অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি বিশ্বের ১৮টি ইংরেজি অভিধান ও গ্রামার মুখস্থ করার বিরল রেকর্ডের অধিকারী রেজাউল ইসলাম ওরফে জাফরের এখন দিন কাটে অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে। এক সময়ের কোটিপতি সদালাপী এই অনন্য প্রতিভাধর ব্যক্তি এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে সব হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। রেজাউল ইসলাম পাবনার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের ছেলে। তিনি ১৯৮৫ সালে ধোবাখোলা করোনেশন (নাটিয়াবাড়ি) উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে ১৯৮৭ সালে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। এরপর আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তার নেয়া হয়নি।
রেজাউল ইসলামের জীবন যেন এক রঙ্গমঞ্চ। যার অধিকাংশই ট্র্যাজেডিতে ভরা। বাবা গোলাম খলিফা ও মা লাইলি খাতুনের চার ছেলে চার মেয়ের মধ্যে তিনি তিন নম্বর সন্তান। দারিদ্র্যের কষাঘাত আর বাবার নির্যাতনে তার শৈশব কাটে। পাঁচ বছর বয়স থেকেই বাবার অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হতে তার মাথায় যন্ত্রণার বীজ রোপিত হয়। সেই যন্ত্রণাই তার জীবনে মহীরুহ হওয়ার পথে বাধা হয়েছে।
শত কষ্টের মধ্যেও বাড়ির কাছের চর সাফুল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পাস করেন। ওই স্কুল থেকে বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে উপজেলায় প্রথম হয়েছিলেন। তার হাতের লেখা সুন্দর ছিল। বৃত্তি পরীক্ষার হলে সে বিষয়টি পরিদর্শকসহ সবার নজর কাড়ে। ১৯৭৯ সালে ৫ম শ্রেণি পাস করার পর বাবার অত্যাচারে তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়। একজন সমাজ হিতৈষি মানুষের সহযোগিতায় ভর্তি হন পাবনা জিলা স্কুলে। কিন্তু বিদ্যালয়ের গতানুগতিক পাঠ আর নিয়মের বেড়াজাল অবহেলা-অনাদরে বেড়ে ওঠা রেজাউলের ভালো লাগেনি। ষষ্ঠ শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় হন। ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে প্রথম হন অনেক নম্বরের ব্যবধানে। এরপর পাবনা জিলা স্কুল ছাড়েন। শুরু হয় যাযাবর জীবন।
পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী ঘাটে চলে আসেন। তাকে একজন নগরবাড়ীর পাশেই নাটিয়াবাড়ি ধোবাকোলা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। এ সময় তার থাকা খাওয়ার ঠিক ছিল না। এর মধ্যে নগরবাড়ীতে সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তি ‘ভিসিআর’র দোকান করেন। রেজাউলের কাজ ছিল ভিসিআর চালানো। আর রাতে লোকজন চলে গেলে সেখানে রাত্রিযাপন করতেন। ‘শো’ না চললে তাকে টাকার অভাবে না খেয়ে থাকতে হতো। এভাবে কেটে গেছে ৫ বছর। স্কুল ঠিকমতো না করেও ৮ম শ্রেণি পাস করে নবম শ্রেণিতে ওঠেন। সায়েন্স না আর্টস নেবেন তাও ঠিক করেননি। স্যাররা তাকে সায়েন্সে ভর্তি করে দেন। সেখানে মোবারক হোসেন নামে একজন স্যার তাকে অনেক সহায়তা করতেন বলে রেজাউল জানান। ভিসিআর দোকানের সেই ‘টোকাই বালক’ এসএসসি পরীক্ষা দেন। পরীক্ষার কয়েকদিন আগে একটা গাইড কিনে পড়েন। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে প্রথম বিভাগে পাসও করেন। এত প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি একটি কাজ নিয়মিত করেছেন সেটা হলো ইংরেজী ডিকশনারি মুখস্থ করা।
জানালেন ১৯৭৭ সালের কথা, তখন তিনি তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। তাদের প্রাইমারি স্কুলে একদিন একজন ইংরেজ এসেছিলেন বেড়াতে। তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর রেজাউলের মনে আকাক্সক্ষা জাগে ইংরেজি শেখার। সেখান থেকেই শুরু। হাইস্কুল জীবনে নগরবাড়ীর শাহজাহান সিরাজ নামের একজন তাকে বেশ কয়েকটি ইংরেজি ডিকশনারি কিনে দেন। তিনি এসএসসি পাসের আগেই সেগুলো মুখস্থ করে ফেলেন। তিনি যা পড়তেন মুখস্থ হয়ে যেত বলে জানালেন। পরবর্তী জীবনে রেজাউল অক্লান্ত চেষ্টার ফল হিসেবে অক্সফোর্ডসহ একে একে বিশ্বের ১৮টি ইংরেজি ভাষার অভিধান ও গ্রামার আয়ত্ত করেন। তার পঠিত অভিধান ও গ্রামারের তালিকায় রয়েছে- অর্নামেন্টাল, ফেদম, ওয়েবস্টারস, কেপিলার্স, আলেকজান্ডার, এলনস, টমাস, ও’লেনস, থ্রিচার্স, মার্টিনস, জেসি নেসফিল্ডস, ওকেন্স, ওয়েল ফক্স, চেম্বারস, কেমব্রিজ ও অক্সফোর্ড। এছাড়া তিনি বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক লেক্সিকন পড়েছেন। শুধু শব্দভান্ডার নয়। প্রতিশব্দ, পরিভাষা, উপভাষা এমনকি ইংরেজি গ্রামার ও বাংলা ব্যাকরণের আদ্যপান্ত রেজাউলের নখদর্পণে।
রেজাউল জানান, ২৫ লাখেরও বেশি শব্দ তার আয়ত্তে। মস্তিষ্কে শব্দ ধারণের দিক থেকে এটাই নাকি সবচেয়ে বড় রেকর্ড বলে দাবি করেন রেজাউল।
রেজাউল করিম জানান, তার ইচ্ছা ছিল ইংরেজি শব্দ মুখস্থ করা। এমন কোনো শব্দ ইংরেজিতে থাকবে না, যা তার মুখস্থ নেই। এদিকে ১৯৮৫ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকায় চলে আসেন রেজাউল। সেখানে শুরু হয় তার ভয়াবহ জীবন যুদ্ধ। কখনো নাইটগার্ড কখনো ট্রাকে কুলির কাজ করেছেন। দোকানের মেঝেতে বা ফুটপাতে শুয়ে বহু রাত কেটেছে। গোসলহীন চলে গেছে দিনের পর দিন। তার গায়ের রং ফর্সা হলেও শরীরে ময়লা জমতে জমতে কৃষ্ণাঙ্গদের মতো চেহারা হয়ে গিয়েছিল।
তার এক বন্ধু তিতুমীর কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন তাকে। কিন্তু ঢাকায় টিকতে না পেরে সিরাজগঞ্জের এক কলেজে গিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তার ইংরেজি দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষকরা। সিরাজগঞ্জে রফিক নামের তার এক বন্ধু থাকা- খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর সেই বন্ধুই তাকে আবার ঢাকায় নিয়ে তিতুমীর কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। সায়েন্সের ছাত্র হলেও তিনি পড়তেন সাহিত্য কিম্বা ইতিহাসের বই।
ঢাকায় আসার এ পর্বে তার একটি কাজ জুটে যায়। একটি বাসায় ১০ম শ্রেণির এক ধনীর দুলালের দেখাশোনা করা ছিল তার কাজ। তার ফরমায়েশ খাটার পাশাপাশি তার পায়ের কাছে বসে থেকে সেবা যত্ম করতেন। ওই বাড়িতে সবার উচ্ছিষ্ট খেতে দেয়া হত রেজাউলকে। তরকারি দেয়া হত না তাকে। তবে তরকারি কপালে না জুটলেও ওই ছেলেটির ‘লাথি’ তার কপালে জুটেছে বহুবার। কিছুদিন পর ওই বাড়িতে গৃহশিক্ষক পরিবর্তন হয়। লজিং বাড়ির নতুন শিক্ষক ছিলেন মিজানুর রহমান। তিনি এসেই বললেন ‘এত বড় একটি ছেলে সবার পায়ের নিচে বসে থাকে, এ কেমন কথা!’ তাকে (রেজাউলের) বসার স্থান না দিলে তিনি পড়াবেন না বলেও জানিয়ে দেন। এরপর রেজাউলের বসার আসন দেয়া হয়। একদিন শিক্ষক মিজানুর রহমান রেজাউলকে বলেন, সে লেখাপড়া জানে কিনা? রেজাউল জানিয়েছিলেন, পড়াশোনা বেশি জানেন না। তবে ইংরেজী জানেন। শুনে মিজানুর রহমান হাসেন।
আবার যখন রেজাউল বলেন আমি সবার চেয়ে বেশি ইংরেজী জানি। এ কথা শুনে ওই শিক্ষক তো রেজাউলকে পাগলই মনে করে ফেলেন। টেস্ট করতে দেয়া হয় ইংরেজীতে কয়েকটি বাক্য অনুবাদ করার জন্য। রেজাউল ইসলাম অন্তত ২০ রকম করে সেটি অনুবাদ করে দেন। এতে ওই শিক্ষক হতবাক হন। আবেগে কেঁদে ফেলেন তিনি, এমন একজন বিরল প্রতিভা নষ্ট হচ্ছে দেখে। তিনি রেজাউলকে তার বাসায় নিয়ে যান। তার জন্য নতুন শার্ট-প্যান্টের ব্যবস্থা করেন। তাকে টিউশনি ঠিক করে দেন। তার টিউশনিকালে দ্রুত ছাত্র/ ছাত্রী বৃদ্ধি পায়। রেজাউলের দিন বদলাতে থাকে। ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে ১৯৮৭ সালে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাসও করেন।
বন্ধুরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোচিং সেন্টারের দ্বারে-দ্বারে তখন কোচিং সেন্টারে ইংরেজির ক্লাস নেয়া শুরু করেন রেজাউল। কোচিংয়ে পড়ানোর পাশাপাশি রেজাউল ইংরেজি অভিধানের ‘প্রেমে’ পড়ে থাকেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কেন নেননি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষার সনদই মুখ্য, জ্ঞানার্জন হচ্ছে গৌণ। কিন্তু আমি সনদ অর্জনের চেয়ে জ্ঞানার্জনকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ ও মানুষের প্রকৃতি-সংস্কৃতি জানা-বোঝার জন্য রেজাউল ঘুরে বেড়িয়েছেন অনেক দেশ। বিশেষ করে মিশেছেন ইংরেজি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর সাথে। ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন, জাপান, ব্রিটেন, জার্মান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে গিয়েছেন। বিদেশ বিভুঁইয়ে তিনি জানার চেষ্টা করেছেন বিশ্বে তার সমকক্ষের ইংরেজি জানা কেউ আছেন কিনা? রেজাউলের ভাষ্য, ইংরেজি লেখা, বোঝা, বলা ও লেখার দিক থেকে বিশ্বে তার সমকক্ষ কম লোকই আছেন। ইংরেজরাও তার মতো এত শব্দ জানেন না, এত দ্রুত ইংরেজি বলতে পারেন না।
রেজাউল জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিশ্বের নামকরা প্রায় ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকদের সংস্পর্শে তিনি গেছেন। তাদের সঙ্গে মিশেছেন এবং ইংরেজির নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। ইংরেজির শিক্ষকরা তার সঙ্গে কথা বলে এবং ইংরেজি ভাষায় তার গভীরতা দেখে অবাক হয়েছেন। এদিকে কোচিং সেন্টার থেকে তার বহু টাকা আয় রোজগার হতে থাকে। ইংরেজীর কোর্স করানো শিক্ষক হিসেবে তিনি মাসে লাখ- লাখ টাকা আয় করতে থাকেন। তিনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হন এবং তার জন্য বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টার ব্যাপক সুনাম অর্জন করে। জীবন বদলে যায় রেজাউলের। তিনি নিজেও ‘জাফর’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ‘জাফর’ নামটি তার খুব প্রিয়। বলেন, এ নামটি সাফল্য পাওয়া মানুষদের নাম।
রেজাউল এরপর ভারতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সে সময় বলে দেয়া হয়, বাংলাদেশের ছাত্রকে ভর্তি করা হবে না। এক পর্যায়ে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে তার সিলেবাসভুক্ত পাঠ ভালো লাগেনি। তিনি পড়াশোনা শেষ না করে আবার বাংলাদেশ ফিরে আসেন। এটা ১৯৯০ সালের কথা।
ভারত থেকে এসে তিনি ফেয়ার মেট কম্পর্টমেন্ট নামে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের একটি সংস্থায় যোগ দেন। সেখানে তিনি প্রচুর অর্থ আয় করেন। তার সুযোগ সুবিধা ছিল অসামান্য। কিছুদিন পরই ‘মাথা যন্ত্রণা’র রোগটি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তিনি ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও জার্মানীতে চিকিৎসা নেন। বিশেষ কোনো রোগ ধরা পড়েনি। এতে তিনি সুস্থ না হলেও নিঃস্ব হয়ে যান। তিনি জানতেন- অসুস্থ লোককে কেউ দীর্ঘমেয়াদে রাখবেন না। তাই তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে পাবনা চলে আসেন শূন্য হাতে। এসে স্থানীয় সুহৃদদের পরামর্শে একটি সাধারণ ঘরের মেয়েকে বিয়ে করেন। তবে তার স্ত্রীর ধারণা ছিল- রেজাউল মানেই টাকার মেশিন। কোটি কোটি টাকা। তিনি স্বামীর আর্থিক দুরাবস্থাকে মেনে নিতে পারেননি।
এক বছর পর ১৯৯৮ সালে রেজাউল স্ত্রীর চাপে অসুস্থতা নিয়েই আবার ঢাকা যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে/ সংস্থায় দোভাষী/ লবিস্টের কাজ করেন দু’ বছর। এ সময় স্ত্রীর নামে পাঠান লাখ-লাখ টাকা। শেষে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার আর ঢাকায় থাকা হয়নি। তিনি পাবনায় চলে যান। বেকার স্বামীকে তার স্ত্রী মেনে নিতে পারেননি। রেজাউল অবহেলার পাত্রে পরিণত হন। বেশ কয়েক বছর বেকার ছিলেন। দুটি সন্তানের জন্য মাঝে মধ্যে টিউশনিও করে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন। এর মধ্যে ২০১৪ সালের দিকে পাবনার কাশীনাথপুরে স্কাইলার্ক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল তাকে সেখানে সপরিবারে নিয়ে যায়। রেজাউলের মাসে ১০-১২ হাজার টাকার সংস্থান হয়। কিন্তু তার স্ত্রী অল্প আয় মেনে নিতে পারেননি। রেজাউল এ চাকরিও ছাড়েন। এরপর থেকে তার অসুস্থতা বাড়তেই থাকে। অসুসস্থতা বলতে মাথায় ভয়াবহ যন্ত্রণা।
তিনি জানান, তার যন্ত্রণা মৃত্যু যন্ত্রণার কাছাকাছি। কিন্তু বাইরে থেকে তাকে সুস্থ বলে মনে হয়। চাকরি ছেড়ে, স্ত্রী- সন্তানদের কাছ থেকে বিতাড়িত হয়ে গ্রামের বাড়ি পুরাণভারেঙ্গা গ্রামে চলে আসেন। তিনি সপ্তাহে একটি টিউশনি করতেন। এক ঘণ্টা পড়িয়ে এক ঘণ্টার টাকা নগদ নিয়ে দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ টিউশনি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েন। খুব প্রয়োজনীয় ওষুধও কিনতে পারছেন না। দিনের পর দিন অভুক্ত থাকতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, অসুস্থতা বেড়েছে। এখন তার পক্ষে অন্যকে পড়ানোর মতো মানসিক শক্তি বা সামর্থ্য নেই। প্রতিটি দিন যাচ্ছে তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তার থাকার ঘরটি বসবাসের অযোগ্য। পচা নর্দমার মতো তার থাকার ঘর। গন্ধে সেখানে শ্বাস নেয়া যায় না। তার ফুফু মরিয়ম খাতুন বলেন, এত জ্ঞান বুদ্ধির ছেলেটি আজ বড় অসহায়। তার দেখার কেউ নেই। তার দুটি ছেলে মায়ের কাছে থেকে লেখাপড়া করে। তারা অসহায় রেজাউলের কোনো খোঁজ নেয় না। রেজাউল ভিক্ষাও করতে পারে না। তাই অনাহারে অর্ধাহারে তার দিন কাটে। রেজাউলের মা লাইলি খাতুনও নিজের পেটের তাগিদে এখানে- সেখানে থাকেন। তিনিও ছেলের জন্য কিছু করতে পারেন না। তিনি তার ছেলের করুণ দুর্দশার কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি বলেন, তার ছেলে সুস্থ অবস্থায় লাখ-লাখ টাকা আয় করেছে। আজ অসুস্থ হয়ে, বিনা চিকিৎসায়, না খেয়ে তার দিন কাটে। মা হয়ে তিনি সহ্য করতে পারছেন না। কিন্তু তিনি নিজেই মানুষের দ্বারে-দ্বারে ভাতের কাঙাল। তিনি রেজাউলের জন্য কিছুই করতে পারছেন না বলে আফসোস করেন। কাশীনাথপুর স্কাইলার্ক ইন্টারন্যাশনাল বিজ্ঞান স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক আলাউল হোসেন জানান, বিরল প্রতিভার রেজাউল ইসলামকে কয়েক বছর আগে তিনি তাদের প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন চাকরি দিয়েছিলেন। এখন তার মাথায় ভয়াবহ অসুখের জন্য তার পক্ষে ক্লাস নেয়া বা টিউশনি করা সম্ভব না। তিনি সত্যিকার অর্থেই অনাহারে-অর্ধাহারে থাকেন।