জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হুসাইনের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (২০ অক্টোবর) বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ চত্বরে এ জানাজা নামাজের আয়োজন করা হয়।
জানাজায় জুবায়েদের বাবা মো. মোবারক হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন নাসিরসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সহপাঠীরা অংশ নেন।
জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন নাসির বলেন, “গতকাল নৃশংসভাবে জুবায়েদকে হত্যা করা হয়েছে। গত ১ মাসে ঢাকায় ছাত্রদলের চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এসব হত্যাকা-কে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে, তাই রাজনৈতিক রূপ দিতে চাই না। তবে আমরা দাবি জানাই—দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।”
জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, “আমার শিক্ষার্থী জুবায়েদ আজ আমাদের সামনে শুয়ে আছে—এটা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। সমাবর্তনে তার মাথায় ক্যাপ পরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আজ তাকে জানাজায় দেখছি। তার বাবা-মা তাকে পড়াশোনার জন্য পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু লাশ হিসেবে ফিরে পেলেন। আমরা দ্রুত বিচার দৃশ্যমান দেখতে চাই।”
জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, “জুবায়েদ খুবই ভালো ছেলে ছিল। সে মাঝে মাঝে আমার কাছে আসত, খুব বিনয়ী আচরণ করত। এমন একটি ছেলের শত্রু থাকতে পারে—এটা আমাদের কল্পনার বাইরে। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন।”
জুবায়েদের বাবা মো. মোবারক হোসেন বলেন, “আমি চেয়েছিলাম আমার ছেলে লেখাপড়া করে বড় মানুষ হবে। আজ সে লাশ হয়ে আছে। আমি সবার কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। যারা গতকাল আমার ছেলের জন্য সংগ্রাম করেছেন, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
জানাজা শেষে জুবায়েদের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।
নারীঘটিত কারণে জবি ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসাইন নারীঘটিত কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।
সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বংশাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, জোবায়েদ হত্যার সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। শিগগির তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। প্রাথমিকভাবে আমরা এতটুকুই জানতে পেরেছি যে, নারীঘটিত কারণে এ হত্যাকা- ঘটেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বার্জিস শাবনাম বর্ষা নামের এক তরুণীকে আটক করা হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যদেরকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বর্ষা পুলিশকে জানিয়েছেন যে, তার সাবেক প্রেমিক মাহির রহমান হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত। বর্ষাকে প্রাইভেট পড়াতেন জোবায়েদ।
এদিকে, নিহত জোবায়েদের বড় ভাই বাদী হয়ে বংশাল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মাহির রহমান ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। সিসিটিভি ফুটেজে দুজন যুবককে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে।
অন্যদিকে, জোবায়েদ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা। তা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে তার বাসার সিঁড়িতে ছুরিকাঘাতে খুন হন জোবায়েদ।