শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:১৭ অপরাহ্ন

বিএনপির ও স্বতন্ত্র কয়েকজন প্রার্থীর ভোট বর্জন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২১

বিচ্ছিন্ন ঘটনায় শেষ হলো দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভার ভোটগ্রহণ

দেশের চারটি পৌরসভায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা কেন্দ্র দখল, ভোটারদের বাধা, এজেন্টদের বের করে দেওয়া, হামলাসহ নানা অভিযোগ করেছেন। এই চারটি পৌরসভা হলো বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভা, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভা, রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভা এবং পাবনার ইশ্বরদী পৌরসভা। অনিয়ম ও ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে তিনটি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী ভোট বর্জন করেছে। এছাড়া ভোট হচ্ছে এমন কয়েকটি কেন্দ্রে হাতাহাতি, মারামারি, গাড়ি ভাঙচুর এবং ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
দ্বিতীয় ধাপে গতকাল শনিবার দেশের ৬০টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে ভোট গ্রহণ, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। মেয়র পদে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা, পিরোজপুর সদর এবং নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভায় মেয়র পদে একক প্রার্থী হওয়ায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সাতজন সাধারণ কাউন্সিলরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। দেশের ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হয় ২৮ ডিসেম্বর। তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি এবং চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে বেলা ১১টার পরে মেয়র পদে নির্বাচন করা বিএনপির তিনজন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। তারা হলেন- রাজশাহীর ভবানীগঞ্জের বিএনপি প্রার্থী আবদুল রাজ্জাক, বাগেরহাটের মোংলা এবং কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। মারামারি হয়েছে ফেনীর দাগনভূঞা পৌরসভার একটি কেন্দ্রে। সেখানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন আহত হন। বাগেরহাটের মোংলায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় সংঘর্ষে দুজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে এক মেয়রপ্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
বাংলাদেশ জার্নালের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হলে অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ চলে। তবে বেলা ১১টার পর কোথাও কোথাও বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়া, কেন্দ্রে এজেন্টকে মারধর, বিএনপির চিন্থিত ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ আসতে থাকে।
রাজশাহী আড়ানী পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে গত দুদিন ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও আজ সেখানে শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ হচ্ছে। তবে ভোটের আগের রাতে সেখান থেকে ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই অবস্থা নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভায়ও। সেখানকার ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল কাদের ধারাবাহিক অভিযোগ করলেও আজকের ভোট নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় এই নেতা।
এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হয়। এর মধ্যে ১৯টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী এবং তিনটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়ী হন। বাকি দুটি পৌরসভায় জয় পেয়েছেন বিএনপির প্রার্থী।
দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করলেও নীলফামারীর সৈয়দপুরের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ এলাকার মেয়র পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী (নারিকেল গাছ প্রতীক) মো. আমজাদ হোসেন সরকারের মৃত্যুতে এ পৌরসভার ভোট স্থগিত করে ইসি।
৬০ পৌরসভাতে মেয়র প্রার্থী ২২১ জন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ৭৪৫ এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৩২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব পৌরসভায় মোট ভোটার ২২ লাখ ৪০ হাজার ২২৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১১ লাখ ৮ হাজার ৪৩১ জন এবং নারী ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৮০টি এবং ভোটকক্ষ ৬ হাজার ৫০৮টি।
ইভিএমে ভোট- দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সান্তাহার, নওগাঁর নজিপুর, রাজশাহীর কাঁকনহাট ও আড়ানী, নাটোরের নলডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, পাবনার ফরিদপুর, মেহেরপুরের গাংনী, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, বাগেরহাটের মোংলা, মাগুরা সদর, পিরোজপুর সদর, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, ঢাকার সাভার, নরসিংদীর মনোহরদী, নারায়ণগঞ্জের তারাবো, শরীয়তপুর সদর, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, কুমিল্লার চান্দিনা, ফেনীর দাগনভূঞা, নোয়াখালীর বসুরহাট, খাগড়াছড়ি সদর ও গাজীপুরের শ্রীপুর।
ব্যালট পেপারে ভোট- চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়ার মিরপুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, দিনাজপুর সদর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, গাইবান্ধা সদর, দিনাজপুরের বিরামপুর, পাবনার ভাঙ্গুড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, সুনামগঞ্জ সদর, হবিগঞ্জের মাধবপুর, নবীগঞ্জ, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, পাবনার ঈশ্বরদী, বগুড়ার শেরপুর, রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, উল্লাপাড়া, সুনামগঞ্জের ছাতক, নাটোরের গোপালপুর, গুরুদাসপুর, বান্দরবানের লামা, সিরাজগঞ্জ সদর, রায়গঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সদর, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা।
দ্বিতীয় ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চার মেয়র: মেয়র পদে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা, পিরোজপুর সদর এবং নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভায় মেয়র পদে একক প্রার্থী হওয়ায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সাতজন সাধারণ কাউন্সিলরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। দেশের ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হয় ২৮ ডিসেম্বর। তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি এবং চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় ধাপে ৬০ পৌরসভার ভোটগ্রহণ। গতকাল শনিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় এ ভোটগ্রহণ শেষ হয়। এর আগে সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ। ভোটগ্রহণের শুরুতে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটারের লাইন। তীব্র শীত উপেক্ষা করে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেন ভোটাররা। মোংলা পোর্ট পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ মোট ১২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী অনিয়ম ও ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। ভোট বর্জনকারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে জামায়াত সমর্থিত দুজনসহ মোট ৯ জন রয়েছেন। এছাড়া তিনজন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীও ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। ‘আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা তাকে ভোট দিতে দেয়নি’ এ অভিযোগ করে তিনি ভোট বর্জন করেন। মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভায় অনিয়মের অভিযোগ এনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা, বর্তমান মেয়র আশরাফুল ইসলাম নির্বাচন বর্জন করেন। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুমেল আহমদের নেতৃত্বে ভোটকেন্দ্র দখল করায় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুজন আহত হন।এছাড়া ঝাউদিয়া ভোটকেন্দ্র এলাকায় স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) মেয়র প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
দেশের সবচেয়ে আলোচিত নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা। এর আগে নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তেজনাপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া ফেনীর দাগনভূঞা পৌরসভা নির্বাচনে গনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরপর দুটি কককেট বিস্ফোরণ হয়। এ সময় কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা আরিফুল নামের এক আনসার সদস্য আহত হন। এদিকে পৌরসভাগুলোর মধ্যে ২৯টিতে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং ৩১টিতে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়। প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েন অনেক ভোটার। কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদানে ভোটারদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। প্রতিটি ভোটের জন্য গড়ে ৫ মিনিট থেকে ২০ মিনিট সময় ব্যয় হয়। মাঠ পর্যায়ে ইভিএম নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা না থাকায় ভোটগ্রহণে দায়িত্বরতদের অনেকটা ত্যক্ত-বিরক্তও হতে হয় এ সময়। দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্নের জন্য কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন ছিল। তাদের সহায়তার জন্য ছিলেন আনসার সদস্যরা। দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করলেও নীলফামারীর সৈয়দপুরের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। মেয়র পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী (নারিকেল গাছ প্রতীক) মো. আমজাদ হোসেন সরকারের মৃত্যুতে ওই পৌরসভার ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। দেশের ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয় ২৮ ডিসেম্বর। তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি এবং চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com