রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জহুরি মহল্লার পোড়া বস্তিতে আগুন লেগেছে। মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে কৃষি মার্কেটের পেছনের দিকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। স্থানীয়ভাবে বস্তিটি ৪০ এর বস্তি হিসেবে পরিচিত। বস্তিটিতে শতাধিক ঘর রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা আনিসুর রহমান আগুনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বিকেল চারটা ১৫ মিনিটে তারা আগুনের বিষয়টি জানতে পেরেছেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে এরইমধ্যে ঘটনাস্থলে ১০টি ইউনিট পাঠানো হয়েছে। এর আগে সোমবার মধ্যরাতে রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তিতে ভয়াবহ আগুনে শতাধিক ঘর ও দোকান পুড়ে যায়। এক ঘণ্টার বেশি সময়ের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত কর্মকর্তা বাবুল মিয়া জানান, গুলশান নিকেতনের পশ্চিম পাশের ওই এলাকাতে সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে। রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
মহাখালীর সাততলা বস্তির আগুন: চারদিকে শুধু পোড়া ভস্ম, বস্তির ঘরগুলো টিনের চালা পড়ে আছে যত্রতত্র। পুড়ে ছাই-কয়লা হয়েছে ঘরগুলোতে জিনিসপত্র। তার ভেতরেই হাতড়ে খুঁজছে যদি কিছু রেখে যায় সর্বনাশা আগুন। গত সোমবার (২৩ নভেম্বর) মহাখালীর সাততলা বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরের চিত্রটা ছিল এমন। সর্বস্বান্ত মানুষজন আহাজারিতে যেখানে চাপা পড়ে যায় পোড়া গন্ধ। রাজধানীর একেকটা অগ্নিকা- যেন একেকটা স্বপ্ন পোড়ার গল্প। আর সে গল্পে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয় দিন এনে দিন খাওয়া মানুষজন। ফায়ার সার্ভিস কিংবা রেড ক্রিসেন্ট কর্মীদের কাজ যেখানে শেষ, সেখান থেকে শুরু অসহায় মানুষজনের অবলম্বনের ছিটেফোটা খুঁজে বেড়ানো। ক্লান্ত চোখগুলো ধ্বংসস্তূপে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মূল্যবান অলংকার কিংবা রুটিরুজির অবলম্বন ড্রাইভিং লাইসেন্সের খোঁজে। স্বেচ্ছাসেবকদের শত অনুরোধেও ধ্বংসস্তূপ থেকে সরানো যায়নি তাদের। গত সোমবার রাতের আগুনে মহাখালীর সাততলা বস্তির পুড়ে ৩০০ ঘর ও দোকান। অগ্নিকা- নিয়ন্ত্রণে আসার পর পোড়া ঘরে কয়লা হওয়া জিনিসপত্রের মধ্যে নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্সটি খুঁজছিলেন বস্তির এক সিএনজি চালক বাসিন্দা। আগুন তার সবকিছু পুড়ে পথে বসিয়ে দিয়েছে। তারপরও জীবিকার অবলম্বনটা খুঁজছেন পোড়া, আধাপোড়া জিনিসপত্রের মধ্যে।
সন্তানকে কোলে নিয়ে বস্তির এক পোড়া স্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন এমন নারী। একদিন আগেও ওই স্তূপটিতেই ছিল তার সাজানো স্বপ্নে সংসার। বাসা-বাড়ি গৃহপরিচালিকার কাজ করে তিলে তিলে গড়েছিলেন সেই স্বপ্ন। আর তা নিমিষেই ছাই করে দিয়ে আগুন। আকস্মিক আগুনে কোনও রকম নিজের আর পরিবারের সদস্যদের জীবনটা বাঁচিয়ে ঘর থেকে বের হন, কোনো মালামাল বা মূল্যবান সম্পদ সঙ্গে নিয়ে বের হওয়া দূরের কথা পায়ের স্যান্ডেল জোড়াও নিয়ে বের হতে পারেননি তিনি কাঁদতে কাঁদতে সময় সংবাদকে এমনটাই বলছিলেন। খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া খেটে খাওয়া এই মানুষগুলো সঞ্চয়-সম্বল বলতে যা কিছু সবই ছিল ওই ঘরগুলো। কীভাবে জীবন চলবে সেই প্রশ্নই এখন তাদের মুখে।
চোখের সামনে তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়েছে দিনমজুর শ্রেণির মানুষজনের। ধ্বংসস্তূপের নিচে পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র যেন জানান দিচ্ছিল আবারও শুরু করতে হবে শূন্য থেকে। এভাবে আগুনে নিঃস্ব হওয়া পরিবারগুলো নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যথাযথ পুর্নবাসন চান সরকারের কাছে। অগ্নিকাণ্ডের খবরে সেখানে ছুটে আসা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরাও নিঃস্ব হওয়া মানুষ আহাজারিতে ফেলেছেন চোখের পানি। কথা হলে তা সময় সংবাদকে বলেন, যখনই আগুনের ঘটনা শুনেছি, আমরা আর ঘরে থাকতে পারিনি। আগুন নেভাতে ছুটে এসেছি। সবার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও মানসিকভাবে শান্তি পাই না আমরা। নিঃস্ব হওয়া মানুষজনের কান্না সহ্য করতে পারি না।
রাজধানীতে ঘটা প্রতিটা অগ্নিকাণ্ডের চিত্রই এমন জানালেন অগ্নিনির্বাপণে কাজ করা এসব স্বেচ্ছাসেবকরা। এমন প্রতিটা ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করলেও প্রকৃত কারণ কখনোই জানা যায় না। তবে নিঃস্ব হওয়া পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করছেন তারা।