শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২০ অপরাহ্ন

জাতীয়করণই শিক্ষকদের একমাত্র দাবি

প্রদীপ কুমার দেবনাথ
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২১

দক্ষ, সৎ, আদর্শ, উন্নত, আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল বজায় রেখে জনশক্তি তৈরি করতে শিক্ষক দরকার। আর জাতীয়করণের অভাবে মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা করতে চাচ্ছেন না। কারণ, স্বল্প বেতন, অভাব-অনটন এসব যুব সমাজ কখনও গ্রহণ করবেনা। তাদের চিন্তা চেতনা অনেক উপরে। আমাদের মত আদর্শ পেশা ভেবে শিক্ষকতা করার মানসিকতা তাদের নেই। বর্তমান শিক্ষকতায় যে বেতন, তাতেতো নুন আনতে পানতা ফুুরায়। কেন আসবে তরুণ, উচ্চ শিক্ষিত ভাল বংশের সন্তানরা? সারাজীবন না খেয়ে থাকার জন্য? পরিবারে সবচেয়ে আর্থিক দুর্বল ব্যক্তি হয়ে অসহায়ের মতো থাকার জন্য? সন্তানদের চাহিদার সিকি ভাগও না পূরণের জন্য? সাধারণ মানুষের লাঞ্ছনা বঞ্চনার সইবার জন্য? অযোগ্য, মূর্খদের পন্ডিতি দেখার জন্য? ম্যানেজিং কমিটি নামক বিষফোঁড়াদের উৎপাত সহ্য করার জন্য? ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত অযোগ্যদের দৌরাত্ম্যে আজ প্রকৃত মেধাবী শিক্ষকরা নিশ্চুপ, নির্বাক। তারা ইচ্ছে করেই মেধাবীদের দমিয়ে কম মেধাবী বিবেক ও মনুষ্যত্ব বর্জিত ক্রিমিনাল টাইপের শিক্ষক নামধারী মুখোশপরা কতগুলো তথাকথিত প-িতদের প্রাধান্য তৈরি করে প্রায় প্রতিষ্ঠানেই একটা দ্বন্দ্ব তৈরি করে কঠিন বিভাজন তৈরি করে রাখা হয়েছে। সেখানে রাজনৈতিক, মানসিক, ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বৈষম্য তৈরি করে শিক্ষকদের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি করে রাখা হয়েছে যা একসময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এসব ছায়া, দ্বন্দ্ব আর বিভাজন নিরসনের একমাত্র উপায় জাতীয়করণ। রাজনৈতিক, দলীয় ও ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত প্রতিষ্ঠান চাইলে এবং শিক্ষালয়কে শিক্ষা কার্যক্রমের কেন্দ্র বানাতে জাতীয়করণ ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। বর্তমান যে বেতন আর যে ছন্নছাড়া পরিস্থিতি তাতে কি প্রকৃত মেধাবীরা এ পেশায় আসবে? না, আসবেনা মেধাবীরা। আসবে কারা? অসহায়রা। যারা লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি করতে পারবেনা। আর একজন অসহায় ব্যক্তি মনপুত চাকরি না হলে যা আছে তা চালিয়ে যাবে, তবে কোনরকমে। এহেন অবস্থায় জাতি বঞ্চিত হবে তাদের সন্তানদের পরিপূর্ণ শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পেতে, দেশ বঞ্চিত হবে যোগ্য নাগরিক পাওয়া থেকে, সমাজ বঞ্চিত হবে মেধা-মননে, আদর্শ,– নৈপূন্যে, সৃজনশীল মানুষ পাওয়া থেকে। ফলে মেধা-মননহীন অসার জাতি নিয়ে বর্তমান জ্ঞান -বিজ্ঞানে উন্নত বিশ্বে অদক্ষ মনুষ্য বোঝায় পরিণত হবে আমাদের এই বীর বাঙ্গালীরা। অথচ বাস্তবমুখী শিক্ষা, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আদর্শ শিক্ষায় ভরপুর পরিপূর্ণ মানবশক্তি তৈরি করা যায় একটু সদিচ্ছা থাকলেই। শিক্ষার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে মাধ্যমিক শিক্ষাটি ভালভাবে সম্পন্নের মধ্য দিয়েই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পরিপূর্ণ শিক্ষা-কার্যক্রম সমাপ্তির মধ্য দিয়ে একজন মানুষ পেশাজীবী হয়। শিক্ষার এই স্তরটিকে আমলা, কথিত বুদ্ধিজীবীরা অত্যন্ত সতর্কভাবে আলাদা, গুরুত্বহীন করে রেখেছে কোন এক অজানা স্বার্থে। এরা জাতিকে মেরুদন্ডহীন করে রাখতে চায়। তাই, জাতিকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে, মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে, সুস্থ-সুন্দর-আদর্শ সমাজ তথা রাষ্ট্র বিনির্মানে মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ এখন অত্যধিক প্রয়োজন। আদর্শ ভবিষ্যৎ ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে দরকার প্রকৃত শিক্ষা। আর প্রকৃত শিক্ষা বাস্তবায়নে জাতীয়করণের বিকল্প নেই।বছরের পর বছর অযথা প্রশিক্ষণের নামে হাজার কোটি টাকা খরচ, প্রয়োজনহীন ভবন তৈরি, অবাস্তব পরিকল্পনায় হাজার কোটি টাকা ব্যয় না করে শিক্ষার মূলখাতে এই টাকাগুলো ব্যয় করুলে আজ শিক্ষকরা করুণ এ অবস্থা থেকে মুক্তিলাভ করতো। যে পরিমাণ টাকা এসব কাজে ব্যয় করা হচ্ছে তার অর্ধেক ব্যয় করেও জাতীয়করণ করা সম্ভব। অথচ কোন এক অজানা কারণে শিক্ষকদের প্রাণের এ দাবিটিকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। এভাবে উপেক্ষা করতে থাকলে মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন তো দূরের কথা, ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা অধিক। দেখবেন জাতীয়করণ হাতের ময়লা মাত্র। তাছাড়া প্রতিটি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার নিজস্ব ফান্ড আছে ঐ ফান্ডের টাকাগুলো সরকারি খাতে নিন, দেখবেন জাতীয়করণে সরকারের একটি পয়সাও লাগবেনা। এই মহুর্তে শিক্ষার যে দূরাবস্থা তা দূরীকরণের জন্য প্রকৃত শিক্ষক ও আদর্শ শিক্ষা চাই। প্রকৃত শিক্ষার জন্য সবচেয়ে মেধাবী জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। জাতীয়করণ ছাড়া এত স্বল্প বেতনে চাকরী করতে এ পেশায় কোন মেধাবীরা আসবেনা। আর এটা স্পষ্ট যে জাতীয়করণ ছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করার অন্য কোন বিকল্প নেই। আইন করে শিক্ষকদের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, কিন্তু তাদের মন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখেন কি ? তাই, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আপনি মন্ত্রীসভায় আসার পর শিক্ষকরা আশায় বুক বেঁধে আছে যে, জাতীয়করণের ঘোষণাটি হয়ত মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষাক্ষেত্রে প্রথম বৈপ্লবিক কাজ হতে যাচ্ছে। তারা আশা করছে আপনার মতো উচ্চশিক্ষিত, বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন মন্ত্রীই শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে এ কাজটি করবে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আপনি হয়তবা ভুল মানুষ দ্বারা পরিবেষ্টিত। নয়ত, ৪% কর্তণের সুফলের তুলনায় কুফলগুলো আপনার নজর এড়াতনা। একজন শিক্ষক অবসরের পরে কতটুকু কষ্ট করে তার কল্যাণট্রাস্ট ও অবসরভাতা উত্তোলন করেন তার কোন বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয়। হাজার দুর্ভোগের পরেও মৃত্যুর আগে টাকা উত্তোলন অনেকের ভাগ্যেই জুটেনা। নিঃস্ব, শূন্য হাতে তাঁর বিদায়ের পর পরিবারকে গ্লানি টানতে হয়। তাই ট্রাস্টের অদ্ভুত কর্মকান্ড রহিত করে পরিপূর্ণ পেনশন প্রথা চালু করার জন্য বিনীত প্রার্থনা জানাচ্ছি। আসলে, সকল সমস্যার সমাধান কেবল জাতীয়করণই দিতে পারে। তাই, জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষকদের দুশ্চিন্তা দূরকরুন ও শিক্ষকদের সুস্থ মস্তিষ্কে ১০০% শিক্ষকতার সুযোগ করে দিন। পারিবারিক, মানসিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভারমুক্ত শিক্ষক জাতিকে তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে যা অন্য কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান শতবর্ষ চেষ্টা করলেও পারবে না। শিক্ষকদের অর্থনৈতিক মুক্তি আদর্শ জাতি গঠনের একমাত্র নিয়ামক। আার এতে শিক্ষার্থীরা পাবে সঠিক শিক্ষা আর দেশ পাবে তাদের কাঙ্খিত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
লেখক, শিক্ষক, গণমাধ্যম কর্মী ও কলামিস্ট।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com