সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৬:০০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
কয়রায় উপকুলের মানুষ নানান প্রতিকুলতার মধ্যে সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকে কাপাসিয়ায় ৫০ জন সহকারী শিক্ষকের যোগদান : ফুলেল শুভেচ্ছা কমলগঞ্জে ইসলামী যুব মজলিসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের মাঝে আর্থিক এবং সঞ্চয় ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবিতে শ্রীমঙ্গলে সনাক-টিআইবির মানববন্ধন ফটিকছড়িতে ইফতার মাহফিলে অধ্যক্ষ নুরুল আমিন আমরা ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র গঠন করতে চাই মাদারীপুরে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দেয়া হবে জামালপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল খুলনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা নওগাঁয় ২৫০ জন কুরআনের হাফেজকে সংবর্ধনা

শিশু সন্তান নিয়ে বিপাকে শহীদ আল-আমিনের স্ত্রী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আল-আমিন। সাভারের আমিনবাজারে পোশাক কারখানা ব্যাঙ্গো ইকো এ্যাপারেলস লি. এর সিনিয়র অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জের সাতখামার দাবড়া দিনেশ্বরী মাস্টারমোড় গ্রামে। বাবা-মা, ছোট ছোট ভাই-বোন আর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন সাভার উপজেলার তেতুঁলঝোড়া ইউনিয়নের রাজফুলবাড়ীয়ার শোভাপুর গ্রামের জহিরুল ইসলামের ভাড়া বাড়িতে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আল-আমিনের আয়ে মোটামুটি ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু এখন আর ভালো নেই শহীদ আল-আমিনের পরিবার। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঘাতকের বুলেটের আঘাতে শহীদ আল-আমিনের পরিবারের দিন কাটছে কোন রকমে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে একদিকে যেমন আড়াই বছরের শিশু সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার (১৮), ঠিক তেমনি বৃদ্ধ বাবা-মা’ও যেন কোন হিসাবই মেলাতে পারছেন না। দীর্ঘ ছয়মাস পরও পরিবারে বইছে শোকের মাতম।
আল-আমিনের বাবা ওয়াজেদ আলী (৭০) এবং মা সেলিনা খাতুন (৫০)। ছোট ভাই শাকিল ইসলাম (২৪) এবং ছোট বোন আমেনা খাতুন (১১) পড়াশোনা করতো। গত ২০২১ সালের মার্চের ৫ তারিখ পাশের গ্রামের সুমাইয়া আক্তারকে বিয়ে করেন আল-আমিন। তাদের সংসারে আব্দুল্লাহ নামের আড়াই বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। শহীদ আল-আমিনের দাদা মৃত সৈয়দ আলী এবং দাদী মৃত জাহারা খাতুন। নানার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা তছির উদ্দিন (৮০) এবং নানী মৃত সালমা খাতুন।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের দিন। সেদিন বন্ধুদের সাথে বিজয় মিছিলে যোগ দেন আল-আমিন(২৮)। মিছিলটি সাভার থানা রোডে এলে মুক্তির মোড় এলাকায় পিঠে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। আল-আমিন তার শ্বশুরকে ফোনে গুলিবিদ্ধের খবর জানান। তার শ্বশুর আল-আমিনের বাবা-মাকে ফোনে বিষয়টি জানায়। এ সময় ছোট ভাই শাকিল তার ভাই আল-আমিনের মোবাইলে ফোন দিলে গুলিবিদ্ধের খবর জানতে পারে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় আল-আমিনকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
শহীদ আল-আমিনকে তার গ্রামের বাড়িতে ৬ আগস্ট দাফন করা হয়েছে। আল-আমিনের মৃত্যুর পর ওয়াজেদ আলী তার পুরো পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। বর্তমানে সেখানেই কৃষিকাজ করে জীবন-যাপন করছেন।
শহীদ আল-আমিনের বাবা ওয়াজেদ আলী মুঠোফোনে বাসস’কে বলেন, আমরা প্রায় ২৮ বছর ধরে সাভারে ছিলাম। কেউ আমার ছেলে সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে পারবে না। তিনি বলেন, আমার ছেলেই ছিল পরিবারের একমাত্র আয় উপার্জনকারী। তার আয়-রোজগারেই চলতো আমাদের পুরো সংসার। ওর মৃত্যুতে আমাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তিনি বলেন, যারা আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। আল-আমিনের মা সেলিনা খাতুন মুঠোফোনে বাসস’কে বলেন, নিজের ছেলে বলে বলছি না, আমার ছেলেটা ছিল অনেক ভালো। সংসারে ওই কামাই করতো। আমরা বৃদ্ধ মানুষ। এখন আমরা কি করবো, কোথায় যাবো? আমার ছেলের অনেক আশা-ভরসা ছিল ওর ছোট দুই ভাই-বোন আর একমাত্র সন্তানকে নিয়ে। তাদেরকে মানুষের মতো করে মানুষ করবে। তাদের পড়াশোনা করাবে। গ্রামে বাড়ি করে দেবে। আল-আমিনের মৃত্যুতে সবই আজ দুরাশা হয়ে গেলো। তিনি তার ছেলে আল-আমিনের হত্যাকা-ের বিচারের পাশাপাশি ভবিষ্যতের নিশ্চয়তার জন্য আর্থিক সহায়তা দাবি করেন।
শহীদ আল-আমিনের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার মুঠোফোনে বাসস’কে বলেন, স্বামীর মৃত্যুতে আমি আর আমার আড়াই বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ এতিম হয়ে গেলাম। মাত্র ৩ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। ছেলেটা বুঝ হওয়ার আগেই ওর বাবা শহীদ হয়ে গেলো। এ অবস্থায় শ্বশুর বাড়িতেই থাকা হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই বাবার বাড়ি ছেলেকে নিয়ে থাকছি। সেখানেই একটি কলেজে ভর্তি হয়েছি।
তিনি বলেন, আমার শিশু সন্তান ছেলে আব্দুল্লাহ’র ভবিষ্যতের জন্য সরকারিভাবে একটি ভাতার ব্যবস্থা করা হলে ভালো হয়। এছাড়া নিজেদেরও স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য সংশ্লিষ্টদের নিকট আর্থিক সহায়তা এবং এ হত্যাকা-ের বিচার দাবি করেন তিনি।
শহীদ আল-আমিনের ছোট ভাই শাকিল ইসলাম মুঠোফোনে বাসস’কে বলেন, আমার বড় ভাই আল-আমিন ছিল অমায়িক। যা সাভারের রাজফুলবাড়ীয়ার শোভাপুর গ্রামে গিয়ে খোঁজ নিলেই বুঝতে পারবেন। কারণ সেখানেই আমরা ছোট থেকে বড় হয়েছি। আমার ভাই কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। কোন ভেজালেও থাকতো না। সবসময় সংসারের কথা চিন্তা করতো। পরিবারের সবার দেখভাল করতো আমার বড় ভাই। সেই ভাইকে ঘাতকরা বাচঁতে দিলো না। গুলি করে হত্যা করলো। তিনি তার ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
শহীদ আল-আমিনের ছোট বোন আমেনা খাতুন বলেন, আমার ভাইয়া ছিল সবচেয়ে ভালো ভাইয়া। ভাইয়া আমাকে অনেক আদর করতো। যা আবদার করতাম সবসময় তা কিনে দিতো। ভাইয়ার কথা সবসময় মনে পড়ে।
আল-আমিনকে হত্যার ঘটনায় তার বাবা ওয়াজেদ আলী বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। শহীদ এ পরিবারটি জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছমা ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com