কবি গীতিকার ইসলামী চিন্তাবিদ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী লেখক ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত শনিবার (১০ মে) দিবাগত রাত ১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম নগরের নায়েবে আমির ছিলেন।
গতকাল রোববার সকাল ১১টায় চট্টগ্রামের প্যারেড ময়দানে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ’র দ্বিতীয় ছেলে মুয়াজ আবরার। পরবর্তী জানাজা ভোলার চরফ্যাশনের নিজ গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
জানা গেছে, ড. ওবায়েদুল্লাহর জন্ম ভোলার চরফ্যাশনে। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়াও কমনওয়েলথ এক্সিকিউটিভ এমবিএ ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি। সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। পাশাপাশি বয়েজ স্কাউট ও রেড ক্রিসেন্টসহ নানা সংগঠনে যুক্ত থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে পরিচিত, আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ পেশাগত জীবনে সাহিত্য-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি মাসিক অঙ্গীকার ডাইজেস্টের সম্পাদক এবং হুইল বিজনেস ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার রচিত জনপ্রিয় দুটি বই হলো- “তরুণ তোমার জন্য” ও “স্বপ্নের ঠিকানা”।
ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়-চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাকালীন রেজিস্ট্রার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সবশেষ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মরহুম ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ’র প্রথম নামাজে জানাজার আগে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমির সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক আহছানউল্লা ভূইঁয়া, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আমির আলাউদ্দিন শিকদার, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ বদরুল হক, বাইতুশ শরফ কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ ড. মাওলানা সাইয়েদ আবু নোমান, ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ’র বড় ছেলে মোছান্না প্রমুখ।
এদিকে ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, প্রিয় ভাই ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে অনন্তকালের পথে যাত্রা শুরু করেছেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ইসলামী ধারার নেতৃত্ব ছিল তারই হাতে। আল্লাহ তায়ালা এই হাতের পরিবর্তে আমাদেরকে আরও উত্তম হাত দিয়ে সাহায্য করুন।
শোকবাণী: ড. আ জ ম ওবায়দুল্লাহ এর ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ১১ মে এক শোকবাণী প্রদান করেছেন।
শোকবাণীতে তিনি বলেন, ড. আ জ ম ওবায়দুল্লাহ একজন উঁচুমানের সংগঠক ছিলেন। তিনি অনেক শিশু-কিশোর সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। শিশু-কিশোরদের মেধা বিকাশে এবং ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অনেক অবদান রয়েছে। তিনি অত্যন্ত ন¤্র, ভদ্র ও স্পষ্টভাষী ছিলেন। তিনি মুহূর্তেই যে কাউকে আপন করে নিতে পারতেন। তাঁর ইন্তিকালে আমরা ইসলামী আন্দোলনের একজন নিবেদিত প্রাণ দাঈকে হারালাম। তিনি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছেন এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রচার ও প্রসারে তাঁর অনেক অবদান রয়েছে। আমি তাঁর ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি।
শোকবাণীতে তিনি আরও বলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁকে ক্ষমা ও রহম করুন এবং তাঁর কবরকে প্রশস্ত করুন। তাঁর গুনাহখাতাগুলোকে ক্ষমা করে দিয়ে নেকিতে পরিণত করুন। কবর থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রত্যেকটি মঞ্জিলকে তাঁর জন্য সহজ, আরামদায়ক ও কল্যাণময় করে দিন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন এবং তাঁর শোকাহত পরিবার-পরিজনদেরকে এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন।