সুন্দরবন উপকুলীয় মোংলা উপজেলায় ঘূর্নিঝড় জলোচ্ছ্বাস এবং নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে প্রতিবছর অসংখ্য পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়া লবণাক্ততা এ জনপদের পিছিয়ে থাকার প্রধান অন্তরায়। প্রতিবছর অতিরিক্ত জোয়ারের লবণ পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ দিয়ে প্রবেশ করে নষ্ট হয় কৃষি ফসল । ফলে কৃষি নির্ভর পরিবার গুলো পড়ে যায় চরম সংকটে। সরকারের উন্নয়নের পাশাপাশি উপকূলীয় সুবিধা বঞ্চিত এ জনপদের জীবনমান এবং পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ ট্রানজিশনাল প্রকল্প কার্যক্রম মৌসুমী কৃষকদের মাঝে আশার আলো জাগিয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এ প্রকল্পের সহায়তা ও তত্বাবধায়নে প্রশিক্ষণসহ পরিবার গুলোকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শাক সবজির বীজ দেওয়া ছাড়াও ছাগল ভেড়া বিতরণ করা হয়েছে। মৌসুমী সবজি চাষাবাদে পশুপালনে অর্থিক স্বচ্ছলতা সহ ঘুরে দাড়িয়েছে উপজেলার সোনাইলতলা ইউনিয়নের উলুবুনিয়া গ্রামের দরিদ্র ৬০ পরিবার। এ ছাড়া আধুনিক সবজি চাষের পাশাপাশি গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বস্তায় আদাচাষ হচ্ছে। সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈবসার ব্যবহার করছে। উলুবনিয়া গ্রামের আজিজার রহমান ও আব্দুল জলিল জানান, সম্প্রতি অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে এখানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লবন পানি প্রবেশ করে তাদের কৃষি ও সবজির বেশ ক্ষতি হয়। বেড়িবাঁধ মেরামত করায় তাদের তাদের সবজির উৎপাদন বেড়েছে। উৎপাদিত সবজি হাট-বাজারে বিক্রি করে তাদের পরিবারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। এ গ্রামের রমিছা বেগম জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু কৃষি চাষাবাদ নয়, পারিবারিক কলহ সহ দেশের সংবিধান ও সংসদ সম্পর্কেও ধারনা নিচ্ছের গ্রামের সাধারণ মানুষ। গৃহবধু আঞ্জুমান আরা বলেন, আগে রাসয়নিক সারের উপর নির্ভর করতে হতো তাদের জৈব সার ব্যবহার ও ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে ক্ষতিকর পোকা মারছি। বৃদ্ধা আহেতন বেগম বলেন-ফ্রেন্ডশিপ ট্রানজিশনাল প্রকল্প থেকে ৩ হাজার ৮শ’ টাকায় একটি ভেড়া প্রদান করেছিল। এখন সেই একটি ভেড়ায় ৪ বছরে ১৫টি বেড়া বাচ্চা হয়েছে। তাদের মতো অনেকেই বস্তায় আদাচাষ, সবজি ও ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন এবং ভেড়া পালন করে পরিবারের আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। এতে করে দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা অর্থনৈকিতভাবে লাভবান হচ্ছে। ফ্রেন্ডশিপ” ট্রান্সজিশনালফান্ড (এএসডি) প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার জুয়েল হাসান জানান, এ প্রকল্পের আওতায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে মোংলা উপজেলার ৪ টি গ্রামে ৬০টি উপকারভোগীকে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করে আসছে। তাদের মূল উদ্যেশ্যে হতদরিদ্র পরিবারের আয় বৃদ্ধিমূলক কাজের সুযোগ সৃষ্টি ও দুর্যোগ সহনশীল সক্রিয় সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে দারিদ্রতা দূরিকরণ ও জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন করা।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রশান্ত হাওলাদার জানান, এ প্রকল্পের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক উপকারভোগীদের পূর্বের ন্যায় প্রশিক্ষণ প্রদানসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. অমল কুমার জানান, মোংলা উপজেলার ফ্রেন্ডশীপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্প ৬০টি পরিবারকে ছাগল ও ভেড়া পালনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ ছাড়া প্রত্যেকটি ছাগল ও ভেড়াকে ফ্রি ভ্যাক্সিনেশনের মাধ্যমে টিকা এবং কৃমিনাশক দেয়া হয়েছে। এই এলাকা ছাগল ও ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত তাই এর মাধ্যমে এই জনপদের মানুষ স্বাবলম্বী এবং দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা ছাগল ও ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।