বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন

ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির সুধী সমাবেশ

আবুল কাশেম জামালপুর
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

অসহায় হতদরিদ্র ক্ষুধার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে খাবারের সহায়তাদানকারী স্বেচ্ছাসেবী অলাভজনক সংস্থা ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ৮ লাখ বেলার খাবার বিতরণ সম্পন্ন এবং এই প্রকল্পের আওতায় ভারত ও পাকিস্তানে নতুন লোকেশন উদ্বোধন উপলক্ষে এক সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৮ ডিসেম্বের শনিবার সন্ধ্যায় জামালপুর শহরের স্টার কাবার রেস্টুরেন্টে এই সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম রাফির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. হারুন অর রশিদ। ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির সভাপতি অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম রাফির কাজটিকে একটি মহৎ কাজ উল্লেখ করে অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, আমি যদি সপ্তাহে এভাবে উপবাস করি বা রোজা রাখি। আমার স্বাস্থ্য ভালো থাকছে। আবার ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যকে খাবার খাওয়াচ্ছি। আমার ধর্মীয় কাজটাও হচ্ছে। এটা একটা মহৎ ধারণা। তিনি আরও বলেন, টাকা দিয়েও তো মানুষকে উপকার করা যেতো। থিমটা কিন্তু সেটা না। আমি উপবাস থেকে আমার খাদ্য যেটা উদ্বৃত্ত হবে সেটা আমি অন্যদেরকে খাওয়াবো। টাকা দিলে যে হবে না তা অর্থনীতির ভাষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা মার্কেটে যদি ৫০০ কেজি চাল বিক্রি হয়। আমরা এক হাজার টাকা দিলাম কয়েকজন ক্ষুধার্ত মানুষকে। তাহলে ওই ৫০০ কেজি চালের ওপর একটা চাপ পড়বে। এতে সবার জন্য চালের চাহিদার সঙ্কট দেখা দিবে। অর্থনীতির ওপর একটা চাপ পড়বে। সুতরাং জামালপুরবাসীর জন্য রাফি একটা মহৎ কাজ করতেছেন। এতে জামালপুরবাসী আমরা সবাই গর্বিত এই জন্য যে, এই মহৎ কাজের শুরুটা আমাদের জামালপুরের একজন সন্তান করেছেন। সংস্থাটির উদ্যোগে ভারত ও পাকিস্তানের কিছু ক্ষুধার্ত মানুষদের খাবার বিতরণের নতুন লোকেশন উদ্বোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতার মাঝখানে ভারতের কয়েকজনের টাকা দিয়ে পাকিস্তানে। আবার পাকিস্তানের কয়েকজনের টাকা দিয়ে ভারতে অসহায় দরিদ্রদের খাবার দেওয়া হচ্ছে। আসলে ক্ষুধা তো কোন বৈরিতা মানে না। দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, শত্রুতাপূর্ণ যে মনোভাব, তার মধ্যেও রাফি এই মহৎ কাজ শুরু করেছেন। এটি একটি অসাধারণ ধারণা। অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ বলেন, এই ধরনের মহৎ কাজ রাফি যেটা শুরু করেছেন। সেটা থেকে আমাদের মধ্যে কিন্তু নতুন করে চিন্তা করার একটা বার্তা আসছে। আমরা তো দিনে কয়েক প্রকার খাবার খাই। অনেক সময় খাবার দরকার না পড়লেও খাই। আমি বেশ কয়েকদিন ধরে রাতের বেলার খাবার খাই না। এখন দেখতেছি। না খেয়েও অনেক ভালো আছি। এতে আমার খাবারটাতে সেফ হচ্ছে। আজকে রাফির এই ধারণা থেকে আমার ভেতরে নতুন কিছু কাজ করতেছে। আমার এই খাবারটা তো অন্যকে আমি সাহায্য করতে পারি। তিনি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আমার কলেজে ১৩০ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। আমি সকল শিক্ষকের কাছে রাফির এই ধারণা শেয়ার করবো। তাদের কাছ থেকেও যদি এইভাবে খাবারের টাকা সংগ্রহ করতে পারি। আমি চেষ্টা করবো শিক্ষক স্টাফ কাউন্সিলের মিটিংয়ে বসে সবাইকে বললে নিশ্চয় তারা উদ্বুদ্ধ হবেন। সেই টাকা দিয়ে আপনাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো। তিনি আরও বলেন, কলেজে প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা কিন্তু ভালো। জামালপুরে রক্তের যে চাহিদা, সেটার বেশিরভাগই কিন্তু চাহিদা পূরণ করে এই কলেজের মহৎ শিক্ষার্থীরা। এই ধরনের মহৎ শিক্ষার্থী কিন্তু অনেক আছে। শিক্ষার্থীদের মাঝেও রাফির এই ধারণাটা শেয়ার করবো। আমার বিশ্বাস শিক্ষার্থীদের মাঝেও রাফির এই মানবিক কাজের ধারণাটা ছড়িয়ে যাবে। আমি চেষ্টা করবো যাতে এই কাজটা জামালপুরে যাতে আরও এগিয়ে যায়। প্রধান অতিথি অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ বলেন, বিদেশে যারা শারীরিক পরিশ্রম করতে যান। তারা অমানবিক পরিশ্রম করে তাদের টাকাটা দেশে পাঠান। আর যারা ইন্টেলেকচুয়াল বাংলাদেশী যারা বিদেশে যান। তারা বাংলাদেশটাকে শোষণ করে বা বাংলাদেশে বাপ-দাদার সম্পত্তি যা আছে সব বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যান। কিন্তু অ্যাডভোকেট রাফি কিন্তু তা নয়। তিনি বিদেশে থেকে গর্জিয়াস লাইফ উপভোগ করতে পারতেন। সেটা বাদ দিয়ে বাংলাদেশের এই ক্ষুধার্ত মানুষের কথা চিন্তা করে। নিজে সপ্তাহে দুই দিন রোজা রেখে বা না খেয়ে জমিয়ে সেই টাকাটা ক্ষুধার্ত মানুষের খাবার কিনে দিয়ে শুরু করেছেন। এটা একটা মহৎ কাজ। আমি প্রত্যাশা করি এই সহায়তা উত্তোত্তর বৃদ্ধি পাবে। মানবতার এই আবেদনটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যাক। সুধী সমাবেশে অংশগ্রহণকারী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম রাফি তার সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির মাধ্যমে আমরা অসহায় হতদরিদ্রদের মাঝে ৮ লাখ বেলার খাবার বিতরণ ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছি। জামালপুর, শেরপুর, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও সিলেট জেলায় এই কর্মসূচির লোকেশন রয়েছে। সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানে নতুন দুটি লোকেশনে সেখানকার অসহায় হতদরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছি। ২০১৬ সালে চালু করা এই কর্মসূচিতে বর্তমানে ২৭৫ জন অসহায় হতদরিদ্র নারী ও পুরুষকে কার্ডের মাধ্যমে তাদের জন্য নির্ধারিত লোকেশন থেকে দুই সপ্তাহ পরপর চার কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য রয়েছে এক মিলিয়ন বেলার খাবার বিতরণ সম্পন্ন করা। প্রথমদিকে এই কর্মসূচিতে খুব একটা সাড়া পাওয়া যায় নাই। এখন শুধু বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও বিদেশ থেকেও সাড়া পাচ্ছি। এই কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখতে সকলের সহযোগিতা চাই। আজকে এই অনুষ্ঠানে এই কর্মসূচিটার বিষয়ে জানতে পেরে আপনারা সবাই আমাকে যেভাবে অনুপ্রাণিত করলেন, এজন্য আমি সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির সহ-সভাপতি, উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ও বাংলারচিঠিডটকম এর সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিমের সঞ্চালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জামালপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন, জামালপুর আইন কলেজের প্রভাষক সরোয়ার হোসেন মহান, জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. ইউছুফ আলী, প্রেসক্লাব জামালপুরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোখলেছুর রহমান লিখন, এসএ টিভির সাংবাদিক ফজলে এলাহী মাকাম, উন্নয়ন সংঘের পরিচালক (কর্মসূচি) মোর্শেদ ইকবাল, জামালপুর জেলা বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী প্রমুখ। সুধী সমাবেশে সভায় অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম রাফির কণিষ্ঠ সহোদর বাংলারচিঠিডটকম এর প্রকাশক মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম মুনুসহ বিভিন্ন পেশার বিপুল সংখ্যক সুধীজন, সাংবাদিকবৃন্দ ও ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির উপকারভোগীরা অংশ নেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com