সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন

আন্দোলনে আহত আলাউদ্দিন পাননি কোনো সহযোগিতা, মাথায় বয়ে বেড়াচ্ছেন গুলি

মাছুম বিল্লাহ (লালমোহন) ভোলা
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৫

ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কচুয়াখালী এলাকার মোতালেব মাঝি বাড়ির বাসিন্দা যুবক মো. আলাউদ্দিন। গত দুই বছর ধরে ঢাকার মোহাম্মদপুরে লেগুনিয়া চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তার সংসারে রয়েছে স্ত্রী এবং ছোট্ট এক ছেলে। লেগুনা চালিয়ে মাসে গড়ে ২০-২৫ হাজার টাকা উপার্জন করেন তিনি। সবকিছু ঠিকই ছিল আলাউদ্দিনের। তবে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের ৩৫টি ছররা গুলিবিদ্ধ হন তিনি। যার মধ্যে মাথায়ই ঢুকে ১১টি গুলি। শরীরের বিভিন্নস্থানের এসব গুলি নিয়ে চরম যন্ত্রণা সহ্য করে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কাটাতে হয়েছে তাকে। কারণ ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত ভয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের চিকিৎসা করতো না বিভিন্ন হসপিটাল। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন হসপিটালে গিয়ে ২৬টি গুলি বের করতে পারলেও এখনো মাথার ভেতর রয়ে গেছে ৯টি গুলি। মাথার ভেতর থাকা এসব গুলি নিয়ে চরম যন্ত্রণায় দিন পার করছেন আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, প্রতি দিনের মতো ১৯ জুলাই লেগুনা চালানোর উদ্দেশ্যে সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে বাসা থেকে বের হই। তখন ঢাকায় আন্দোলন চলছিল। তবুও পেটের তাগিদে বের হই। তবে বের হয়ে দেখি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। পুলিশ শুধু শুধু নিরপারাধ মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলছে। তাই নিজেকে আর সামলাতে পারিনি, নিজেও অংশ নিই আন্দোলনে। মোহাম্মদপুরের আল্লাহ করিম মসজিদ সংলগ্ন এলাকা থেকে অন্যান্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অংশ নিয়ে পুলিশ বক্সের সামনে যাই। তবে সেখানে গেলে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে পুলিশ। পুলিশের ছোঁড়া ৩৫টি ছররা গুলি আমার মাথা, বুকে এবং কাঁধে লাগে। এর মধ্যে ১১টিই মাথায় ঢুকে। এরপর কয়েকটি গুলি বের করতে পারলেও পরিস্থির কারণে মাথার গুলিগুলো বের করতে পারিনি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হসপিটালে গেলে মাথার ভেতরের ২টি গুলি বের করেন চিকিৎসক। বাকী ৯টি গুলি বের করলে সমস্যা হতে পারে, এজন্য চিকিৎসক সেগুলো আর বের করেননি। সেই চিকিৎসকের কথায় বুঝতে পেরেছি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন এই গুলি মাথা নিয়েই থাকতে হবে। তবে গুলি থাকার কারণে মাঝেমধ্যেই হুটহাট মাথায় তীব্র ব্যথা হয়, ওই ব্যথা সহ্য করতে পারিনা। শুনেছি আন্দোলনে গিয়ে যারা শহিদ এবং আহত হয়েছেন তাদের প্রাথমিকভাবে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে আমি এখন পর্যন্ত এক পয়সাও সহযোগিতা পাইনি। আন্দোলনে আহত যুবক আলাউদ্দিন আরো বলেন, আমি অনেক অসহায়। কারণ ছোট বেলায়ই বাবা-মায়ের ডির্ভোস হয়ে যায়। এরপর নানির কাছেই বড় হয়েছি। আরেক ভাইসহ আমাদের নিয়ে নানি অনেক কষ্ট করেছেন। গ্রামে যেখানে থাকি সেটা নানিরই জমি। নানিরও সম্পত্তি বলতে ৬ শতাংশ ওই জমিটুকুই। তবে সেই জমির অংশীদার ৫জন। এখন হয়তো নানি বেঁচে আছেন এজন্য কেউ কিছু বলছেন না, তবে নানির মৃত্যুর পর হয়তো আর সেখানে থাকতে পারবো না। সরকারিভাবে অসহায় মানুষকে জমিসহ ঘর দেওয়া হয়। সেখান থেকে একটি ঘর পেলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নিজের একটি স্থায়ী বসতি আর ঠিকানা হতো। সবশেষ বলবো; আন্দোলনে অংশ নিয়েছি দেশের বৈষম্য দূর এবং প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে। সেই আন্দোলন এখন সফলও হয়েছে। তবে এখন আমি জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। তাই সরকারে কাছে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে আমার মাথার ভেতর এখনো রয়ে যাওয়া গুলিগুলো বের করতে আর্থিক সহযোগিতা এবং বাকী দিনগুলো যেন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ভালোভাবে পার করতে পারি, সেজন্য আমাকে জমিসহ সরকারি একটি ঘর প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। আলাউদ্দিনের ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা নানি মোসা. জমিলা খাতুন জানান, ছোট বেলা থেকে অনেক কষ্ট করে আমার কাছে রেখে ওদের বড় করেছি। বড় হয়ে বিয়ে করার পর আমার জমিতেই থাকতে দিয়েছি। তবে আমার মৃত্যুর পর ওদের ভবিষ্যতের কী হবে আমি তা জানি না। কারণ এই জমি তো ওদের না, এই সামান্য জমিটুকুর অংশীদারও অনেক। তাই আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই। তাই সরকারিভাবে তাকে সহযোগিতা করলে কিছুটা হলেও সে ভালো থাকবে। এছাড়া আমার শরীরেও নানান রোগ। মানুষের দেওয়া সহযোগিতায় কোনো রকমে চলছি। দুইবেলা খেলে একবেলা না খেয়ে থাকতে হয়। আমি নিজে বয়স্ক এবং বিধবা। এজন্য আমার ভাতা পাওয়ার কথা, তবে আমি পাচ্ছি না কিছুই। তাই আমাকে সরকারিভাবে যেকোনো একটি ভাতা প্রদানের অনুরোধ করছি। এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আজিজ বলেন, সরকারিভাবে আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে জেনেছি। তবে এজন্য ওই ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অনলাইনে আবেদন করে আমাদের কাছে সেখানের একটি কপি জমা দিতে হবে। এরপর আমরা তা স্থানীয়ভাবে তালিকাভুক্ত করবো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com