শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১১:২২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বিশ্বমানের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে : রাষ্ট্রপতি রাসূল (সা.)-এর সীরাত থেকে শিক্ষা নিয়ে দৃঢ় শপথবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে—ড. রেজাউল করিম চৌদ্দগ্রামে বাস খাদে পড়ে নিহত ৫, আহত ১৫ চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি আছে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী রাজনীতিবিদেরা অর্থনীতিবিদদের হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে চান: ফরাসউদ্দিন নতজানু বলেই জনগণের স্বার্থে যে স্ট্যান্ড নেয়া দরকার সেটিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক হামাসের অভিযানে ১২ ইসরাইলি সেনা নিহত আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় গাজানীতির প্রতিবাদে বাইডেন প্রশাসনের ইহুদি কর্মকর্তার লিলির পদত্যাগ

পাবনার বেড়ায় অবৈধ ক্লিনিকে প্রসুতির মৃত্যু

মোবারক বিশ্বাস, পাবনা :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০

নিজের কর্মস্থল বেড়া সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার না করে মানবিক কারনে একটি অবৈধ ক্লিনিকে সিজার করেছে ডাঃ শারমিন সুলতানা। পাবনার বেড়া উপজেলার দি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড ক্লিনিকে সিজার করতে গিয়ে সাথি খাতুন (২২) নামে এক রুগীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত সাথি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার চৌহানী গ্রামের জহুরুল ইসলামের স্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। রোগীর স্বামী জহুরুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রী সন্তান সম্ভাবা হওয়ায় বেড়ার দি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড ক্লিনিকে ভর্তি করি।

ক্লিনিকের মালিক মিসাইল বলেন, আপনার স্ত্রীর দ্রুত সিজার করতে হবে। তা না হলে মা ও সন্তানকে বাঁচানো যাবে না। আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানের কথা ভেবে সিজার করাতে রাজি হয়। সিজার করার পর আমার স্ত্রী’র অবস্থা খারাপ হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সরকারী বা এনায়েতপুর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। পরে এনায়েতপুর নেওয়ার পর মারা যায়।

এ দিকে ডাঃ শারমীন সুলতানা বলেন, সিজার করার পর রক্তের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। রোগীর স্বজনরা রক্ত ম্যানেজ করতে না পারায় আমরা এনায়েতপুর হাসপাতালে নেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করি।

আপনি সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক হয়ে কেন অনুমোদনহীন ক্লিনিকে সিজার করলেন, জানতে চাইলে ডাঃ শারমিন সুলতানা বলেন, মানবিক কারনে আমি সিজার করেছি। সিজার না করলে মা এবং সন্তান দু’জনই মারা যেত।

মানবিক কারনে সিজারটি তো আপনি আপনার সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করতে পারতেন। তা না করে অনুমোদনহীন ক্লিনিকে করলেন কেন। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পাবনা সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ আনান সাহেবের এটা ক্লিনিক। তার অনুরোধে আমি সিজার করেছি।

এদিকে এনেসথেসিয়ার ডাক্তার খ.ম ইসমাইল হোসেন শাওন বলেন ম্যাডাম আমাকে অনুরোধ করায় আমি সেখানে গিয়ে এনেসথেসিয়া করেছি। এনেসথেসিয়ার উপর আপনার কোন ডিগ্রি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৭দিনের একটি কোর্স করা আছে।

এদিকে পাবনার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মেহেদী ইকবাল জানালেন, অনুমতি না নিয়ে কেউ কোন ক্লিনিক বা হাসপাতাল পরিচালনা করতে পারবে না। অপরদিকে বেড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সরদার মোহাম্মদ মিলন মাহমুদ জানান, দি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড ক্লিনিকের কোন অনুমোদন নেই। তবে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন রয়েছে।

অনুমোদনহীন ক্লিনিক কিভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে রুগী ভর্তি বা অপারশেন করা হয়, তা আমি জানতাম না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পরে তিনি এ প্রতিবেদককে ফোন করে বলেন, ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমি বেড়া ইউএনও সাহেবকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তিনি আমার অনুরোধে সাড়া দেননি। প্রশাসন ছাড়া আমি কিভাবে ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।

এদিকে ডাঃ আনানের কাছে জানতে চাওয়া হয় ওই ক্লিনিকটির মালিক কি তিনি? তিনি বলেন ক্লিনিকের শেয়ার আছে আমার এবং আমি সেখানে প্র্যাকটিস করি। তিনি এও জানান, আবেদনের অনুমতি চেয়ে ক্লিনিক পরিচালনা করা যাবে। তিনি আরো জানান, ঢাকায় যারা ক্লিনিকের অনুমোদন দেন তারা তার নিজস্ব লোক। অত্রএব এ বিষয়ে কোন সমস্যা হবে না। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সরদার মোহাম্মদ মিলন মাহমুদের কথার সত্যতা জানতে বেড়া উপজেলার ইউএনও মোঃ আসিফ আনামের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

বর্তমান করোনার পরিস্থিতিতে ক্লিনিকের বিরুদ্ধে নিউজ না করতে বেড়া উপজেলা বে-সরকারী হাসপাতাল এবং ক্লিনিক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক ও আরাবী জেনারেল হাসপাতালের মালিক মো: কামরুল হাসান লিটন এই প্রতিবেদককে মোবাইলে নিউজ না করে চা চক্রের দাওয়াত দেন। তবে একটি বিশ্বস্থ্য সুত্র বলছে, থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে ক্লিনিকের মালিক মিসাইল নিহতের স্বামী জহুরুলের সাথে টাকার বিনিময়ে আপোষ করে নিয়েছে। এ জন্য নিহতের পক্ষ থেকে কেউ মামলা করবে না বলে প্রচার করছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

আরো জানা যায়, ক্লিনিকটি গত দেড় বছর যাবত অবৈধভাবে রোগী ভর্তি ও অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসলেও অজ্ঞাত কারনে এর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করেনি কর্তৃপক্ষ। সবশেষ শুক্রবার সন্ধা খবর লেখা পর্যন্ত শিশুটি জীবিত রয়েছে।

এমআইপি/প্রিন্স/খবরপত্র




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com