ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর আগে তার চিকিৎসায় কারো কোনো অবহেলা ছিল কি না তা খতিয়ে দেখতে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরী ও উম্মে হাবিবা ফারজানা। জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা যতটুকু জেনেছি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুশতাক আহমেদ বাথরুমে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাতে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর আগে তার চিকিৎসায় কারো কোনো অবহেলা ছিল কি না তা খতিয়ে দেখতেই অভ্যন্তরীণভাবে এ কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া তার মৃত্যুর ঘটনায় অন্য কোনো কারণ আছে কি না তা ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার পর চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা জানাবেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন লেখক মুশতাক আহমেদ (৫৩)। বৃহস্পতিবার কারাগারের ভেতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন শুক্রবার ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে দুপুরে পুলিশ তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে।
লেখক মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি:
গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের গাফিলতি ছিল কি না, তা খুঁজে বের করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব তরুণ কান্তি শিকদারকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে। এই কমিটির সদস্যরা হলেন গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালাম, ময়মনসিংহের কারা উপমহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির ও গাজীপুর জেলা কারাগারের সহকারী সার্জন ডা. কামরুন নাহার। কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব আরিফ আহমদকে। কমিটিকে চার কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, মুশতাক আহমেদ কারাগারে আসার পর তাঁর কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ অবহিত ছিল কি না, যদি থাকে সে বিষয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না, যদি না হয়ে থাকে তবে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর কারণ জানতে ‘প্রয়োজনে’ তদন্ত কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।