মৌসুমের শুরুতে অনেকে সিন্ডিকেট করে ধান কম দামে কিনে কৃষকদের ঠকায়। এ জন্য সরকারিভাবে দর বেঁধে দিয়ে সংগ্রহ করা হয়। এবার নতুন আমন ধানে ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষক। একটানা ধান কাটার পর বিশ্রাম নিচ্ছিলেন দুজন। মেতে উঠেছেন গল্পে। তবে তাঁদের গোটা গল্প জুড়ে ছিল ধান ও ধানের দাম নিয়ে। দিন মজুর কালু বর্মণ বলছিলেন, ‘ধানের দাম খালি বাড়েছেতে বাড়েছেই।’ তাঁর সঙ্গী মিনতি বললেন, ‘ওইডায় তো দেখেছু। কাইল হাটত ধান গেইছে ২১০০ টাকা বস্তা (দুই মণ)। জন্মেও ধানের এরং দাম দেখুনি।’ সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া এলাকায় ওই দুজনের সঙ্গে কথা হয়। ওই এলাকার চাষি শহিদুল ইসলাম জানালেন, গত কয়েক বছর ধান চাষ করে চাষি লোকসান গুনেছেন। গত বছর এই সময় প্রতি বস্তা ধান ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে পারেননি। এবার প্রায় দুই হাজার টাকা পাওয়া যাচ্ছে। ধানের আবাদ করে চাষি লাভবান হচ্ছেন। গত তিন-চার দিন সদর উপজেলার কয়েকটি হাট ঘুরে জানা গেছে, হাটজুড়ে ধানের প্রচুর সরবরাহ। ভ্যান ও নছিমনে করে হাটে ধান বিক্রির জন্য আনছেন চাষিরা। আমন ধান প্রতি মণ ১০৫০ থেকে ১০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সদর উপজেলার কর্ণফুলী বাজারে ১০ মণ ধান বিক্রি করতে এসেছেন রাজাগাঁও গ্রামের চাষি গণী মিয়া। তিনি জানান, এবার চার বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে হালচাষ থেকে শুরু করে সার, কীটনাশক, সেচ ও কাটা-মাড়াই পর্যন্ত বিঘায় খরচ গড়ে প্রায় ৯ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ফলন হয়েছে ১৮ মণ। ১০৩০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করে পেয়েছেন ৭৪ হাজার ১৬০ টাকা। রুহিয়া থানাধীন ঘনিমহেষপুর গ্রামের চাষি আনিসুল হক দুই বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাজারত ধানের দাম এবারের মতো আর কনো দিন পাউনি। প্রতিবছর এরং দাম হইলে মাইয়া ছুয়া লেহেনে ভালো করে বাঁচিবা পারিমো।’ ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর ২৬ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের ধান আবাদ হয়েছে, যা মৌসুমে আমন আবাদের ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জেলার কৃষকেরা এখন সেই ধান ঘরে তুলছেন। গত রবিবার রুহিয়া থানার ঢোলারহাট, আখানগর, বড়দেশ্বরী ও ঝাড়গাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা পাকা ধান কাটায় ব্য¯। কেউ কেউ আঁটি বাঁধছেন। কেউ আবার মাথায় করে ধানের আঁটি বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষ্ণ রায় জানান, ধান চাষ করে চাষি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। এবার তাঁরা ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন। কৃষকেরা ফসলের ন্যায্যমূল্য পেলে ধানের আবাদ আরও বেড়ে যাবে, যা খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে।