রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে বিএনপির নেতা কর্মীদের কাজ করতে হবে বনশ্রী আফতাব নগর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি বাবলু পন্ডিত, সম্পাদক জহুরুল ইসলাম ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ১৫তম সভা মহানগরী জোন আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মাইলস্টোন কলেজের কৃতিত্ব স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী নগরকান্দায় দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ওসি, সাংবাদিকসহ আহত- ৩০ কালীগঞ্জে নানা সংকটে গ্রাম আদালত সুফল পেতে প্রয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ মুন্সীগঞ্জে লুন্ঠিত মালামালসহ ৭ ডাকাত গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বর্ণিল পিঠা উৎসব

প্রতিবন্ধী শনাক্ত ও সুবর্ণ কার্ড কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শনাক্তকরণ, সুবর্ণ কার্ড ও ভাতা দেয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ১০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের তদবিরের মাধ্যমে এই সব সুবর্ণ কার্ড প্রদান করা হচ্ছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ভাতা প্রাপ্তির কার্ড পেতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। এনজিওদের একাংশ জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে অনুদান পেয়ে থাকে। অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূতভাবে ২০ থেকে ৭০ হাজার টাকা অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। আর প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তির প্রথম কিস্তি পেতে ২৪ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ অর্থ আত্মসাৎ হয়ে থাকে।
‘উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিবন্ধকতা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার অনলাইনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার (গবেষণা ও পলিসি) ফারহানা রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ ও সুবর্ণ কার্ড সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো কোনো সরকারি হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার ও তার সহকারীদের একাংশের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কার্যক্রমে এক থেকে দেড় হাজার টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। অধিকাংশ জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কার্যক্রমে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার ‘অনেক ব্যস্ত’ থাকায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সময় ক্ষেপণের পাশাপাশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। উপজেলা বা শহর সমাজসেবা কার্যালয়ে তথ্যভা-ারে নাম অন্তর্ভুক্তকরণে ক্ষেত্র বিশেষে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা তার নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে এক থেকে দুই শ’ টাকা আদায় করা হয়।
স্থানীয় সংসদ সদস্য, সচিবালয়, জেলা প্রশাসন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ কর্তৃক তাদের আত্মীয় ও পরিচিতজন প্রকৃত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি না হওয়া সত্ত্বেও সুবর্ণ কার্ড প্রদানের জন্য সমাজসেবা কার্যালয়ে তদবির করে। তদবিরের মাধ্যমে যাদের সুবর্ণ কার্ড দেয়ার কথা নয় তাদের কার্ড দেয়া হচ্ছে। ফলে প্রকৃত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সুবর্ণ কার্ড পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের একাংশের বিরুদ্ধে সুবর্ণ কার্ডের জন্য এক থেকে তিন হাজার টাকা নিয়মবহির্ভূভাবে আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। আবার সুবর্ণ কার্ড থাকা সত্ত্বেও প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া এবং প্রাপ্য সুবিধা পেতে মধ্যস্থতা করার অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবন্ধী ভাতা সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গে টিআইবি বলছে, মাঠপর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে জনপ্রতিনিধিদের স্বদিচ্ছার ওপর। ভাতা প্রাপ্তির কার্ড পেতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের একাংশ কর্তৃক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কাছ থেকে এক থেকে তিন হাজার টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে আদায়ের মাধ্যমে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ রয়েছে।
টিআইবি পরিচালিত সেবা খাতে দুর্নীতি বিষয়ক জাতীয় খানা জরিপ ২০১৭ এর তথ্য বিশ্লেষণ অনুযায়ী ২৩.৪ শতাংশ খানাকে ভাতায় অন্তর্ভুক্ত হতে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ দিতে হয়েছে। এছাড়া সময়ক্ষেপণ, স্বজনপ্রীতির ও প্রতারণার শিকার যথাক্রমে ১৯.৩ শতাংশ খানা, ১১ শতাংশ খানা ও ৭.৯ শতাংশ খানা। আর ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে যে নতুন ২ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতার আওতায় এসেছে ক্ষেত্রবিশেষে তাদের ভাতার অর্থের অংশবিশেষ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। প্রথমবার ভাতার বইয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তার স্বাক্ষর লাগে বিধায় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের একাংশ অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িত থাকে। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তির প্রথম কিস্তি পেতে ২৪ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ অর্থ আত্মসাৎ হয়ে থাকে।
ক্রয় সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গে টিআইবির গবেষণায় বলা হয়েছে, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্তৃক ক্রয়কৃত বিভিন্ন থেরাপি মেশিন এবং প্রতিবন্ধীসহ শিশু ও ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক উপকরণ নিম্নমানের, যদিও এ ধরনের ক্রয়ের জন্য যথাযথ আর্থিক বরাদ্দ থাকে। প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একাংশের পরিচিত ও আত্মীয়দের বাসা ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যোগসাজশের মাধ্যমে উভয়পক্ষ আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অভিযোগ রয়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ভাড়া করা কেন্দ্রের অবকাঠামো প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়।
এনজিওদের অনুদান সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে যে, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন শর্তসাপেক্ষে এনজিওদের আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে। সাহায্যপ্রাপ্ত এনজিওদের একাংশ ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে অনুদান পেয়ে থাকে। অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূতভাবে ২০ থেকে ৭০ হাজার টাকা অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ দিতে হয় বিধায় এসব এনজিও অঙ্গীকারবদ্ধ সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে না।
আর সভার কার্যবিবরণী সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে টিআইবি বলছে, বছরের নির্ধারিত লক্ষ অর্জনের জন্য কোনো কোনো উপজেলা কমিটি সভা না করেই সভাপতিসহ সকলের স্বাক্ষর গ্রহণ করে সভার কার্যবিবরণী তৈরি করে। এছাড়া গণপরিবহনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীসহ ব্যক্তিদের কার্ড থাকা সত্ত্বেও নির্ধারিত অর্ধেক ভাড়া না নিয়ে সম্পূর্ণ ভাড়া নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক পরিসংখ্যান নির্ধারণে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ না থাকায় তাদের কল্যাণে কার্যকর উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি হয়নি। আবার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সূত্রে ভিন্নতা রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১.৪১ শতাংশ, খানা আয়-ব্যয় জরিপ প্রতিবেদন (২০১০) অনুযায়ী ৯.০৭ শতাংশ, এবং খানা আয়-ব্যয় জরিপ প্রতিবেদন (২০১৬) অনুযায়ী ৬.৯৪ শতাংশ। অপরদিকে সমাজসেবা অধিদফতরে নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫৩ জন (৩০ নভেম্বর ২০২০)। বিশ্বব্যাংক (২০১১) এবং বিভিন্ন এনজিওর প্রাক্কলিত তথ্য অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তির হার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯ থেকে ১০ শতাংশ। তবে ৯ শতাংশ হিসেবে বাংলাদেশে নভেম্বর ২০২০ এ প্রাক্কলিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫৪ লাখ জন। অর্থাৎ এ জনগোষ্ঠীর প্রায় সাত ভাগের এক ভাগ সমাজসেবা অধিদফতর নিবন্ধন করতে পেরেছে। মাত্র নয় ভাগের এক ভাগ ভাতা পাচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com