করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন না পেলে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ খোলা কঠিন হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি। একইসাথে ১৮ বছরের ওপরে বয়সী শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করা প্রয়োজন বলে মতামত দিয়েছে কমিটি। গত রোববার রাতে কমিটির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহর সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এ বিষয়ে মতামত জানিয়ে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে। বিভিন্ন পেশা ও জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য সরকারি উদ্যোগে ‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিন ডিপ্লোয়মেন্ট প্ল্যান’তৈরি করা হয়েছে। সভায় এ বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়। পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণ ও যথাযথ বলে মতামত প্রদান ও সমর্থন করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার ইতিমধ্যে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনিকার তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করেছে। এজন্য সরকার অর্থও বরাদ্দ করেছে। দেশের ঝুঁকিপূর্ণ ও ষাটোর্ধ্ব নাগরিক, চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিকসহ ফ্রন্টলাইনের কর্মীদের ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়ে ফোকাস করছে সরকার। জাতীয় পরামর্শক কমিটি আরো উল্লেখ করে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্যাকসিন বিতরণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। এ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। একইসাথে শিক্ষার্থীরা ভ্যাকসিন না পেলে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ খোলা কঠিন হবে। ১৮ বছরের উর্ধ্বে ছাত্রছাত্রীদের ভ্যাকসিন দেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে কমিটি।
শঙ্কা বাড়াচ্ছে শনাক্ত ও মৃত্যু: টানা পাঁচদিন বাড়ার পর ষষ্ঠ দিনে কিছুটা কমে এসেছিল শনাক্তের হার। তবে তা একদিনের বেশি স্থায়ী হয়নি। মাঝে একদিন বাদ দিলে গত এক সপ্তাহের মধ্যে ছয়দিনই দৈনিক দুই হাজারের বেশি কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। সংক্রমণের এ ধারা ভাবিয়ে তুলেছে সরকার থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ সবাইকে। সবার আশঙ্কা, শীত সামনে রেখে শনাক্তের হার আরো বাড়তে পারে, ভয়াবহ রূপ নিতে পারে করোনা মহামারী। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকালও দেশে ২ হাজার ৬০ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরো ৩৮ জন, যা আগের দিনের চেয়ে ১০ জন বেশি। গতকালের ৩৮ জন নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৮৮ জনে। আর শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪১ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এর আগে ১৬ নভেম্বর থেকে টানা পাঁচদিন দুই হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশে। তবে ২১ নভেম্বর এ সংখ্যা ১ হাজার ৮০০-তে নেমেছিল। যদিও শনাক্তের সংখ্যা কমার এ হার একদিনের বেশি স্থায়ী হয়নি। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়তে থাকায় দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে শীতে করোনা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা। গত রোববার করোনা পরিস্থিতি বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশের ১১৭টি পরীক্ষাগারে গত রোববার সকাল পর্যন্ত ১৩ হাজার ৬৬৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং আগের কিছু নমুনাসহ ১৩ হাজার ৮৭০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময় নতুন করে ২ হাজার ৬০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪১ জনে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ২৬ লাখ ৪৯ হাজার ৭২টি। গতকালের নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বাসা ও হাসপাতালে মোট ২ হাজার ৭৬ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এতে মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৪২৮ জনে। নতুন মারা যাওয়া ৩৮ জনের মধ্যে ২৮ জনই পুরুষ এবং বাকি ১০ জন নারী। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ১৯ জনের বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে। ১০ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, চারজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০। ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে বয়সী রয়েছেন এবং একজনের বয়স শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে। তারা সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ২৮ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। বাকিদের মধ্যে তিনজন চট্টগ্রাম, দুজন করে চারজন খুলনা ও ময়মনসিংহ, একজন করে তিনজন রাজশাহী, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের বাসিন্দা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতি ১০ লাখে ২ হাজার ৬২৬ দশমিক ৬৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, সুস্থ হয়েছে ২ হাজার ১২৮ দশমিক শূন্য ৯ জন এবং মারা গেছেন ৩৭ দশমিক ৫১ জন।
দেশে চলতি বছরের ৮ মার্চ করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার ১০ দিন পর প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যুর খবর জানায় সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্ব তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৪ এবং মৃত্যুর তালিকায় ৩৩তম।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। ভাইরাসটির ভয়াবহতা এবং বৈশিষ্ট্য বুঝে ওঠার আগেই এটি বিভিন্ন দেশে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়। ইউরোপ ও আমেরিকার দেশে ভাইরাস ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। পরে চলতি বছরের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কভিড-১৯ নামের সংক্রমক রোগের কার্যকর টিকা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। বিশ্বের দেড়শতাধিক দেশ টিকা আবিষ্কারে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু টিকা ট্রায়ালের তৃতীয় পর্যায়েও রয়েছে। বাংলাদেশ সময় গতকাল বিকাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার ৪৮৪ জন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬০ জন।
৮১ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ২৮ জন। এ পর্যন্ত করোনায় ছয় হাজার ৪১৬ জনের মৃত্যু হলো। ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ১৮৩ জন এবং এখন পর্যন্ত তিন লাখ ৬৪ হাজার ৬১১ জন সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৪১৯ জন। এখন পর্যন্ত চার লাখ ৪৯ হাজার ৭৬০ জন শনাক্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের সংখ্যা গত ৮১ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ