শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩১ অপরাহ্ন

করোনার প্রার্দুভাবের শুরু থেকেই সরকার উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে : বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২১

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন,বিশ^ব্যাপি করোনার প্রার্দুভাবের শুরু থেকেই বাংলাদেশের সরকার চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। করোনা পরীক্ষা, শনাক্ত করণ, মৃতের সংখ্যা এসব বিষয়ে জনমনে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন রয়েছে, সঠিক তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। যথাযথ শনাক্তকরণ ও পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের এক ধরণের উদাসীনতা প্রথম থেকেই লক্ষনীয়। সেই ধারাবাহিকতায়ই একটি স্বার্থন্বেষী মহলকে বর্তমান সরকার ভ্যাকসিন ক্রয় এবং বিতরণে দায়িত্ব দিয়ে জনগণের শত শত কোটি টাকা লোপাট করার সুযোগ দিচ্ছে। বিনাভোটের সরকার ক্ষমতায় থাকায় জণগণের প্রতি তাদের ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। সরকারের অদুরদর্শিতা ও লুটপাটনীতির কারণেই ভ্যাকসিন নিয়ে আজ অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে। যে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে তার জন্য সরকারকে অনতিবিলম্বে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, মূল্য ও সংরক্ষণ এবং বিতরণ ব্যবস্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য জনগণের সামনে উপস্থাপনের জোর দাবী জানাচ্ছি।

গত ৬ জানুয়ারি গুলশানের বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি কতৃক গঠিত “কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংক্রান্ত” কমিটির আহবায়কের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এই করোনা মহামারির মধ্যেও কষ্ট করে আজকের প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য সাংবাদিকদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন তিনি বলেন, আপনারা জানেন, বিশ^ব্যাপি করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন কিংবা মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি শুরুতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। যারা অসুস্থ তাদের সুস্থতা কামনা করছি। একই সঙ্গে করোনা প্রতিরোধে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, বিশ^ব্যাপি করোনার প্রার্দুভাবের শুরু থেকেই বাংলাদেশের সরকার চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার কোন ব্যবস্থাতো নেয়নি বরং করোনা আক্রান্ত রোগীদের শনাক্ত করতে, চিকিৎসা দিতে সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে। মাস্ক কেলেংকারি, পিপিই কেলেঙ্কারি, হাসপাতাল কেলেঙ্কারি, শনাক্তকরণ পরীক্ষা নিয়ে কেলেঙ্কারি, করোনা শনাক্তকরণ জালিয়াতিসহ অসংখ্য জালিয়াতি ও দুর্নীতির উপহার দিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও স্বার্থান্বেষী মহল। ভূয়া করোনা রিপোর্ট তৈরি করে সরবরাহ করার জন্য বর্হিবিশে^ বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। করোনার রিপোর্ট নিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন,, বর্তমান বিনাভোটের সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্তখাত হচ্ছে স্বাস্থ্যখাত। তাদের দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্যখাত প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। তার ওপর দেশে করোনা মহামারির সময়ে তাদের দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে গেছে আরও ব্যাপকহারে। এখন করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে জণগণের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করছে সরকার। সরকার করোনা ভ্যাকসিন পেতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন না কারায় জণগণের দৌড়গড়ায় ভ্যাকসিন পৌঁছানো এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, করোনা আক্রান্ত ঝুঁিকতে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও এখন পর্যন্ত করোনার ভ্যাকসিন পেতে বাংলাদেশ সরকার ন্যুনতম ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বিশে^র অনেক দেশে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়ে গেছে বা পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া শুরু করেছেন তারা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েক প্রকার ভ্যাকসিন যেমন,অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিন, বায়োটেক/ ফাইজারের ভ্যাকসিন, মর্ডানার ভ্যাকসিন, স্পোটনিক-৫ ভ্যাকসিন, সিনোফার্মা বিবিআইবিপি ভ্যাকসিন ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। অথচ বাংলাদেশে ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে দোলাচল তৈরি হয়েছে। গত রবিবার রাতে খবর প্রকাশ হয় সিরাম ইন্সটিটিউট তাদের তৈরি টিকা এখন ভারতের বাইরে রফতানি করতে পারবে না। সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদার পুনাওয়ালার বরাত দিয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা জানায় তারা এই মুহূর্তে টিকা রফতানি করতে পারছে না। এই কারণে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই ভ্যাকসিন পেতে চুক্তিবদ্ধ বলে জানিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জি-টু-জি চুক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আবার বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সরকারের সঙ্গে নয় চুক্তি হয়েছে বেক্সিমকোর সাথে যা বাণিজ্যিক চুক্তি। বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে পরিস্কার করে বলা হয়েছে জি টু জি চুক্তি হয়নি। সুতরাং করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারে মন্ত্রীদের বক্তব্য জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। যদিও গতকাল তরিগড়ি করে করোনা ভাইরাসের টিকা কেনার জন্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেখানে রাখা হয়েছে বিশাল দুর্নীতির খাত।
এছাড়াও ভ্যাকসিন ক্রয় করতে গিয়ে সরাসরি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না করে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে (বেক্সিমকো) চুক্তি করায় আর্থিক ভাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মাধ্যমে ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম প্রায় দ্বিগুণ পড়বে। যদি কয়েক কোটি ভ্যাকসিন আমদানিও হয় তা সাধারণ মানুষ আদৌ সে ভ্যাকসিন পাবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। করোনা ভ্যাকসিন বিতরণের জন্যও সরকারের প্রস্তাবিত জেলা, উপজেলা কমিটির মাধ্যমে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হলে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের কাছে এই ভ্যাকসিন যথাযথভাবে পৌছবে না।
তিনি তার বক্তব্যে সাত বিষেয়ে সাংবাদিকদের মধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন: ১।ভ্যাকসিন বিনা মূল্যে পাওয়া জনগণের অধিকার এবং এই অধিকার থেকে জনগণ যাতে বঞ্ছিত না হয় সে জন্য বিএনপি প্রথম থেকেই বিনা মূল্যে এই ভ্যাকসিন সরবরাহ করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। এই ভ্যাকসিন যাতে জনগণ সঠিকভাবে পায় সেটা অবশ্যই সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। ২। বর্তমান সরকার প্রথম থেকেই ভ্যাকসিন ক্রয় করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। যদি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সমূহকে পূর্বেই যথাযথভাবে অগ্রিম টাকা অথবা ট্রায়াল দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হতো তা হলে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে স্বল্পমূল্যে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে পারতো। ৩। ভ্যাকসিনক্রয় করতে গিয়ে সরাসরি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না করে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে (বেক্সিমকো) চুক্তি করায় আর্থিকভাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অন্যদিকে যদি সরাসরি সরকার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে ভ্যাকসিন ক্রয় করতো তা হলে প্রায় অর্ধেক মূল্যে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পেত। এর মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। শুধুমাত্র একটি গোষ্ঠিকে আর্থিক ভাবে লাভবান করতেই এই ধরনের চুক্তি করা হয়েছে। ৪। ভ্যাকসিন বিতরণের ক্ষেত্রে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রণিত গাইড লাইন সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। কোন অবস্থাতেই যাদের ভ্যাকসিন পাওয়ার অগ্রাধিকার রয়েছে তাদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্ছিত করা যাবে না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার মাধ্যমে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ব্যক্তিদের পরিবর্তে অন্যদেরকে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে। দেশের ৬০ বছরের অধিক বয়সি জনগোষ্ঠি, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত জনগোষ্ঠি / প্রাধিকার প্রাপ্ত জনগোষ্ঠি / সম্মুখ সারির করোনা যোদ্ধারা বঞ্ছিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ৫। বেসরকারি খাতে উচ্চ মূল্যে চিহ্নিত কতিপয় মহলের নিকট প্রায় ৩ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন বিক্রি সরাসরি জনগণের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। শুধু মাত্র অর্থনৈতিক কারনে সাধারণ মানুষের প্রতি বৈষম্য মূলক আচরণ কোনভাবে গ্রহনযোগ্য নয়। ভ্যাকসিন নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে সরকার একটি ঐ স্বার্থন্বেষী মহলকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কারক এই ভ্যাকসিন থেকে কোন ধরনের রয়েলিটি অথবা লভ্যাংশ নিচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশে এটি নিয়ে ব্যবসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ৬। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন সংগ্রহে শুধু মাত্র একটি দেশ / স্বার্থন্বেষী মহলকে খুশি রাখার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদিও অনেক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশ অনেক পূর্বেই ভ্যাকসিন ট্রায়াল ও পরবর্তীতে স্বল্পমূল্যে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সেটি গ্রহণ করা হয়নি। যদি একাধিক প্রস্তাব গ্রহন করা হতো তাহলে ভ্যাকসিন নিয়ে কোন অনিশ্চয়তা তৈরি হতো না। ৭। ২০২০ সাল স্বাস্থ্যখাতে যে ধরনের দূর্নীতির চিত্র প্রকাশিত হয়েছে এটি শুধু মাত্র ঃরঢ় ড়ভ ঃযব রপবনবৎম। এই সরকারের কোভিড-১৯ এর সরঞ্জাম ক্রয়ে যে ধরনের দূর্নীতি হয়েছে যার জন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অধিদপ্তরের ডিজি এবং পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা পদত্যাগসহ লোক দেখানো বদলি হয়েছেন কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী বহাল তবিয়তেই আছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com