ওকুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী অষ্টমীর স্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় ৪শ বছর ধরে চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এই ঐতিহ্যবাহী স্নান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। হিন্দু ধর্ম মতে এটি একটি পূণ্য কর্ম এবং স্নানের স্থানটি তীর্থস্থান।
চলতি পঞ্জিকা হিসাব অনুযায়ী শুক্রবার রাত ২টা ৭মি ৫ সেকেন্ড থেকে শনিবার রাত ১২টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত। তবে স্নানের উত্তম সময় শনিবার দুপুর ১২টা ৮ মিনিট ৫০ সেকেন্ড থেকে ১টা ৪১ মিনিটের মধ্যে। উত্তম সময় ধরতে না পারায় দূরদূরান্ত থেকে আসা পূণ্যার্থীরা সারা দিনব্যাপী নিজেদের সুবিধামত সময়ে স্নানকার্য সম্পন্ন করেছেন।
‘হে মহা ভগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য, তুমি আমার পাপ হরণ করো’- মন্ত্র উচ্চারণ করে ব্রহ্মার নিকট কৃপা চেয়ে স্নান উৎসবে মেতে ওঠেন পূণ্যার্থীরা।
এবারে প্রায় ৩ লাখের অধিক পূণ্যার্থীর পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র পাড়ের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা। উপজেলার রমনা ইউনিয়নের রমনাঘাটের দক্ষিণে মাঝিপাড়া থেকে দক্ষিণে জোড়গাছ বাজার এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা ছিল স্থানের ব্যাপ্তি। স্নান উৎসবকে ঘিরে কয়েকদিন আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পূণ্যার্থীর ভিড় জমে চিলমারী বন্দরের ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে।
রংপুর তাজহাট থেকে স্নান উৎসবে আসা পূণ্যার্থী লাবনী রায় ও শ্রাবনী রানী জানান, এবারে অষ্টমী স্নানের আনন্দটা একটু বেশি। তাই অনেক কষ্ট করে স্নান করতে এসেছি, পরিবেশ ভালো থাকায় স্নান করে তৃপ্তিও পেয়েছি।
অষ্টমী স্নান উৎসব কমিটির ভাষ্যমতে, প্রতি বছরের মতো এবারও ভারত, নেপাল ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ৩ লাখের অধিক পূণ্যার্থী যোগ দিয়েছেন স্নান উৎসবে। উৎসবটি বুধবার হলে ভারত ও নেপাল থেকে বেশি সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী আসতেন বলে ধারণা করছেন তারা।
এদিকে ঐতিহ্যবাহী এই স্নান-মেলার জন্য নির্দিষ্ট ঘাট না থাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উন্মুক্ত স্নানঘাটে পূণ্যার্থীরা স্নানপর্ব সম্পন্ন করেছেন। স্নান উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। দূর থেকে আসা পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার ও ভিডিপির পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করাসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্নান উৎসব কমিটির আহ্বায়ক বিষু চন্দ্র বর্মন বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে স্নান সম্পন্ন হয়েছে, এবারে দেশ-বিদেশের প্রায় ৩ লাখ পূণ্যার্থী স্নান উৎসবে যোগ দিয়েছেন।
তিনি জানান, পরিবেশ অনুকূলে থাকায় অন্যবারের তুলনায় পূন্যার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়েছে।