দৃঢ় মনোবল, অদম্য সাহস, সততা আর আপন কর্মকে সঙ্গী করে জীবনযুদ্ধের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাঁরা আজ আপন আলোয় উদ্ভাসিত। পাশাপাশি অনুকরণীয় দৃষ্টান্তও বটে। তাদেরই একজন শাহনাজ। সফল এ নারী ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ কর্মসূচির আওতায় উপজেলায় অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী একজন সফলনারী। আজ তিনি গর্বিত। দ্বীপজেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউুনিয়নের শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহনাজ। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হলরুমে”জয়িতা অন্বেষণ কার্যক্রমের অধীনে শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের এ সম্মাননা-সংবর্ধনা দেয়া হয়। আর এখানেই সংবর্ধনা নিতে এসেছিলেন সফল এ নারী। সেখানেই কথা হয় শাহনাজ বেগমের সঙ্গে। সংবর্ধনা পাওয়ার পর তাঁর সফল হওয়ার গল্প শুনতে চাইলে তিনি আবেগপ্লুত হয়ে কষ্টে গাথা জীবন সংগ্রামের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন,খুব দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। শৈশব থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছি। আর্থিক অক্ষমতায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই আমাকে বাল্যবিবাহের শিকার হতে হয়। জীবনকে বোঝার আগে বৈবাহিক জীবনের চাপ ও দায়িত্ব কাঁধে নিতে হয়। যা ছিল আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিয়ের পর দুই সন্তানের মা হলাম। আমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেন। যা আমার জীবনে আরও জটিলতা তৈরি করে। এরই মধ্যে আমার স্বামী মারা যান। সন্তানদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে আমার উপর চলে আসে। সন্তানদের লালন-পালনের জন্য গৃহকর্মীর কাজ শুরু করি। পরে বাবার বাড়িতে ফিরে আসি। শুরু করি কৃষি কাজ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকা সত্ত্বেও আমি বাবা শাহজাহানের জমির ১৬ শতাংশ ব্যবহার করে চাষাবাদ করি। পাশাপাশি হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করি। আমার নিরলস পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস আমাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বর্তমানে আমি নিজের ও জমি লিজ নিয়ে বড পরিসরে ধান চাষ করি। আমার ফার্মে ৭৫-১০০টি হাঁস, ২০০ সোনালী ও লেয়ার মুরগি এবং ১০-১৫টি ছাগল রয়েছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে আমি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি। পরিবারকে একটি স্থিতিশীল জীবন দিতে সক্ষম হয়েছি। এই উদ্যোগ কেবল আমার ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয, বরং অনেকের জন্য একটি উদাহরণ এবং অনুপ্রেরণা। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরও বড। আমি কৃষি ও পশুপালন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে চাই। যা আমার এলাকার বেকার যুবাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে।