কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের পৃষ্টপোষকতায় চিহ্নিত ভূমিদস্যু আলী আকবর গংদের খপ্পরে পরে হতদরিদ্র ও অসহায় কাঞ্চনের পরিবার আজ গৃহহীন। ফলে গত চার মাস ধরে ওই পরিবারের লোকজন খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়েরসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে জরুরী প্রতিকার দাবি করেছেন। অভিযোগপত্র ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের হতদরিদ্র মো: কাঞ্চন মিয়া ও তার স্ত্রী শিখা আক্তারের সাথে তার নিকটাত্মীয় আলী আকবর গংদের দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিলো। সেই বিরোধের জের ধরে তারা সম্প্রতি বেআইনিভাবে কাঞ্চনের সম্পত্তি দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় কাঞ্চন মিয়া গত ১৫ নভেম্বর তার নিজ ভিটে মাটিতে বসবাসের পুরাতন ঘরটি ভেঙে নতুন ঘর নির্মাণ করতে গেলে ভুমি দস্যু আলী আকবর তার ভাই-ভাতিজাসহ বে-আইনীভাবে বাঁধা প্রদান করে কাঞ্চনের ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি কাঞ্চন মিয়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যাক্তিদের জানালে এ নিয়ে দরবার-সালিশ হলেও প্রতিপক্ষের লোকজন ওই সালিশ-দরবার উপেক্ষা করে পেশিশক্তির দাপট দেখিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। এহেন পরিস্থিতিতে দিশেহারা কাঞ্চন মিয়া স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরামর্শে তার ভিটেতে পুনরায় গৃহ নির্মাণ করতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন ফের বাধাসহ হুমকি দিয়ে উল্টো কাঞ্চনের পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে হোসেনপুর থানায় একটি মিথ্যা ও হয়রানি-মূলক অভিযোগ দায়ের করেন। এরই পরিপেক্ষিতে হোসেনপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে বিরোধকৃত জমির কাগজ পত্র নিয়ে গত ৭ই ডিসেম্বর পুলিশ ও এলাকাবাসী বিষয়টি মীমাংসা করেন। সে লক্ষ্যে গত ৮ ডিসেম্বর সার্ভেয়ার দ্বারা দুই পক্ষের জমি পরিমাপ করে কাঞ্চনের পরিবারের অংশ বুঝিয়ে দিতে গেলে প্রতিপক্ষ আলী আকবর গংয়ের লোকজন তা মেনে নেয়নি। ফলে বিষয়টি অমীমাংসিতই রয়ে যায়।এ কারণে কাঞ্চনের পরিবার গৃহ নির্মাণ করতে না পেরে বর্তমানে পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে দেখা যায়, অসহায় কাঞ্চনের পরিবারটি খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। এ সময় ভুক্তভোগী কাঞ্চন মিয়া জানান, বিষয়টি বারংবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা-পুলিশের নিকট লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দায়ের করলেও দীর্ঘ চার মাসেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। তাই সুস্থ সুন্দর পরিবেশে বেঁচে থাকার নিমিত্তে তিনি স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সবার কাছে মানবিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে তার ভাবী নাহার আক্তার জানান যে, এটিইও পুষ্প তার ট্রেনিং এর কথা বলে মীমাংসা না করে টাল-বাহানা করতেছে। কারণ গত সপ্তাহে তাকে তার কিশোরগঞ্জের নিজ বাসায় অবস্থান করতে দেখা যায়। সরেজমিনে আরও জানা যায় যে, ভূমিদস্যু আলী আকবরের বাড়ির উত্তর পাশে আব্দুল খালেক নামের এক ব্যক্তি বিগত সময় ঘর করতে গেলে, একই ভাবেই তাকে ঘর করতে বাধা প্রদান করে তার জমি দখলের চেষ্টা করে। এর পরিপেক্ষিতে আব্দুল খালেক মিয়া ঘটনাটির মীমাংসা করতে চাইলে, বিভিন্ন টাল-বাহানা করে উনাকে ঘুরাতে থাকে। পরবর্তীতে ৮ মাস পর গ্রাম্য দরবারীদের মাধ্যমে ঘটনাটির মোটামুটি একটি সুরাহা হয়। এই ঘটনার বছর পরে, কাজল মিয়া নামক এক ব্যক্তি আলী আকবরের ভাই এডভোকেট সাইদুর রহমানের (বর্তমান চেয়ারম্যান) কাছ থেকে সম্পত্তি কিনে ঘর নির্মাণ করতে গেলে আলী আকবর গং দ্বারা বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। তাকেও ছয় মাসের মতো মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। পরবর্তীতে কাজল মিয়া গ্রাম্য দরবারীদের মাধ্যমে ঘটনাটির মোটামুটি সূরাহা করে ঘর নির্মাণ করেন। হোসেনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মারুফ হোসেন জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুপক্ষ যে কেউ কোনো ধরনের ফৌজদারি অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাহিদ ইভা জানান, এটিইও উম্মে কুলসুম ফেরদৌসী পুষ্প একাধিকবার ফোনে আমাকে বিষয়টি অবগত করলে আমি পরামর্শ দিয়েছি আপনারা উভয়পক্ষ সামনা-সামনি বসে জমি সংক্রান্ত বিরোধ সমাধান করুন।