মেয়ে পালিয়েছে স্বামীর হাত ধরে অথচ মা করলেন অপহরণ মামলা। এই মামলায় পুলিশ বরিশাল শহরের রুপাতলী এলাকায় ছেলের পরিবারের সদস্যদের হয়রানিসহ বৃদ্ধ বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। এবং সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধকে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। পুলিশ এখান এখন মেয়ের সন্ধান লাভে ছেলের পুরো পরিবারকে চাপের ওপর রেখেছে। কিন্তু ছেলে মেয়ে দু’জন একত্রে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও তাদের পরিবার এটা বলতে পারছে না কোথায় রয়েছে। বিপরিতে পুলিশ ছেলে পরিবারের এমন দাবি- মানতে না চাওয়ায় এখন মেয়ে বিষয়টির প্রমাণ দিতে স্বেচ্ছায় পালিয়ে যাওয়া নিয়ে একটি ভিডিও রেকর্ড করে তা প্রকাশ করেছে। এই ভিডিওচিত্র আমাদের প্রতিবেদকের হাতেও এসেছে।
সেই ভিডিও বার্তায় লক্ষ্য করা গেছে- মেয়ে আঞ্জুমান আক্তার নিজের বয়স ২১ বছর জানান দিয়ে বলছে আমার মা স্বামী-শশুরসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অপহরণ অভিযোগে যে মামলাটি করেছেন তা সম্পূর্ণরুপে মিথ্যে। কারণ আমাকে কেউ অপহরণ করেনি, আমি নিজের পছন্দ মতো রুপাতলীর শের-ই বাংলা সড়কের বাসিন্দা তারিকুল ইসলামকে বিয়ে করি। এবং তার হাত ধরে বাসা ছেড়ে গত ৭ মার্চ চলে আসি। আসার সময় আমি সাথে করে বাসা থেকে কিছু নিয়ে আসিনি। কিন্তু আমার মা বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি বলে, অপহরণ অভিযোগ এনে একটি মিথ্যে মামলা করেছেন।
ভিডিওচিত্রের শেষাংশে মেয়ে বলেন- পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ঝালকাঠি আদালতে উঠে তিনি বিচারকের সামনে বলারও প্রস্তুতি নিয়েছেন। মেয়ের এই ভিডিওচিত্রে দেখে আর বলার অপেক্ষা নেই, যে তিনি অপহরণ হয়েছেন। হয়তো পুলিশেরও বুঝতে বাকি থাকবে না। কিন্তু এরপরেও মেয়ের মা যা বলছেন তা শুনে অনেকেই অবাক হবেন।
প্রথমে মেয়ের মা বনফুল বেগম এ প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন- তার মেয়েকে গত ৭ মার্চ নলছিটির রায়াপুর থেকে তুলে নিয়ে গেছেন রুপাতলীর তারিকুল ইসলাম। এবং এই ঘটনায় তিনি ছেলে বাবাসহ পরিবারের ৫ সদস্যর বিরুদ্ধে নলছিটি থানায় ১১ মার্চ একটি অপহরণ মামলা করেন।
এ মামলায় তিনি উল্লেখ করেন- মেয়েকে অপহরণের সময় সাথে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারও নিয়ে গেছে। এবং তার মেয়ের সৌদি প্রবাসী এক যুবকের সাথে ৬ আগে বিয়েও হয়েছে।
কিন্তু টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন মেয়ে। তার দাবি- তিনি প্রবাসী স্বামীকে তালাক করে প্রেমিক পুরুষ তারিকুল ইসলামকে সকল আইন মেনে বিয়ে করেছেন। এই বিষয়টি সাম্প্রতিকালে তার মা জানতে পেরে তাকে মারধর করে এবং বাসায় আটকে রাখেন। মূলত তাদের নির্যাতন থেকে রেহাই পেতেই আঞ্জুমান স্বামীর হাত ধরে পালিয়ে গেছেন। পুলিশ এই বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ইতিমধ্যে অবগত হলেও মেয়েকে উদ্ধারের অজুহাতে ছেলে পরিবারকেই চাপছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- পেশায় পরিবহন শ্রমিক ইউনুস হাওলাদার তৎসময়ে ছেলের বাসার পাশে রুপাতলীর শের-ই বাংলা সড়কে ভাড়া বাসায় দীর্ঘদিন বসবাস করেন। এসময় তার মেয়ের সাথে স্থানীয় তারিকুলের হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক তৈরি হলে তারা একবার একে অপরের হাত ধরে অজানার উদ্দেশে পাড়িও জমান। তখন তারা বিবাহ করলেও মেয়ে পরিবারের আর্জির কারণে সেই দফায় মেয়েকে ফেরত দিতে স্থানীয়রা অনুরোধ রাখে। তখন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশ মীমাংসার মাধ্যমে মেয়েকে তার পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
এর কিছু দিন পরে রাসেল নামে এক প্রবাসী যুবকের সাথে মেয়েকে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে বিয়ে দেন। সেই ছেলে শিগগিরই দেশে আসছে এমন খবর শুনে গত সাত মার্চ মেয়ে ফের তারিকুলের হাত ধরে স্বেচ্ছায় বাসা থেকে পালিয়ে গেছেন।
পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি মেয়ে আঞ্জুমান মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককের কাছেও স্বীকার করেছেন। তিনি জানান- রাসেল নামের প্রবাসী ছেলের কাছ থেকে তার বাবা মা মোটা অংকের অর্থ নিয়েছেন। সেই অর্থ মেটাতে না পেরে তাকে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে বিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু আমি ওই বিয়ে মানি না, এবং আইন মোতাবেক তাকে তালাকও দিয়েছি। এবং আমার পছন্দের ছেলের হাত ধরে চলে এসে বিয়ে করে সুখে আছি। কিন্তু আমার বাবা-মা এখন শশুর পরিবারকে হয়রানি করতে একটি মিথ্যে অপহরণ মামলা সাজিয়েছেন। সেই মামলায় ১২ মার্চ রাতে নলছিটি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাইমুর রহমান ও এএসআই সুব্রত রায় আমার বৃদ্ধ শশুরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে। এই বিষয়টি আমি আদালতকেও জানাবো, বলেন মেয়ে।
মেয়ের এমন ভিডিও বার্তা শুনে এবার রেগে গিয়ে মা এ প্রতিবেদককে বললেন- আমার মেয়ে নষ্ট হয়ে গেছে, ও যেথায় যাক আমার আপত্তি নেই। ওরে শুধু বলেন- রাসেলের কাছ থেকে দুই বছরের যে টাকা পয়সা স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে তা ফেরত দিতে।
এমন বক্তব্যের পরেও কেন মেয়েকে অপরহরণ অভিযোগ আনলেন তারিকুলের বিরুদ্ধে এ প্রশ্নে মামলার বাদী বনফুল বেগম তালগোল পাকিয়ে ফেলে ফোনটি কেটে দেন।’
এমআইপি/প্রিন্স/খবরপত্র