শেরপুরে আমন ধান কাটা শেষ। এখন সেই জমিতে আলু বীজ রোপণ করছেন আলু চাষীরা। ভোর থেকে সন্ধা পর্যন্ত পুরোদমে চলছে আলু বীজ রোপণের কাজ। এদিকে প্রতিদিন কৃষক ও কৃষিশ্রমিকেরা দিনভর জমিতে আলু বীজ রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রামের পর গ্রাম একরের পর একর শুধু আলু বীজ রোপণের ধুম। অন্যদিকে আলু বীজ রোপনে কর্মসংস্থান হয়েছে মৌসুমি শ্রমিকদের। যেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার পুরুষ ও নারী শ্রমিক ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরি ভিত্তিতে কাজ করছেন। জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি বছর শেরপুরের পাঁচ উপজেলায় ৫ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ আলু বীজ রোপনের কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় আলু চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। নারী শ্রমিক হেলেনা বেগম(৩৫) বলেন, আমরা সারাদিন বাড়িতেই সাংসারিক কাজে ব্যাস্ত থাকি। অনেক সময় হাতে কাজ না থাকায় অলস সময় পার করি। কিন্তু আলু বীজ রোপন ও আলু তোলার সময় আমাদের প্রয়োজন হয়। তখন প্রতিদিন কাজ করে ২শ থেকে ৩ শ টাকা মজুরি পাই। কাজ করে যে টাকা পাই সেটা দিয়ে সংসারের বিভিন্ন কাজে খরচ করি। শ্রমিক আবু মিয়া(৪০) জানান, বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আমি আলু বীজ রোপনের কাজ করি। এজন্য দূরে কোথাও কাজের জন্য যেতে হয় না। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তীব্র শীত ও কুয়াশার কারনে হাতে কোন থাকে না। তখন বাড়ির পাশেই আলু বীজ রোপনের কাজ করে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় করতে পারি। আলু চাষী ইসমাঈল হোসেন(৩৪) বলেন, এবছর আমি ১০ একর জমিতে আলু চাষ করছি। অন্যানো ফসল চাষের পাশাপাশি আলু চাষ লাভ বেশি। এক একর জমিতে আলু বীজ ক্রয়, রোপন, সার প্রয়োগ, সেচ ও শ্রমিকসহ খরচ হয় ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এরপর খরচ বাদ দিয়ে একর প্রতি লাভ থাকে ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। কৃষক সাদেক মিয়া(৩৮) জানান, প্রতিবছর তিনি আমন ধান কাটার পর আলু বীজ রোপন করেন। এবছরও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। এবার তিনি ডায়মন্ড, এস্টারিক্স ও সানশাইন এই তিন জাতের আলু বীজ রোপন করেছেন। তিনি বলেন, আলু গাছের সবথেকে খারাপ রোগ লেট ব্লাইট বা আলুর মড়ক রোগ। এই ভাইরাস আলু খেতে প্রবেশ করলে একদিনের ব্যবধানে সব গাছ মরে পুড়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়। তবে যদি শৈত্য প্রবাহ কম থাকে বা জমিতে মড়ক রোগের আক্রমন না হয়। তবে আলুতে ভাল লাভ করতে পারব। এবিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) শেরপুর জেলার উপপরিচালক মো.খলিলুর রহমান বলেন, চলতি বছর জেলায় আলুর উন্নত মানের আলু বীজ সরবারহ করা হয়েছে। কৃষকেরা এবার লেডি রোসেটা, সানশাইন, এস্টারিক্স, ডায়মন্ড, কারেজ এই চার জাতের আলু বীজ রোপন করছেন। আশা করছি আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে শেরপুর জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হবে।