শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২০ অপরাহ্ন

কৃষি শুমারিতে অপচয় ১৩ কোটি টাকা হয়েছে 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২১

করোনায় ১০ মাস পিছিয়ে গেছে জনশুমারি

কৃষি শুমারি প্রকল্পে অপচয় হয়েছে ১৩ কোটি টাকা। যা সরকারকে ড্যামারেজ দিতে হয়েছে বলে জানান পরিসংখ্যান সচিব। আর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তাদের প্রকল্পে কেনা-কাটার ক্ষেত্রে সতর্ক ও সাবধান হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। ক্রয়টা যথাসময়ে করবো। আগেও না পরেও না। আগে কেনার কারণে অনেক পণ্য নষ্ট হয়। যা নির্বাচন কমিশনে কর্মরতকালে তিনি চাক্ষুস দেখেছেন বলে উল্লেখ করেন।
গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১’ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অডিটোরিয়ামে মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এই সাবধানতা উচ্চারণ করেন। এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ১৩ কোটি টাকা গচ্চার তথ্যটি প্রকাশ করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। বিবিএস মহাপরিচালক মো: তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রকল্পের জনশুমারির কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক কবির উদ্দিন আহাম্মদ।
এম এ মান্নান বলেন, ‘সচিব নতুন এসেছেন, আমরাও নতুন। অতীতে এখানে কিছু কিছু প্রকিউরমেন্ট হয়েছে। তাও তিন বছর আগে, ২০১৯ সালে। সচিবকে অনুরোধ করেছি সেগুলোর বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখতে। সেগুলো ব্যবহার করা যায় কি না তা দেখবেন তিনি। কারণ যন্ত্রপাতির একটি বয়স আছে। এই যে এবার হলো ২০২১ সাল, ২০১৯ সালে কেনা হয়ে গেছে মাল। প্রকল্পটা পাস হওয়ার সাথে সাথে এবং এখানে স্টোর করা আছে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য। সেগুলো খুবই স্পর্শকাতর। সচিব, মহাপরিচালক (মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম), প্রকল্প পরিচালককে বলবো আপনারা দেখবেন সেগুলোকে কাজে লাগবে কি না।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কিছু কিছু ব্যয় আছে। সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের সাবধান হতে হবে। যেমন একটি আইটেম হলো প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন। দেখি মাঝে মাঝে আমার কাছে ১০ বা ৮ বছর আগের খাতা রাফ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য হাজির হয়ে গেছে। অনেক সময় অনেক জায়গায় যাই, পেন্সিল বা কলম চেষ্টার পরে ও লিখে না। এগুলো আমরা সবাই বুঝি। সাপ্লাইয়ের পণ্য যারা দেন, তারাও তো দু’পয়সা বাঁচাতে চান। তিনি বলেন, তার কাছে এটি ন্যায়সঙ্গত। তবে আমাদেরকে যতœবান হতে হবে।’
সাবধানতার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘মাছের কান দেখে মাছ কিনি। লাল নাকি সাদা। আপনারা প্রকিউরমেন্টে যারা থাকবেন, প্লিজ ভেরি কেয়ারফুল। বিশেষ করে স্টেশনারি পণ্যের মধ্যে টাকা বাঁচানোর স্কোপ আছে বলে আমার মনে হয়। আমি সরকারের বিভিন্ন অফিসে যাই, স্টেশনারির কাগজ, কলম-পেন্সিল, ছোট কলম, বড় কলম বানানো হয়। বানান, কিন্তু তা সাবধানে। যাতে কাজে লাগে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘টাকা আমাকে বাঁচাতে হবে। কারণ এটি তো জনগণের টাকা। যে লোক টাকা দিচ্ছে তিনি নিজে কিন্তু খরচ করতে পারছে না। তার ঘরে গিয়ে দেখেন, আমার মতো বসার কোনো চেয়ার-টেবিল নেই। তারা মেঝেতে বসে কাজ করছে। অথচ তারাই দেশের মালিক। তিনি বলেন, আমাদের সাবধানতার সাথে ব্যয় করতে হবে। তবে না খেয়ে টাকা বাঁচাতে বলছি না। খেতেও হবে, হিসাবও রাখতে হবে। ব্যয় ছাড়া অর্থনীতি স্তিমিত হবে।’
নির্বাচন কমিশনে কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশনে চাকরি করেছিলাম কয়েক বছর। অনেক বছর আগে। নির্বাচনের জন্য কী কী সব সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল। হাজার হাজার কেনা হয়েছিল স্টক আছে, জমে পাথর হয়ে গেছে। এরকম জিনিস আমি দেখে এসেছি ওখানে। এটি হওয়া উচিত নয়।’সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, জনশুমারি প্রকল্পে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করছি। কেননা কৃষি শুমারিতে কাগজ-কলম ব্যবহার করতে গিয়ে ১৩ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। কাগজ নষ্ট হয়েছে অনেক, কিন্তু তথ্য ধরা যাচ্ছিল না। তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটিতে এই ১৩ কোটি টাকার বিষয়ের সাথে কারা জড়িত তাদের বের করে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়। অনেক দেনদরবার করে এই টাকা পাস করাতে হয়েছিল। এ রকম ঘটনা যেন আর না ঘটে। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের মোট ব্যয় এক হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। ষষ্ঠ এই জনশুমারি করোনার কারণে ১০ মাস পিছিয়ে গেছে। আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
করোনায় ১০ মাস পিছিয়ে গেছে জনশুমারি: দেশে ১০ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয় আদমশুমারি ও গৃহগণনা। ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া ‘পরিসংখ্যান আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী ‘আদমশুমারি ও গৃহগণনা’ এর নাম পরিবর্তন করে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ করা হয়। ১০ বছর পর এবার দেশে ষষ্ঠ ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে করোনা মহামারির কারণে ১০ মাস পিছিয়ে গেছে জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ। মূল জনশুমারি বা মানুষ ও গৃহ গণনা অনুষ্ঠিত হবে ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর।
জোনাল অপারেশনের প্রথম পর্যায়ের মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিচালিত হবে। এ লক্ষ্যে মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গতকাল সোমবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিবিএস ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শুমারির কাজ ১০ মাস পিছিয়ে যাওয়ার তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ঘোষণা করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘করোনাজনিত কারণে আমরা ১০ মাস পিছিয়ে গেছি। ইতোমধ্যে আমরা সরকার প্রধানের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি পেছানোর জন্য। আমরা এখন কাজ শুরু করছি।’ ‘পরিসংখ্যান বিভাগের সকলকে অভিনন্দন জানাই। কেননা আমাদের অস্তিত্বের অন্যতম প্রধান নিদর্শন হলো এই কাজটি।’ যোগ করেন মন্ত্রী।
বিবিএসের তথ্যমতে, বিবিএসের পরিচালিত বৃহত্তম পরিসংখ্যানিক কর্মকা- হলো ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম আদমশুমারি ও গৃহগণনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ এর মাধ্যমে দেশের খানার সংখ্যা, খানায় বসবাসকারী সদস্যদের সংখ্যা, আর্থ-সামাজিক ও জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করা হবে। এসব তথ্য দেশের সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, নীতি নির্ধারণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এবারের শুমারিতে আইসিআর প্রশ্নপত্রের পাশাপাশি মাল্টি মোড (ট্যাব, পিক অ্যান্ড ড্রপ, টেলিফোন ইন্টারভিউ) পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া এবারই প্রথম বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের (প্রবাসী) এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। শুমারিতে একটি নির্দিষ্ট রেফারেন্স তারিখে প্রতিটি খানা ও খানার সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com