্তু কিছু বুঝতে না দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন রুটিনমতো।
ঘণ্টা দুয়েক পর ল্যাবরেটরিতে ঢুকলেন প্রফেসর রিকি। ঢুকেই ধীর পায়ে গেলেন কাচের বাক্সবন্দি প্রাণীটার কাছে। প্রাণীটা ঘুমুচ্ছে। এটা স্বাভাবিক ঘুম। অচেতন অবস্থা থেকে দুই দিন আগে ওটার চেতনা ফিরিয়েছেন তিনি। প্রাণীটা ভাব প্রকাশ করতে চায়; কিন্তু তার ভাষা বুঝতে পারেননি প্রফেসর। তাই এই দুই দিন সেটা নিয়েই কাজ করেছেন। ট্রান্সলেটরের সাহায্য নিয়ে ওটার সাথে ভাব বিনিময়ের একটা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। যথেষ্ট খাটুনি গেছে কাজটা করতে; কিন্তু প্রফেসর এখন একটা উপায় খুঁজে পেয়েছেন অদ্ভুত প্রাণীটার কথা শোনার। যন্ত্রটা সেটও করেছেন কাচের বাক্সের সাথে। আজকে সেটা ব্যবহার করতে চান।
কাঁপা কাঁপা হাতে একটা সুইচে চাপ দিলেন প্রফেসর। টু..উ..উ. করে ছোটো একটা শব্দ হলো। ট্রান্সলেটরটা চালু হয়েছে। হেডফোন পরে নিলেন তিনি। এরপর মাইক্রোফোনটা মুখের কাছে সেট করে কথা বলা শুরু করলেন, এই যে, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ? এই যে আগন্তুক জেগে ওঠো। তুমি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছ?
ধীরে ধীরে চোখ খুললো প্রাণীটা। তারপর শোয়া থেকে উঠে বসলো। কয়েক মুহূর্ত প্রফেসরের মুখের দিকে চেয়ে রইলো। যেন বুঝতে চেষ্টা করছে তিনি কী বলছেন। এরপর কয়েকটা শব্দ করলো প্রাণীটা। ট্রান্সলেটরে ধরা পড়লো শব্দগুলো; কিন্তু অর্থ স্পষ্ট হলো না। ভাঙা ভাঙা কয়েকটা শব্দ বুঝতে পারলেন প্রফেসর। ট্রান্সলেটরের কয়েকটা সুইচ কয়েকবার এদিক ওদিক ঘোরালেন। ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাডজাস্ট করে নেওয়ার চেষ্টা।
এবার হাসি ফুটে উঠলো তার মুখে। ইয়েস… বলে এক হাত দিয়ে অন্য হাতের তালুতে ঘুষি মারলেন প্রফেসর। প্রাণীটার কথা এবার তিনি বুঝতে পারছেন। যদিও সব কিছু নয়, তবু এগুলোর একটা অর্থ ধরে নেওয়া যায়।
: কে তুমি? প্রশ্ন করলেন প্রফেসর।
: ডেপুটি থ্রি
: সেটা আবার কী, তোমার নাম বলো।
: নাম কী জিনিস? আমার আইডি নম্বর ট্রিপল নাইন ফোর টু জিরো। তবে সবাই ডেপুটি থ্রি বলেই ডাকে।
: কোথা থেকে এসেছো তুমি?
: ‘থ্রি টু ফোর’ গ্রহ থেকে। আমরা ‘এন টু’ প্রজাতির প্রাণী। তুমি কে? আমি কোথায়? নিজের পরিচয় দেয়ার পর এক সাথে দুটো প্রশ্ন করলো প্রাণীটা।
মোটামুটি ভালোভাবেই ওটা যে মানুষের ভাষা বুঝতে পারছে সেটা নিশ্চিত হলেন প্রফেসর। নিজের পরিচয় দিলেন তিনি। বললেন, আমি প্রফেসর রিকি। এটাই আমার নাম। এখানে সবাইকে আলাদা আলাদা নামে পরিচয় দেয়া হয়। আর এই জায়গাটা পৃথিবী। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সূর্য নামকে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে যে গ্রহগুলো তার একটি পৃথিবী। আর আমি একজন মানুষ। মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত ও সভ্য প্রজাতির প্রাণী।
: পৃথিবী! এমনভাবে বললো প্রাণীটা যেন নামটা পরিচিত তার কাছে।
প্রফেসর জানতে চাইলেন, তুমি পৃথিবীর কথা জানতে?
: অবশ্যই। আমাদের গ্রহ থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরের একটা গ্রহ। সভ্য প্রাণীরা থাকে সেটাও জানি। এরপর একটু চুপ করে রইলো প্রাণীটা। তারপর বললো, কমান্ডারই তাহলে আমাকে এখানে পাঠিয়েছে শাস্তি হিসেবে।
: কে কমান্ডার?
: আমাদের গ্রহের শাসনকর্তা, খুবই নিষ্ঠুর। এককভাবে সব ক্ষমতা ভোগ করতে চায়। কেউ তার বিরুদ্ধে গেলেই মেরে ফেলে; কিন্তু আমাকে মেরে না ফেলে এই গ্রহে পাঠানো হয়েছে কেন বুঝতে পারছি না।
: আমি বুঝতে পারছি। বললেন প্রফেসর। পেশায় আমি একজন বিজ্ঞানী। তোমাকে নিয়ে গবেষণা করছি কয়েকদিন হলো। সম্ভবত এই কাজের জন্যই তোমাকে এখানে পাঠানো হয়েছে আমার কাছে।
প্রফেসর সব খুলে বললেন ডেপুটিকে। কীভাবে তার সাথে মিথ্যা বলে যোগাযোগ করা হয়েছে। কীভাবে ফাঁদে ফেলে এই গবেষণা করতে বাধ্য করা হয়েছে সব জানালেন। আর প্রাণীটাও জানালো তার গ্রহের ভয়ংকর পরিকল্পনার কথা। গ্রহবাসীরা জেনে গেছে, পৃথিবী নামের গ্রহটা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনেক অগ্রসর। এখানকার আবহাওয়া আরামদায়ক এবং মাটির নিচে রয়েছে প্রচুর মূল্যবান খনিজসম্পদ। এসব কারণেই পৃথিবীতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ‘থ্রি টু ফোর’ গ্রহের কমান্ডার। নেওয়া হয়েছে বিশাল এক পরিকল্পনা এবং শিগগিরই পৃথিবী দখল করতে অভিযান শুরু করবে সেখানকার সোলজাররা। সে আরো জানালো, এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করার জন্যই তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে গিনিপিগ বানিয়ে।
সব শুনে প্রফেসর বুঝলেন এ এক মহাপরিকল্পনা। পৃথিবীতে রাজত্ব করতে হলে ভিনগ্রহীদের পৃথিবীর আবহাওয়ায় টিকতে হবে, তাইতো ডেপুটিকে পাঠিয়েছে সেই পরীক্ষার জন্য। প্রফেসরের রূপান্তরের পর ডেপুটি যদি অক্সিজেন গ্রহণ করে পৃথিবীতে মানুষের মতো টিকতে পারে, তবে ওরা সবাই একই পদ্ধতিতে নিজেদের বদলে নেবে এবং পৃথিবী নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবে। তখন আর পৃথিবীতে বিচরণ করতে ওদের গ্যাস মাস্ক ব্যবহার করতে হবে না। যা পৃথবীর জন্য ভয়ংকর এক বিপদ। এই বিপদ থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে; কিন্তু কীভাবে- সেটা একটি বড়ো প্রশ্ন। তিনি এই বাড়িতে যা করছেন, তা সবই টের পেয়ে যাচ্ছে ভিনগ্রহী শত্রুরা। তবে পৃথিবীতেও এমন কেউ আছে, যে ওদের সাহায্য করে।
কে সে? ভিনগ্রহীদের সাথে যোগাযোগ, এই বাড়ি ও গবেষণাগার নির্মাণ, ডেপুটিকে এখানে পৌঁছে দেয়া, আবার প্রফেসরের চাহিদা মতো যে-কোনো সামগ্রী সরবরাহ করা- এত কিছু যে করছে সেই লোকটাকেও খুঁজে পেতে হবে। নিশ্চয়ই কোনো বিজ্ঞানী হবে। যে-ই হোক, পৃথিবীবাসীর সাথে এই বিশ^াসঘাতকতার শাস্তিও তাকে দিতে হবে। তবে ওদেরকে কিছু বুঝতে না দিয়ে নীরবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন প্রফেসর রিকি।
ধীরে ধীরে ডেপুটির সাথে খুব খাতির হয়ে গেল প্রফেসরের। রোজ ল্যাবে ঢুকেই তিনি কিছুক্ষণ ডেপুটির সাথে গল্প করেন। ওদের গ্রহের জীবন সম্পর্কে জানেন। ডেপুটিরও খুব আগ্রহ পৃথিবীকে নিয়ে। প্রফেসরের কাছে মানুষের জীবন সম্পর্কে নানা কিছু জানতে চায় সে। মোট কথা দু’জনে বন্ধু হয়ে যায়। তবে ডেপুটি এখনো সেই কাচের ঘরেই বন্দি জীবন কাটাচ্ছে। কারণ তাকে যে উদ্দেশ্যে আনা হয়েছে সেটি এখনো শেষ করেননি প্রফেসর।
এর মধ্যে প্রফেসরের ওপর দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য চাপ আসতে থাকে। ডেপুটির ফুসফুসে অপারেশনের জন্য তাড়া দেয়া হয়। প্রফেসর কাজটা করতে দ্বিধা করছেন এটা বুঝতে পেরে ওরা প্রফেসরের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা পরিবারের ওপর আঘাত হানার হুমকি দেয়। বলা হয়, দ্রুত কাজ শেষ না করলে তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় নাতিটাকে মেরে ফেলা হবে।
ছয়.
কমান্ডার অফিসে ভীষণ ব্যস্ততা। সোলজাররা সবাই বিভিন্ন জায়গায় নিজ নিজ কাজ করছে। বড়ো কোনো কাজ সামনে থাকলে কোনো অফিস বা বাড়িতে যে রকম ব্যস্ততা থাকে অনেকটা সেরকম। এক পর্যায়ে কমান্ডার সবাইকে কনফারেন্স রুমে ডাকলেন। সবার উদ্দেশ্যে দীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন তিনি। যার সারমর্ম হচ্ছে- আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে অভিযান শুরু হবে। চারটি ফ্লাইং সসার চার ব্যাটেলিয়ন সোলজার নিয়ে রওয়ানা হবে। একটি সসারে থাকবে অভিযানের নেতা ডেপুটি ওয়ান। সে থাকবে এক নম্বর সসারে। এই সসারটি সবচেয়ে বড়ো এবং এটি থেকে অন্যগুলোতে পাওয়ার সাপ্লাই করা হবে। কমান্ডার নিজে অভিযানে যাবেন না। তবে তিনি সব কিছু তদারকি করবেন। এ যাবৎকালের আবিষ্কৃত ভয়ঙ্করসব মারণাস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে প্রতিটি টিম।
দীর্ঘ বক্তৃতার শেষ দিকে এসে কমান্ডার বললেন, প্রিয় সোলজারগণ আজ আমরা আমাদের গ্রহের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়ো অভিযান শুরু করছি। সেখানে পৌঁছে তোমাদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য অনেক আগে থেকেই আমি পরিকল্পনা নিয়েছি। আশা করি পৃথিবীতে নেমে তোমরা দ্রুত নিজেদের সেখানকার আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে। আমাদের ডেপুটি থ্রিকে কয়েক মাস আগেই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। আর পৃথিবীর দু’জন বিজ্ঞানী আমাদের হয়ে কাজ করছে। ডেপুটি আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে পৃথিবীর আবহাওয়া টিকে থাকার উপায় পেয়ে যাবে। তারপর তোমরাও একই পদ্ধতিতে নিজের রূপান্তর করবে।
কমান্ডারের পরিকল্পনা হলো, পৃথিবীর বুকে নেমে সোলজারদের চারটি গ্রুপের মধ্যে তিনটি গ্রুপ গ্রহটির ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কাজ করবে। এজন্য প্রচ- লড়াই করতে হতে পারে। তবে তার বিশ্বাস শারীরিক শক্তি আর অস্ত্রের ক্ষমতা- দুটোতেই তারা পৃথিবীবাসীকে কাবু করতে পারবে। চতুর্থ দলটি চলে যাবে পৃথিবীতে এন টুদের স্থাপিত ল্যাবরেটরিতে। সেখানে দু’জন বিজ্ঞানী সেই দলটিকে ডেপুটি থ্রির মতো পৃথিবীতে টিকে থাকার উপযোগী করে তুলবে। দ্রুততার সাথে তাদের রূপান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে। তাহলে তারা গ্যাসমাস্ক খুলেই পৃথিবীতে বিচরণ করতে পারবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে একেকটি দল ল্যাবে যাবে, আর বাকি তিনটি দল অভিযান চালাতে থাকবে।
ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো দখল করা হলে কমান্ডার নিজে যাবেন বিজয় উদযাপন করতে। আর ডেপুটি থ্রিকেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করবেন তিনি। কমান্ডারের সাথে বিরুদ্ধাচরণ করার জন্য সে মৃত্যুদ- পাওয়ার উপযুক্ত হলেও পৃথিবীতে গিয়ে জাতির জন্য অবদান রাখায় তাকে ক্ষমা করা হবে।
এরপর সোলজারের দল সারি বেঁধে বেরিয়ে এলো পাতালপুরীর শহর থেকে। ধূধূ বালুকাময় প্রান্তরে বিশেষ ব্যবস্থায় সসার উৎক্ষেপণ সেন্টার বানানো হয়েছে। সেখানে সবাই কমান্ডারকে শেষবারের মতো বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে সসারে উঠলো। কয়েক মিনিট পর পৃথিবীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো চারটি সসার। যেগুলো আলোর গতিতে পৌঁছে যাবে কোটি কোটি আলোকবর্ষ পাড়ি দিয়ে।
সসারগুলো নিঃশব্দে একে একে উড্ডয়ন করলো। সেগুলোর উদ্দেশ্যে তাকিয়ে হাসলেন কমান্ডার। সেই হাসিতে মিশে আছে নিষ্ঠুরতা আর ক্ষমতার লোভ।
সাত.
চাপের কাছে ভেঙে পড়তেই হলো প্রফেসরকে। প্রিয় নাতিটার মৃত্যুর হুমকি তাকে নরম করে তুললো। সে ডেপুটির ওপর অপারেশন শুরু করলো। তবে আশার কথা হলো, ডেপুটি ইতোমধ্যেই পৃথিবী নামক গ্রহটাকে ভালোবেসে ফেলেছে। এবং তার গ্রহের নিষ্ঠুর শাসক কমান্ডারের অন্যায় আচরণ থেকে পৃথিবীবাসীকে রক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। প্রফেসরকে বলেছে, অপারেশন সফল হলে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য নিজ গ্রহের প্রাণীদের বিরুদ্ধে সে লড়াই করবে। এত সুন্দর পৃথিবী একটা লোভী কমান্ডারের হাতে ধ্বংস হবে সেটা ডেপুটি কিছুতেই মেনে নেবে না।
যেদিন অপারেশন হওয়ার কথা সেদিন সকালেই প্রফেসরের বাড়িতে এসে হাজির হলো টেফান। তার এক সময়ের সহকারী, যাকে গবেষণা কর্মে চুরির দায়ে চাকরিচ্যুত করেছিলেন প্রফেসর রিকি। টেফানকে দেখেই রেগে গেলেন তিনি। কিছুটা আশ্চর্যও হলেন, টেফান এই বাড়ির ঠিকানা জানলো কী করে। টেফানের সাথে একজন সার্জনও আছে। যিনি প্রফেসরের দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী ডেপুটির ফুসফুসে অপারেশন করবেন। সার্জন লোকটাকে আগে কখনো দেখেননি প্রফেসর; কিন্তু টেফানকে দেখে তিনি রাগ সামলাতে পারলেন না।
: তুমি এখানে, টেফান!
: জি প্রফেসর, আপনার যুগান্তকারী আবিষ্কারের সাক্ষী হতে এসেছি। ভিনগ্রহের প্রাণীটার ওপর আপনি যখন অপারেশন করবেন তখন আমি আপনার সাথে থাকবো।
: তাহলে তুমিই সেই বিশ্বাসঘাতক, তুমিই জড়িত আছো এই ষড়যন্ত্রের সাথে? আমি আগেই ধারণা করেছিলাম, পৃথিবীর কোনো বদমাশ বিজ্ঞানী এর সাথে জড়িত আছে; কিন্তু সেটা যে তুমি তা ভাবতে পারিনি। তোমার প্রতি আমার ঘৃণা হচ্ছে। তোমার মতো লোক আমার সাথে একসময় কাজ করেছে সেটা ভাবতেও লজ্জা হচ্ছে।
প্রফেসরের কথায় কিছুটা চুপসে গেল টেফান। অনেকদিন যার সাথে জুনিয়র হিসেবে কাজ করেছেন, অনেক কিছু শিখেছে, তার ভর্ৎসনা টেফানের বিবেককে কিছুটা হলেও ধাক্কা দিলো। তবে কয়েক মুহূর্ত পরেই সে নিজেকে সামলে নিলো। বললো, এসব এখন বলে লাভ নেই প্রফেসর রিকি। আপনি আপনার কাজ শুরু করুন। আমি যা করেছি, সেটা বুঝে শুনেই করেছি। এখন এসেছি আপনার অপারেশনে সহায়তা করতে। চলুন দ্রুত অপারেশন শুরু করুন। শেষ কথাগুলো অনেকটা নির্দেশের সুরে বললো টেফান।
কাচের বাক্সবন্দি অবস্থাতেই অপারেশনের টেবিলে তোলা হলো ডেপুটিকে। কারণ এখনো ওই বাক্সের বাইরে বেঁচে থাকার শক্তি অর্জন করতে পারেনি সে। অপারেশনের আগে প্রফেসরকে মনমরা দেখে ডেপুটি জানতে চাইলো, প্রফেসর আপনার মন খারাপ কেন? আর এই লোকটা কে- যে আপনার ওপর খবরদারি করতে চাইছে?
প্রফেসর বললেন, এই সেই বিজ্ঞানী যে পৃথিবীর সাথে বিশ^াসঘাতকতা করে তোমাদের গ্রহের সাথে হাত মিলিয়েছে। এক সময় আমার জুনিয়র ছিল; কিন্তু অপকর্মের জন্য ওকে আমি বহিষ্কার করেছিলাম। অপরাধের শাস্তি পেয়ে সে শোধরায়নি, বরং আরো বড়ো অপরাধী হয়ে গেছে। এবার সে পুরো পৃথিবীর সর্বনাশ করার ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত হয়েছে।
প্রফেসরের কথা শুনে ডেপুটি কিছু বললো না। শুধু জানতে চাইলো, অপারেশন সফল হলে তার চেতনা ফিরে আসতে কতক্ষণ লাগবে।
২৪ ঘণ্টা লাগবে, বললেন প্রফেসর। কিছু কম বেশিও হতে পারে।
এসব কথার কিছুই শুনতে পেল না টেফান, কারণ ডেপুটির সাথে কথা বলার সময় প্রফেসর হেডফোন ব্যবহার করেন। কিছুক্ষণ পর শুরু হলো অপারেশন। ডেপুটিকে কাচের বাক্সে রেখেই বিশেষ প্রক্রিয়ায় কিছু যন্ত্রপাতি ঢুকানো হলো বাক্সটিতে। শুরুতে ডেপুটিকে অচেতন করার ঔষধ দেয়া হলো। এরপর তিন ঘণ্টা ধরে চললো অপারেশন। কাজ শেষ ল্যাব থেকে বেরিয়ে গেলেন প্রফেসর।
নিজের রুমে গিয়ে একাকী বসে রইলেন তিনি। মাথায় নানা চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো। তার বিশ^াস টেফান সঠিকভাবেই রূপান্তর প্রক্রিয়ার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে; কিন্তু তারপর কী হবে? ডেপুটির গ্রহের প্রাণীরা কি পৃথিবীতে আক্রমণ করবে? ডেপুটি পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হতে দেবে না অঙ্গীকার করেছে; কিন্তু ও তো একা। ওর গ্রহের প্রাণীদের মোকাবেলায় পৃথিবীর নিরাপত্তা বাহিনী সফল হতে পারবে তো? ওরা নিশ্চয়ই অনেক আধুনিক ও ক্ষমতাধর। নইলে গ্যালাক্সির বাইরে থেকে আরেকটা গ্রহে আক্রমণ চালানোর সাহস পেত না।
এসব বাজে চিন্তায় সময় কাটতে লাগলো প্রফেসরের। কখনো সোফায় বসে, কখনো বারান্দায় পায়চারি করে কাটালেন তিনি।
——-চলবে




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com