বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে হাট জমলেও কাক্সিক্ষত দাম পাননি ফুলের রাজ্য ঝিকরগাছার চাষিরা। তারা বলছেন, এ বছর তারা ফুল প্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা কম দাম পাচ্ছেন। এছাড়া স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ফুল ঠিকঠাক মতো বিক্রি নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন তারা। ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, চাহিদা না থাকায় এবার বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে গত চার দিনে মাত্র পাঁচ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ী ও চাষিরা জানান, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ফুলের বাজার শুরু হয়। গত শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ছিল সবচেয়ে বড় বাজার। ভোর থেকেই বাজারে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনি, ভুট্টা কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসিসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল নিয়ে গদখালীর ফুলের হাটে হাজির হন চাষিরা। পর্যাপ্ত ফুল ওঠায় জমে ওঠে হাট। এ হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ফুল কেনেন।
চাষিরা জানান, গত বছর এসময় প্রতি পিস গোলাপ ১৫ থেকে ১৬ টাকা ও অন্যান্য ফুলও উচ্চদামে বিক্রি হয়েছে। তবে এ বছর দাম তার থেকে কম। করোনার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এ অবস্থা।
সুমন হোসেন নামে একজন চাষি বলেন, ‘আমি তিন হাজার গোলাপ ফুল নিয়ে এসেছি। শুরুতে ১০-১১টাকা করে প্রতি পিস ফুল বিক্রি করেছি। পরে ৯ টাকা করেও বিক্রি করেছি। আরও ফুল আছে। এ বছর করোনার কারণে সমস্যায় পড়েছি। ধারণা করেছিলাম আজকের বাজারে প্রতিপিস গোলাপ ১৫-১৬ টাকা দরে বিক্রি করবো।’ সোলায়মান হোসেন নামে অপর এক চাষি বলেন. ‘ফুল ৯ টাকা থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। গোলাপ ফুল এনেছি ছয় হাজার। গত বছরের চেয়ে এবার মার্কেট কম। গত বছর বিক্রি করেছি ১৭ থেকে ১৮ টাকা দরে। করোনা ও আম্পানের পরে এ দামে লাভে যাওয়া যাবে না।’ ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান বলেন, ‘বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে প্রস্তুতিটা ভালোই ছিল। আশা করছিলাম, এ বছর গোলাপের দাম ১৫ টাকা করে পাবো। কিন্তু দাম তিন-চার টাকা করে কম পাইছি। অন্যান্য ফুল রজনীগন্ধা, জারবেরা, গ্লাডিওলাসের দামও অন্য বছরের তুলনায় কম। তারপরেও আমরা আশাহত হইনি। মূলত করোনার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বাজারে প্রভাবটা পড়েছে।’
পাবনা থেকে আসা রায়হান আলী নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘হাট থেকে গোলাপ ফুল কিনেছি ৮ থেকে ১০ টাকার মধ্যে। আশা করেছিলাম ৫-৬ টাকার মধ্যে গোলাপ কিনতে পারবো, কিন্তু সেটা হলো না। আবার স্কুল-কলেজ বন্ধ, সেক্ষেত্রে ফুল কিনে ঠিকঠাক মতো বিক্রি করতে পারবো কি না তা- নিয়ে সংশয়ে আছি।’
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার্স সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম দাবি করেন, চাহিদা না থাকায় এ বছর বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ফুলের কাক্সিক্ষত দাম পাওয়া যায়নি। করোনার কারণে সারাদেশে সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ, স্কুল-কলেজ বন্ধ। এ কারণে ফুলের চাহিদাও কম। আমরা সরকারের কাছে দাবি রাখতে চাই- সম্ভাবনাময় দেড় হাজার কোটি টাকার ফুলের বাজার রক্ষা ও সম্প্রসারণ করতে সারাদেশে সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিত আকারে চালুর রাষ্ট্রীয় ঘোষণা দিতে হবে। এছাড়া বিদেশ থেকে প্লাস্টিক ফুল আমদানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।