শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

কুড়িগ্রাম জেলার ১ম ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বিদ্যাপীঠ উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী স্কুল এন্ড কলেজ

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বিদ্যাপীঠ উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী স্কুল এন্ড কলেজ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দীর্ঘ ১৫২ বছরেও জাতীয়করণ করা হয়নি। একসময় বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব সেলিম আল দীন, কবি কালিদাস শেখরসহ অনেক স্বনামধণ্য ব্যক্তিদের পদচারনায় মুখরিত ছিল এ বিদ্যাপীঠ। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ছাত্রদের ভূমিকা ছিল স্মরণীয়। এ প্রতিষ্ঠানের গর্বিত ছাত্র প্রকৌশলী আবুল কাশেম চাঁদ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ‘চাঁদ কোম্পানী’ গঠন করে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এ প্রতিষ্ঠানের গর্বিত ছাত্র চিলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত হন। এছাড়াও স্বাধীনতা যুদ্ধে এ প্রতিষ্ঠানের কয়েক শত ছাত্র অংশ নিয়েছিল। উলিপুর উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে এ প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। তৎকালীন সময়ে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে হাতে গোনা ২/১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ বিদ্যাপীঠটির নাম ছিল উল্লেখ্য করার মতো। বর্তমানেও উত্তরাঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে এ বিদ্যাপীঠের ফলাফলও আকর্ষনীয়। এ প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে অনেকে দেশ ও দেশের বাইরে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছেন। ’৭৫ এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কোন সরকারই এ প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণের উদ্যোগ নেয়নি। প্রায় ১৫২ বছর পূর্বে ১৮৬৮ সালে উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী বিদ্যালয় নামে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করে। কাশিম বাজারের জমিদার মহারাজ কৃষ্ণ চন্দ্রের বিধবা পত্নী মহিয়সী মহারানী স্বর্ণময়ী বাহারবন্দ পরগনার প্রজা সাধারণের সন্তানদের বিদ্যাদানের মহৎ উদ্দেশে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষা-দীক্ষায় পশ্চাদপদ বাহারবন্দ পরগনার মানুষজনের মাঝে শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নের মহৎ উদ্দেশ্যে মহারাণী তাঁর প্রায় ৫ একর জমি বিদ্যালয়টির নামে দান করেন। এমনকি মহারাণী নিজেই পালকিতে চড়ে বাড়ী বাড়ী ঘুরে এ বিদ্যালয়ের জন্য ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৯৭ সালে এতে কারিগরি শাখা ও ১৯৯৯ সালে মহাবিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাকালে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দিয়ে দরিদ্র ছাত্রদের শিক্ষায় উৎসাহিত করা হত। ধর্মান্ধতার যুগেও এখানে নারীরা শিক্ষার সুযোগ পেতো। বিদ্যালয়টিতে দেশের বহুগুণী পন্ডিত, শিক্ষাবিদ ও কবি সাহিত্যিকগণ শিক্ষাদান করে গেছেন। কবি শেখর কালিদাস রায়, সৈয়দ হামিদুর রহমানসহ অনেক গুণী পন্ডিত ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। বিদ্যালয়টি কলেজ শাখায় উন্নীত হওয়ার পর ২০০১ সালে অধ্যক্ষ হিসাবে আব্দুল কাদের যোগদান করে কমরত আছেন। একসময় উত্তরাঞ্চেলের বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষার্থীরা এ প্রতিষ্ঠানটিতে লেখাপড়া করতে আসতো। এ বিদ্যাপীঠটিকে ঘিরেই উলিপুর শিক্ষানগরী হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে একটি প্রশাসনিক ভবনসহ ১৩টি ভবন ও কক্ষ ৪০টি রয়েছে। উচ্চ বিদ্যালয়, কারিগরি ও মহাবিদ্যালয়ের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ভবন ও ক্লাশ রুম। প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন ফিডার স্কুল হিসাবে উলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়াও খেলার মাঠ ও দু’টি পুকুর রয়েছে। খেলাধুলা, কম্পিউটার ল্যাব ও শরীর চর্চার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে। ধর্মচর্চার জন্য প্রতিষ্ঠানের পাশেই রয়েছে উলিপুর শাহী মসজিদ ও জগধাত্রী মন্দির। ধর্মীয় উৎসবগুলো এখানে পারস্পারিক সম্প্রীতির মাধ্যমে পালন করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২হাজার ২ শত শিক্ষার্থীর পাঠদান নির্বিঘ্নে করতে প্রায় ৬৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী কমরত আছেন। সরকার বিভিন্ন সময়ে যখনই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের উদ্যোগ গ্রহন করে তখনই প্রাচীনতম এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নানা কারণে জাতীয়করণের বাইরেই থেকে যায়। অধ্যক্ষ আব্দুল কাদেরসহ ছাত্র-ছাত্রী এবং এলাকার বিশিষ্ট জনরা প্রাচীন এ প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণের জন্য জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com