মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
নির্বাচন যত বিলম্ব হবে সংকট ততই বৃদ্ধি পাবে-আজিজুল বারী হেলাল মুন্সীগঞ্জে তিন উপদেষ্টার ব্যাপক উন্নয়নের ঘোষণা ॥ দুই মাসের মধ্যে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের কাজ উদ্বোধন সাপাহারে প্রভাবশালী ভূমি দস্যুর রোষানলে পড়ে কয়েকটি অসহায় পরিবার সর্বস্বান্ত বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ শ্যামনগরে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন পটুয়াখালীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত ৯ মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০.৬৩ শতাংশ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেলেন মির্জা ফখরুল উন্নত চিকিৎসা না পেয়ে পঙ্গুত্বের শঙ্কায় দিন কাটছে বেল্লালের গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশসহ দেশে দেশে বিক্ষোভ

শাসক নিয়োগে সতর্কতা

মুফতি ইমাম মো: রেযাউল কারীম বুরহানি
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালার দেয়া এক আমানত। তাই দায়িত্বশীল নিয়োগে আমানতদারিতা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এতে ভুল হলে তা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এজন্য এ বিষয়টিকে ইসলামে অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্বশীল নিয়োগের ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যে, বিদ্যমান ব্যক্তিদের মাঝে যে বা যারা এ ব্যাপারে অধিক যোগ্য, সৎ, বিশ্বস্ত, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ, অভিজ্ঞ, পারদর্শী ও আমানতদার তাদের যেন নিয়োগ দেয়া হয়। বিশেষভাবে মুসলমানদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে যিনি তাদের জন্য অধিক উত্তম ও কল্যাণকামী হবেন তাকেই নিয়োগ দেয়া উচিত। পদলোভী নয়, ক্ষমতালোভী নয় বরং এসব বিষয়ে নির্মোহ হয়ে পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, যেকোনো দুর্নীতি ও অন্যায় চাটুকারিতা ইত্যাদির ঊর্ধ্বে থেকে যিনি দায়িত্ব পালন করবেন তিনি নিয়োগ পাওয়ার অধিক হকদার। অযোগ্য, অসাধু ব্যক্তি দুর্নীতির মাধ্যমে যেন পদে আসতে না পারে সেজন্য নিয়োগের সময় ভালোভাবে যাচাই করে নেয়া কর্তব্য। এ ব্যাপারে ইসলামের নীতি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। সে নীতির আলোকে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা এখানে তুলে ধরা হলো।

মহানবী সা: যখন মক্কা বিজয় করেন, তখন তিনি কাবা শরিফের চাবিসমূহ বনি শাইবা থেকে নিয়ে নিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ সা:-এর চাচা আব্বাস রা: এসব চাবি চেয়ে বসলেন যেন হাজীদের পানি পান করানোর ব্যবস্থাপনা এবং একই সাথে কাবার অভিভাবকত্ব লাভ ও কাবার খেদমতের দায়িত্বও নিজে পেতে পারেন। কিন্তু তার এই আগ্রহ আল্লাহ পছন্দ করেননি। তিনি আয়াত নাজিল করলেন এবং কাবা শরিফের কার্যসমূহ পূর্ববর্তী খাদেম বনি শাইবার লোকদেরই প্রদান করার নির্দেশ দিলেন। অতএব এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, (কিছু ক্ষেত্র ব্যতীত) দায়িত্ব পাওয়ার প্রতি আগ্রহী থাকা বা দায়িত্ব চেয়ে নেয়া সাধারণভাবে অপছন্দনীয়। আরো প্রমাণিত হয় যে, নেতার জন্য ফরজ (কর্তব্য) হচ্ছে মুসলমানদের কোনো কাজকে এমন ব্যক্তিদের হাতে সোপর্দ করা, যারা ওই কাজের জন্য অধিক যোগ্যতার অধিকারী। যেমন মহানবী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘মুসলমানদের কোনো কাজে কেউ কর্তৃত্ব লাভ করার পর যদি সে এমন এক ব্যক্তিকে শাসক নির্বাচন করে, যার চেয়ে সেই এলাকায় অধিক যোগ্যতর মুসলমান রয়েছে, তাহলে সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে।
যে (রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা) সেনাবাহিনীতে এমন ব্যক্তিকে নেতা নির্ধারণ করে, যার চেয়ে সেনাবাহিনীতে আরো যোগ্যতর ব্যক্তি রয়েছে, সে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। বিশ্বাসঘাতকতা করল মুসলমানদের সাথে।’ (ইমাম হাকিম তার সহিহ হাদিস সঙ্কলনে এটি রেওয়ায়েত করেছেন।) কোন কোন আলিম এটিকে হজরত ওমর রা:-এর বাণী বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, হজরত ওমর রা: এ কথাটি তার ছেলেকে বলেছিলেন। হজরত ওমর রা: বলেন, ‘যে বক্তি মুসলমানদের কোনো ব্যাপারে (নির্বাহীর) দায়িত্ব পেয়ে (যোগ্যতর লোককে বাদ দিয়ে) এমন ব্যক্তিকে কর্মকর্তা নিযুক্ত করে, যার সাথে তার স্নেহের সম্পর্ক আছে কিংবা সে তার স্বজন, তবে সে আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল এবং মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল।’ বিষয়টির ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করা শাসনকর্তাদের প্রথম কর্তব্য। রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে কোন লোক প্রকৃত যোগ্য, শহর ও পৌর এলাকাগুলোতে এবং স্থানীয় প্রশাসনে কী ধরনের সরকারি প্রতিনিধি বা কর্মকর্তা নিয়োগ বাঞ্ছনীয়, এ ব্যাপারে যাচাই-বাছাই ও পরামর্শ করা অপরিহার্য। কারণ, যারা সেনা ইউনিটের কমান্ড অফিসার হবে, যারা ছোট বড় ইসলামী সেনাদলের নেতৃত্ব দেবে, যারা মুসলমানদের কাছ থেকে নানা প্রকার শুল্ক কর আদায় করবে, যারা জনগণের অর্থব্যবস্থার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে, মূলত তারাই এসবের নিয়ন্ত্রণ করে থাকবে। সরকারি প্রশাসনিক কাজকর্মের পরিচালকদের ক্ষেত্রেও একই কথা। এ জন্য উচ্চ কর্মকর্তা ও প্রধান শাসকের জন্য একান্ত অপরিহার্য বিষয় হলো, এমন সব লোককে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ করা, যারা মুসলমানদের জন্য উত্তম এবং যোগ্য বলে গণ্য। এটাও লক্ষ রাখতে হবে যে, যোগ্য লোক থাকতে যাতে কোনো অযোগ্য ব্যক্তি নিয়োগপত্র পেয়ে না যায়। এ নীতি রাষ্ট্রীয় সব প্রশাসনিক বিভাগে অবশ্যই পালনীয়। যেমন- নামাজে ইমাম ও মুয়াজ্জিন, শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষক, হজ অনুষ্ঠানে খতিব বা কর্মকর্তা, খাদ্য ও পানির ব্যবস্থাপক, নদ-নদী, খাল ও ঝর্ণার তত্ত্বাবধায়ক, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের সংরক্ষক, সেনানিবাসের প্রহরী, সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্র প্রস্তুতকারী, অস্ত্রাগারের পাহারাদার, ছোট বড় বিভিন্ন বাহিনীর পরিচালক, বাজারের শুল্ক আদায়কারী ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা। এদের প্রত্যেকের নিয়োগে সততা ও যোগ্যতাকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
কেউ মুসলিম সমাজের নেতা ও শাসন কর্তৃত্বের অধিকারী হলে তার দায়িত্ব হলো নিজের অধীনস্থ এমন সব লোককে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ করা, যারা সৎ, বিশ্বস্ত এবং সংশ্লিষ্ট কাজের ব্যাপারে দক্ষ, পারদর্শী। এমন সব ব্যক্তিকে কিছুতেই সামনে এগিয়ে দেয়া উচিত নয়, যারা নিজেরাই কর্তৃত্ব পাবার খাহেশ পোষণ করে কিংবা পদের দাবি করে। বরং যারা পদলোভী, ওই পদ পাওয়ার প্রশ্নে তাদের এই লোভই হচ্ছে বড় অযোগ্যতা। সহিহ আল বুখারি এবং সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সা: থেকে বর্ণিত আছে যে, ‘একদিন তার দরবারে কিছু লোক উপস্থিত হয়ে তার পক্ষ থেকে শাসন কর্তৃত্ব প্রাপ্তির অনুরোধ জানাল। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন : যারা স্বেচ্ছায় কর্তৃত্ব চায়, আমরা এমন লোককে কোনো কিছুর কর্তৃত্ব দেই না।’ (বুখারি, মুসলিম)
আবদুর রহমান ইবনে সুমারা রা: কর্তৃক বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘হে আবদুর রহমান! নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব চেয়ে নিও না। অপ্রার্থিতভাবে যদি তোমার হাতে নেতৃত্ব আসে, তাহলে তুমি দায়িত্ব পালনে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য পাবে আর যদি তুমি নেতৃত্ব চেয়ে নাও, তাহলে সেটার (ভালোমন্দের) পুরো দায়িত্ব তোমার ওপরই বর্তাবে (এবং তুমি আল্লাহর সাহায্য পাবে না)।’
মহানবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিচারকের পদ চায় আর এজন্য কারো সাহায্য প্রার্থনা করে, তার ওপর সে কাজের (ভালোমন্দ) সোপর্দ করা হবে। আর যে বিচারকের পদ দাবি না করে এবং এজন্য কারো সাহায্য না চায়, তা হলে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য একজন ফেরেশতা পাঠান। ওই ফেরেশতা তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।’ (আস সুন্নাহ) অতএব প্রধান শাসক যদি দৃঢ়তা হারিয়ে ফেলেন এবং অধিক সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে বন্ধুত্ব, স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বদেশীকতা যেমন ইরানি, তুর্কি, রোমী কিংবা অপর কোনো সম্পর্কের ভিত্তিতে অযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করেন, তাহলে সেটা আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হবে। ঠিক তেমনিভাবে উৎকোচ অথবা অপর কোনো সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে কিংবা এ জাতীয় অন্য কোনো সঙ্কীর্ণ স্বার্থ যদি কারো নিয়োগের কারণ হয় অথবা যোগ্য সৎ ব্যক্তির প্রতি কপটতা ও বৈরিতার কারণে তাকে বাদ দিয়ে অযোগ্য অসাধু ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়, তাহলে সেটাও অবশ্যই আল্লাহ, তার রাসূল সা: ও সাধারণ মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা বৈ কিছু নয়। আল্লাহ তায়ালা এহেন বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে নিষেধ করে বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! জেনে শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করো না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও না।’ (সূরা আনফাল : ২৭) এরপর আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘জেনে রেখো, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি হচ্ছে একটি ফিতনা (পরীক্ষা)। নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছেই রয়েছে বিরাট প্রতিদান।’ (সূরা আনফাল : ২৮) (চলবে)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com