প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার মধ্যস্বত্তভোগীদের দৌরাত্ম্য হ্রাসকল্পে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বিভিন্ন ভাতার টাকা সরাসরি উপকারভোগীর মোবাইলে প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে ভাতাটা যাকে দিচ্ছি, সেটা যেন সরাসরি সেই মানুষটার হাতে পৌঁছায়। মাঝে যেন আর কেউ না থাকে। অর্থাৎ অর্থটা যাদের প্রয়োজন তারাই পাচ্ছেন এবং তাদের যেভাবে খুশী তারা ব্যবহার করতে পারবেন।’ এটা করার জন্য তাঁর সরকার দীর্ঘদিন থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, উল্লেখ করে তিনি এ ব্যবস্থা চালুর জন্য সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক নিরাপত্তাবলয় (এসএসএন)-এর বিভিন্ন ভাতা সরাসরি উপকারভোগীদের মোবাইল ফোনে প্রেরণের উদ্যোগের উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
এখন থেকে দু’টি শীর্ষ মোবাইল ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ ও ‘বিকাশ’ এর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বয়স্ক ভাতা, বিধাবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা সরাসরি উপকাভোগীদের মোবাইল ফোনে প্রেরণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় সমাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সব থেকে বেশি উপকারভোগী জেলাসমূহের মধ্যে চাঁদপুর, পিরোজপুর, লালমনিরহাট ও নেত্রকোণা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল।
পল্লী অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে জাতির পিতাই প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, তিনি পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম, প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত হাসপাতাল করা থেকে শুরু করে সমবায় ভিত্তিক চাষাবাষ চালু এবং উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা প্রত্যেকটি মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করে সারাদেশের জেলার সংখ্যা ২৯ থেকে বাড়িয়ে ৬০টি করেন। যেটি বর্তমানে ৬৪টি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা যখন বয়স্ক ভাতা চালু করেছিলাম তখন এভাবে চিন্তা করেছিলাম- কেউ কেবল ভাতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়–ক সেটা আমরা চাইনি। ভাতা পাবে কিন্তু যাদের কর্মক্ষমতা রয়েছে তারা কিছু কাজও করবেন। একেবারে ঘরে বসে থাকবেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে সে সময়ে অন্তত ১০ কেজি চাল ক্রয়ের সামর্থ অর্জনে ১শ’ টাকা করে ভাতার প্রচলন করা হয়। যা বর্তমানে ৫শ’ টাকা হয়েছে এবং ভাতাপ্রাপ্ত জনগণের সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্যটা হচ্ছে দেশের কোন মানুষ যেন নিজেকে অপাংক্তেয় মনে না করে এবং এর মাধ্যমে প্রত্যেকের প্রতি রাষ্ট্রের যে কর্তব্য রয়েছে সেটাই আমরা করতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যেদিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম শপথ নিয়েছিলাম সেদিনই বলেছিলাম দেশের সেবক হিসেবে কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রীত্ব আমার কাছে আর কিছু না কেবল কাজের সুযোগ কাজের ক্ষমতাটার প্রাপ্তি।’
তাঁকে বার বার ভোটে নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা পুণর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করবো, মানুষের সেবা করবো। আমার সরকার মানে মানুষের সেবক। সেই সেবক হিসেবেই কাজ করতে চাই।’ অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমদ বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.জয়নুল বারী স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
ইতোমধ্যে ভাতাভোগীদের ডাটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে। কর্মসূচির আওতায় মোট ৮৮ লাখ ৫০ হাজার বিভিন্ন ভাতাভোগী-শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৬৯ লাখ জনের তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যেই সকল ভাতাভোগীকে ইলেক্ট্রোনিক পদ্ধতিতে ভাতা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতার শুরুতে রবার্ট ফ্রষ্টের বিখ্যাত কবিতা ‘স্টপিং বাই উডস অন এ স্থায়ী ইভনিং’ এর- ‘দ্যা উডস আর লাভলি ডার্ক এন্ড ডিপ/ বাট আই হ্যাভ প্রমিজেস টু কিপ/ অ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ/’ কবিতাটির উদ্ধৃতি তুলে ধরেন ।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার ক্লান্ত হওয়া চলবে না, ঘুমালে চলবে না, মাইলের পর মাইল পারি দিয়ে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে- আর সেই লক্ষ্যটা হচ্ছে এ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
নিজের জীবনটাকে যিনি উৎসর্গ করেছিলেন এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোটা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ তারপরেও সে কাজই জাতির পিতা করতে চেয়েছিলেন জীবনের সবরকম সুখ-স্বাচ্ছন্দকে তিনি দেখেননি। বার বার আঘাত এসেছে, মৃত্যুকে কাছ থেকেও দেখেছেন কিন্তু লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। ফাঁসির আদেশ, গুলি, বোমা, কিছ্ইু তাঁকে টলাতে পারেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে এভাবে ভালবাসার শিক্ষাটা তিনি পিতার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। কারণ, তাঁদের পরিবার নয়, দেশের মানুষই জাতির পিতার কাছে সব থেকে বড় ছিল। যেজন্য মাত্র ৫৪ বছর বয়েসেই তিনি একবার করলেন পাকিস্তান সৃষ্টির আন্দোলন এবং এরপর লড়লেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য।
‘এই ঘুণে ধরা সমাজটাকে আমাদের পরিবর্তন করতে হবে’-জাতির পিতার ভাষণের এই উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশটাকে তিনি ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন। যা কেবল রাজধানী বা শহর কেন্দ্রিক ছিল না, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য তিনি পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন।’