লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি আছে কি-না তা তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মুশতাক আহমেদ বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানহানিকর লেখা লিখতেন বলেও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, ‘এ জন্য তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটা মামলা ছিল। সর্বশেষ ২০২০ সালে দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলায় তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার মৃত্যুতে কারা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি আছে কি-না তা তদন্ত করা হবে।’ গতকাল শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর ২ নম্বর গেট মোড়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের নবনির্মিত কার্যালয় উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদ (৫৩) কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে কারাগারের ভেতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে প্রথমে কারা হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করেন। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আল জাজিরার প্রতিবেদন তৈরিতে জড়িত বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাংলাদেশে থেকে কারা এই মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছে সেটা নিয়ে তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় শক্তভাবে কাজ করছে।’ এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
উদ্বোধন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এই কার্যালয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। চট্টগ্রাম শহরের সুবিধাজনক স্থানে হওয়ায় পুরো জেলা তদারকিতেও সহজ হবে। সরকার বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক বিশ্বের অন্যতম একটি বাহিনীতে রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছে।’
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম, সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী, আবু রেজা নদভী, চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের আনোয়ার হোসেন এবং সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর প্রমুখ।
এদিকে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় আগামী ১ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো। গতকাল শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) শাহবাগে সমাবেশ ও অবরোধ শেষে এ কর্মসূচি দেয়া হয়। এর আগে সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শাহবাগ অবরোধ করে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। সমাবেশ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে কারাগারে লেখক মুশতাকের মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবি জানানো হয়। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যে ছাত্র-জনতার মশাল মিছিল করার ঘোষণা দেয়া হয়।