কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন ঐতিহ্যবাহী সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের দু’দিনব্যাপী ৯৯’তম বার্ষিক ইছালে ছাওয়াব মাহফিল আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) বাদ জোহর থেকে শুরু হবে। ১ মার্চ (সোমবার) বাদ ফজর দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে মাহফিল শেষ হবে। উক্ত মাহফিল সফল করার লক্ষে গতকাল সোনাকান্দা বহুমুখী কামিল মাদরাসার অফিস কক্ষে স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ তা’লীমে হিযবুল্লাহ’র কেন্দ্রীয় মহাসচিব মুফতী মুহাম্মদ মোতালিব হোসাইন সালেহী, সোনাকান্দা দারুল হুদা কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ ইসলামী যুব কাফেলার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মাহমুদী ও সাংবাদিক ড. মনিরুজ্জামান প্রমুখ। মাহফিল উপলক্ষে দরবার শরীফের পক্ষ থেকে ৬টি আলাদা আলাদা পেন্ডেল ছাড়াও আগত দূরবর্তী মেহমান বৃন্দের থাকা, খাওয়া, অজু, গোসল, টয়লেট ও ৮টি গাড়ী পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কের মেটংঘর থেকে শ্রীকাইল, নবীপুর থেকে শ্রীকাইল পর্যন্ত রাস্তা দু’টি যানযট মুক্ত রাখতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে। পাশাপাশি অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান, স্থানীয় পুলিশদের সহযোগিতায় ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। করোনাকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ফ্রি মাক্স বিতরণ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজেশানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হবে। এতে দেশ-বিদেশের ওলামায়ে কেরাম ও বিভিন্ন দরবার শরীফের পীর ছাহেবগণ বয়ান করবেন। মাহফিলে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক নেতৃবৃন্দসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক লোকের সমাগম হবার সম্ভাবনা রয়েছে। উক্ত মাহফিলে উপস্থিত থেকে দুনিয়া ও পরকালের অশেষ ছাওয়াব হাসিল করার জন্য দরবার শরীফের পীর, বাংলাদেশ তা’লীমে হিজবুল্লাহ’র আমীর অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা মাহমুদুর রহমান ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মাহফিলের মুখপাত্র মুফতী মুহাম্মদ মোতালিব হোসাইন সালেহী বলেন, মাহফিলের সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে মাঠ পর্যায়ে বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রচার ও প্রসারের জন্য একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। মাহফিলে পীর মাশায়েখদের বয়ানের আলোচ্য বিষয় দেশ ও সুশীল জাতি বিনির্মানে নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, শতাব্দীর ঐতিহ্যধন্য উপমহাদেশের আধ্যাত্মিকতায় প্রসিদ্ধ এ দরবার। পাক ভারত উপমহাদেশের মধ্যে দ্বীনের দাওয়াত ও খেদমতে যাঁরা আঞ্জাম দিয়েছেন তন্মধ্যে সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের দাদা হুজুর বাগদাদ ও ফুরফুরা শরীফ থেকে খেলাফত প্রাপ্ত শাহ্সুফি আলহাজ্ব মাওলানা হাফেজ আব্দুর রহমান হানাফি (রহ:) অন্যতম। তিনি তাঁর জীবনকে সর্বদা ইবাদত, বন্দেগী, মোরাকাবা-মোশাহাদার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির শিখরে সমাসীন হতে সক্ষম হয়েছেন। দ্বীনের উপর তাঁর আত্মত্যাগ ও সাধনা দেখে লক্ষ লক্ষ মুসলমান তাকে অনুসরণ করেছেন। বিশেষ করে এ দেশের মুসলিম মিল্লাতের নৈতিক অধ:পতন থেকে চারিত্রিক উন্নতি ও আমলের অগ্রগতির ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তিনি তাঁর এ দাওয়াতি কাজ চালু রাখার জন্য বহুযুগ আগ থেকে তাঁর দরবারে প্রতিবছর বার্ষিক ইছালে ছাওয়াব মাহফিল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৪ সালে তাঁর ইন্তেকালের পর সুযোগ্য উত্তরসুরী বড় ছাহেবজাদা শাহসুফি আলহাজ্ব মাওলানা আবুবকর মোহাম্মদ শামসুল হুদা (রহ:) আব্বাজানের খেদমতকে অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে গোটা দেশে আঞ্জাম দিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন জেলায় তাঁদের উভয়ের প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য মাদরাসা, মসজিদ, খানকাহ, মক্তব, মুসাফির ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ২০০৫ সালে তিনি যখন ইন্তেকাল করেন তখন তাঁর সুযোগ্য বড় ছাহেবজাদা আলহাজ্ব মাওলানা অধ্যক্ষ মাহমুদুর রহমান স্থলাভিষিক্ত হন। তিনিও নিরলস ভাবে দেশ-বিদেশে দ্বীনের দাওয়াতি কাজ ইন্তেজামে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।