আজ রোববার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতকি মাতৃভাষা দিবস রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। করোনা ভাইরাসের কারণে ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২১’ পালনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদালয় কর্তৃপক্ষ সীমিত পরিসরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রাষ্ট্রাচার অনুযায়ী একুশের প্রথম প্রহরে পুস্পার্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীমূল প্রস্তুত করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হবে প্রভাতফেরি। বাঙালির কণ্ঠে কণ্ঠে উচ্চারিত হবে মর্মস্পর্শী গান, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি…’। কৃতজ্ঞ দেশবাসী বিনম্র শ্রদ্ধা জানাবে আজ থেকে ৬৮ বছর আগের এই দিনে মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের স্মৃতির প্রতি। আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আজ ফুলে ফুলে ভরে উঠবে দেশের সব শহীদ মিনারের বেদি। ঢাকায় শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর অনেকেই যাবেন আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করতে। মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার জন্য জীবনদানের ঘটনা ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির আগে আর ঘটেনি। বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা মাতৃভাষার জন্য এই দিনে বুকের রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত করে পৃথিবীর ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব নজির সৃষ্টি করেছিলেন। মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আত্মদানের এই অতুলনীয় ঘটনা স্বীকৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। আজ বাংলাদেশের সঙ্গে সারা বিশ্বেই দিনটি পালিত হচ্ছে।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামীল আমির ডা. শফিকুর রহমান পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন।
শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত শহীদ মিনার: আমাদের জাতীয় জীবনের অন্যতম অবিচ্ছেদ্য অংশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। বাঙালি জাতির মনের গভীরে স্থান এই মহামূল্যবান স্থাপনার। এখানে জাতির সূর্য সন্তানদের স্মরণ করা হয় বিশেষ একটি দিনে। দিনটি ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা’ দিবস। আর দিবসটিকে কেন্দ্র করে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। গত শুক্রবার ১৯ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায়, পাল্টে গেছে শহীদ মিনার এলাকার চিত্র। বছরের অন্যান্য সময় ধুলিধূসরিত অবস্থায় শহীদ মিনার হয়ে থাকে ভাসমান মানুষের আশ্রয়স্থল।এখন আর সেসব নেই। বরং সাজসজ্জার পর শহীদ মিনারে বিরাজ করছে এক ভাব-গাম্ভীর্যের পরিবেশ। শুধুই সৌন্দর্য্য বর্ধনই নয়, দিবসটিকে কেন্দ্র করে অন্যান্য বছরের মতো এবারও নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বাঙালি জাতির পঞ্জিকার এই দিনটি বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে উদযাপন করা হয়। শুধু বাঙালি নয়, এখন পুরো বিশ্ব স্মরণ করে সেই মহান মানবদের, যারা পৃথিবীতে প্রথম ও একমাত্র জাতি হিসেবে রাষ্ট্রভাষার জন্য জীবন দেন। তাদের স্মরণে নির্মাণ করা হয় এই স্থাপনা।
শহীদ মিনার নির্মাণের পেছনেও আছে ইতিহাস। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, বায়ান্ন’র ২১ ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত প্রহরের পর ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তৈরি করেন প্রথম শহীদ মিনার। শহীদ মিনারটির নকশা করেছিলেন সাঈদ হায়দার। কিন্তু নির্মাণের মাত্র তিন দিন পর মুসলিম লীগ সরকারের লেলিয়ে দেওয়া সেনাবাহিনীর বন্দুকের নল থেকে রক্ষা পায়নি সেটি।
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর শহীদ মিনারটি দ্বিতীয় বার নির্মাণের কাজ শুরু হয় ১৯৫৭ সালে। এটির নকশা তৈরি করেন হামিদুর রহমান। পরে ৫৮ সালে সামরিক সরকার জেনারেল আইয়ুব খানের সময় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর জেনারেল আযম খানের সময় নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ সালে। ওই বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ভাষা শহীদ আবুল রকতের মা হাসিনা বেগম।
২১ শে ফেব্রুয়ারি শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষে দিকে। শনিবার দুপুরের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। এবার করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শহীদ দিবস উদযাপন করা হবে। সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে, যাতে তারা মাস্ক পরে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন’।