কলাপাড়ায় করোনা সংক্রমন এড়াতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মানছেনা কেউ। এতে সরকারের নির্দেশনা ‘ঘরে থাকুন, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়া’ জনসচেতনতার অভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছেনা। ফলে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের উদ্দোগে সচেতনতামূলক প্রচারণা, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা ফলপ্রসু হচ্ছেনা। এছাড়া সাপ্তাহিক হাট-বাজার বন্ধ করা, মাছ বাজার-কাঁচা বাজার খোলা স্থানে স্থানন্তর, ইটভাটা সহ আবাসন নির্মাণ কাজ বন্ধ করা এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন পর্যায়ে ইমারত নির্মান কাজ বন্ধ করার ঘোষণা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ঝূঁকির মধ্যে রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।
সবশেষ শনিবার (১১এপ্রিল) উপজেলা প্রশাসনের এক জরুরী সভায় উপজেলার সকল সাপ্তাহিক হাট বাজার বন্ধ রাখার ঘোষনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও উপজেলার দুই পৌরসভাসহ অন্তত: অর্ধশত গ্রামীণ বাজারে চায়ের দোকানসহ কতিপয় দোকানপাটে রাত অবধি চলে আড্ডাবাজদের বিচরণ। এ বাজারগুলো ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ফেরা এক শ্রেণির মানুষের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে।
আসরের নামাজের পর থেকে রাত অবধি চলে আড্ডা। কলাপাড়া পৌরশহরের বাদুরতলী, ফেরী ঘাট চৌরাস্তা, নাচনাপাড়া চৌরাস্তা, মাছ বাজার, কুয়াকাটা পৌরসভার চৌরাস্তা, এলজিইডি’র পুকুরপাড় এ সামাজিক দূরত্ব রক্ষা না হওয়ায় ক্রমশ: ঝূঁকিপূর্ন হয়ে উঠছে এসব এলাকা গুলো। এছাড়া নীলগঞ্জের পাখিমারা বাজার, নীজকাটা স্লুইসগেট, টুঙ্গিবাড়িয়া, নীলগঞ্জ ফেরিঘাট। মহিপুরের মহিপুর বন্দর, পুরান মহিপুর ফেরিঘাট, গাববাড়িয়ার বাঁধঘাট, খালগোড়া। টিয়াখালীর নাচনাপাড়া চৌরাস্তা, ফোরলেন পয়েন্ট, টিয়াখালী সেতুর পাড়, বাদুরতলী বাঁধঘাট। ধানখালীর লোন্দাবাজার, বটতলা বাজার, পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্র গেট, ফুলতলী, সোমবাড়িয়ার হাট, কলেজ বাজার, নোমরহাট। চম্পাপুরের দেবপুর, পাঁচজুনিয়া, পাটুয়া বাজার। চাকামইয়ার ব্রিজঘাট, তরিকাটা বাজার, দিত্তা, বেতমোড়, কাঠালপাড়া। লালুয়ার বনাতিবাজার, মুক্তিযোদ্ধা বাজার, চারিপাড়া, ব্যুরোজালিয়া, আবাসন গেট। বালিয়াতলীর ছোটবালিয়াতলী, চৌরাস্তা, তুলাতলী, আমতলী, বাবলাতলা বাজার। ধুলাসারের চরচাপলী বাজার, ধোলাইর মার্কেট, বটতলা। লতাচাপলীর আলীপুর বন্দর, ফাঁসিপাড়া, লক্ষ্মীর বাজার, আমখোলাপাড়া, আজিমপুর, মিশ্রিপাড়া। ডালবুগঞ্জের ডালবুগঞ্জ বাজার, ডালবুগঞ্জ হাইস্কুল বাজার।
মিঠাগঞ্জের পুর্ব ও পশ্চিম মধুখালী, তেগাছিয়া বাজারে এখনও জমজমাট আড্ডায় ব্যহত হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা। এছাড়া নারায়নগঞ্জ ফেরত মানুষজন হোম কোয়ারেন্টাইন না মানায় ঝূকি মুক্ত হচ্ছেনা কলাপাড়া। করোনা সংক্রমন এড়াতে ওয়ার্ড পর্যায়ে করোনা প্রতিরোধে গঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যক্রম সক্রিয় না করলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে পটুয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় ১৮৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরএ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১১৪টি রিপোর্ট এসেছে। তন্মধ্যে ৩টি পজিটিভ এবং বাকী ১১১টি নেগেটিভ এসেছে। এদের মধ্যে দুলাল হাওলাদার নামের একজন করোনা সংক্রমিত জেলার দুমকীতে ও অপরজন আ’লীগ নেতা জিএম দেলোয়ার পার্শ্ববর্তী বরগুনা জেলার আমতলীতে মুত্যুবরন করেছেন। এছাড়া খাদিজা বেগম নামের একজনের করোনা সংক্রমিত হওয়ায় তাকে দুমকীর নিজ বাড়ীতে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। জেলায় এপর্যন্ত ১০৩২জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এরমধ্যে ৭২৬ জন ছাড়পত্র পেয়েছে। বাকী ৩০৬ জন এখনও হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত ৬১,৭৬৩ পরিবার সহ ১৩০টি আবাসনের প্রায় ১০ হাজার পরিবারকে ত্রানের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র।
কলাপাড়া ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন,’ সাপ্তাহিক হাট-বাজার গুলোকে বন্ধ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি সহ স্ব স্ব বাজার কমিটি গুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শহরের কাঁচা বাজার দু’এক দিনের মধ্যে খোলা মাঠে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। করোনা সংক্রমন এড়াতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় আমরা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাথে নিয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
এমআইপি/প্রিন্স/খবরপত্র