রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ০২:০১ পূর্বাহ্ন

অসুখ নয়, শ্বেতী সেলিব্রেট করছেন অনেকে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫

ত্বকের একটি বিশেষ অবস্থা হচ্ছে শ্বেতী বা ভিটিলিগো, যেটাকে এতকাল রোগ হিসেবেই গণ্য করা হতো। নিজের শ্বেতী নিয়ে কুণ্ঠিত থাকেন অনেকেই। তবে এখন সেই প্রবণতা অনেক কমেছে। বরং শ্বেতীকে সেলিব্রেট করছেন অনেকে। বিখ্যাত সব ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিউটি ইন্ডাস্ট্রি এই শ্বেতী নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে কাজ করছে।
প্রতি বছর ২৫ জুন বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ভিটিলিগো দিবস। এই বিশেষ দিনটির মূল উদ্দেশ্য হলো ত্বকের অটো-ইমিউন ভিটিলিগো বা শ্বেতী সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা, সামাজিক বৈষম্য দূর করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি জাগানো। তবে বর্তমান বিশ্বে এই দিনটি শুধু একটি রোগ নিয়ে সচেতনতা তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এখন বৈচিত্র্য, গ্রহণযোগ্যতা ও বডি ইমেজ পজিটিভিটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
ভিটিলিগো, বাংলায় যাকে আমরা ‘শ্বেতী’ বলি, এটি আসলে কোনো মারাত্মক রোগ নয়। এটি ত্বকের একটি বিশেষ অবস্থা, যেখানে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশের ত্বকে রং বা মেলানিন তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সেই জায়গাগুলো সাদা বা ফ্যাকাসে দেখায়।
এই অবস্থাটি ছোঁয়াচে নয়, কারো কাছ থেকে ছড়ায় না। ভিটিলিগোতে ব্যথা, চুলকানি বা শারীরিক কষ্ট হয় না। এটি কারো দোষে হয় না এবং এটি কাউকে অক্ষম করেও তোলে না।
অনেকেই ভুলভাবে একে ‘অসুখ’ মনে করেন। ফলে ভিটিলিগো আক্রান্ত মানুষ সমাজে বৈষম্যের শিকার হন। কিন্তু আসলে এটি শুধু ত্বকের রঙের পরিবর্তন – এক ধরনের জিনগত ও অটো-ইমিউন প্রক্রিয়া।
অনেক দেশে ও সমাজে এখনো ভিটিলিগো আক্রান্ত মানুষদের নিয়ে কুসংস্কার ও ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। এই বৈষম্য শুধু অন্যায় নয়, এটি একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক অবস্থানকে ধ্বংস করতে পারে। অন্য অনেক কিছুর মতো এই বৈচিত্র্যকে যদি আমরা শ্রদ্ধা করতে না শিখি, তাহলে সভ্যতার এগিয়ে যাওয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হবে।
এসব কুসংস্কার ও বৈষম্যকে নিরুৎসাহিত করতে ও বৈচিত্র্যকে সেলিব্রেট করতেই আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি শ্বেতীর বৈশিষ্ট্য থাকা মডেলদের সামনে আনতে শুরু করেছে।
গত দশকে বিশ্বজুড়ে একটি শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে ওঠে – ‘বডি ইমেজ পজিটিভিটি ক্যাম্পেইন’। এটি শারীরিক বৈচিত্র্যের প্রতি ইতিবাচকতা ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরির একটি আন্দোলন। এই আন্দোলন মানুষকে শেখাচ্ছে যে, সৌন্দর্যের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। শরীরের রং, গঠন, দাগ, ওজন বা ত্বকের অবস্থা, কিছুই কাউকে কম সুন্দর বা অযোগ্য করে তোলে না। এই প্রেক্ষাপটে ভিটিলিগো আক্রান্ত ব্যক্তিরা আজ বিশ্ব ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলছেন।
ভিটিলিগো নিয়ে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে পরিচিত ও সফল মডেল উইনি হারলো। কানাডার এই মডেল টপ মডেল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পর থেকেই আলোচনায় আসেন এবং এরপর তিনি ক্যারিয়ারের শিখরে পৌঁছে যান। তিনি ভোগ, হারপারস বাজার, এলে, এমনকি ভিক্টোরিয়াস সিক্রেট-এর মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ড ও ম্যাগাজিনের জন্য কাজ করেছেন।
উইনি হারলো শুধু একজন মডেল নন, তিনি বিশ্বের সামনে একটি বৈপ্লবিক বার্তা তুলে ধরেছেন। হীনমন্যতা কাটিয়ে সাহসীকতার সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘আমি আমার এই দাগ নিয়ে গর্বিত।’ তিনি প্রমাণ করেছেন, ত্বকের রঙের তারতম্য সৌন্দর্য কমিয়ে দেয় না, বরং সেটিই তাকে আলাদা করে তুলেছে।
উইনি হারলো-এর প্রথম ভোগ কভারটি প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালের জুন মাসে, ভোগ আরাবিয়া সংখ্যায়। প্রসঙ্গ ছিল ‘রিপ্রেজেন্টেশন ম্যাটার্স’! তাতে তুলে ধরা হয় মডেলের অনন্য অভিজ্ঞতা ও সৌন্দর্য। মলাটে উইনির পাশে ছিলেন আরবের মডেল শাদ সালমান, তিনিও ত্বকে বহন করছেন ভিটিলিগো। তাদের রূপ-বন্ধুত্ব এবং আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে ভোগ আরাবিয়া বলেছে, শ্বেতীবাহীদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর সময় হয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের সৌন্দর্যের ধারণাও প্রসারিত করা দরকার ।
উইনি তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছিলেন
সৌন্দর্য দর্শকের দৃষ্টিতে নিহিত, এবং কারো ‘সৌন্দর্যের সংজ্ঞা’র চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত আপনার নিজের সংজ্ঞা। ভিটিলিগো সংক্রামক বা প্রাণঘাতী নয়। একে বলা হচ্ছে জিনগত ও অটো-ইমিউন কন্ডিশন, যখন ত্বক কিছু অংশের রঙ হারিয়ে ফেলে। তবে তাতে ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি হয় না বা তার কারণে অন্য কারও কিছু হয় না। শরীরে শ্বেতীবহন করা কারও সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা অন্যায়। নতুন প্রজন্মের বার্তা হচ্ছে – রঙ নয়, মনুষ্যত্বেই সৌন্দর্য।
ভিটিলিগো দিবস এবং বডি পজিটিভিটি আন্দোলন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সৌন্দর্য মানে নিখুঁত হওয়া নয়, বরং নিজেকে নিয়ে গর্বিত থাকা। আজকের দিনে শিশুদের শেখানো দরকার, তারা যেমন, তেমনই সুন্দর। আমরা যদি সবাই নিজেদের মধ্যে থাকা বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করি, তাহলে পৃথিবী হবে আরও সহনশীল ও মানবিক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com