রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ অপরাহ্ন

শুল্ক ছাড়েও চালের দাম কমেনি, উল্টো বেড়েছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২ মার্চ, ২০২১

চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দিলেও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের ছাড়ের পর চালের দাম তো কমেইনি, উল্টো বেড়েছে। অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে প্রথমে চাল আমদানির শুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। পরে তা আরও কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। বাসমতি ও অটোমেটিক চাল বাদে সব ধরনের চাল আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে গত ১৭ জানুয়ারি সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে সই করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবি আর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

সরকার যখন চাল আমদানির শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়, সে সময় রাজধানীর বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের কেজি বিক্রি হচ্ছিল ৬০ থেকে ৬৪ টাকা। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের কেজি ছিল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা। মোটা চাল ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।
সরকার আমদানি শুল্ক কমানোর পর এক মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি বাজারে। উল্টো গত এক সপ্তাহে চালের দাম নতুন করে আরও বেড়েছে।
এখন খুচরা পর্যায়ে নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৭০ টাকা। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের কেজি ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। গরিবের মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার ওপর।
গত এক সপ্তাহে চালের দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বংলাদেশ’র (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে মিনিকেট ও নাজির বা সরু চালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মাঝারি মানের চালের দাম দশমিক ৯৪ শতাংশ কমেছে বলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
চালের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, গত এক মাসে কোনো ধরনের চালের দাম কমেনি। বরং সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তিনি বলেন, বাজারে এখন ৫০ টাকার নিচে কোনো চাল নেই। চালের দাম বাড়ায় আমাদের বিক্রি কমে গেছে। মোটা চালের ক্রেতা নেই বললেই চলে। বাজারে দাম বেশি হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ ওএমএস’র চাল কিনছেন।
চালের দাম নিয়ে একই ধরনের তথ্য দেন খিলগাঁও তালতলার চাল ব্যবসায়ী জানে আলম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে রশিদের ২৫ কেজির বস্তা ১ হাজার ৫৫০ থেকে ১ হাজার ৫৮০ টাকা বিক্রি করেছি। কিন্তু দাম বাড়ায় এক সপ্তাহ ধরে সেই চাল ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৬২৫ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, চাল আমদানি করার ক্ষেত্রে সরকার শুল্ক ছাড় দিলেও আমদানির চাল এখনো বাজারে এসে পৌঁছায়নি। আমদানির চাল এলে হয়তো চালের দাম কিছুটা কমবে। সহসা আমদানি করা চাল না এলে বৈশাখের আগে চালের দাম কমার সম্ভাবনা কম। চালের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁওয়ের ন্যাশনাল রাইসমিলের মালিক মোহাম্মদ হাসান রাজু বলেন, সরকার চালের দাম কমানোর ক্ষেত্রে খুবই আন্তরিক। কিন্তু চালের দাম কমাতে হলে শুধু শুল্ক কমালেই হবে না, ভোক্তাদের স্বার্থে কিছু সময়ের জন্য আমদানি শুল্ক শূন্য করতে হবে। সরকার ছাড় দেয়ার পর এখনো চাল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। এই শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করে দাম কমানো যাবে না।
তিনি বলেন, চাল আমদানি করতে গিয়ে আমদানিকারকদের অনেকগুলো কাজ করতে হয়। দুই দেশের (বাংলাদেশ ও যে দেশ থেকে আমদানি করা হয়) বিভিন্ন নিয়ম প্রতিপালন করে চাল আমদানি করতে হয়। সরকারের আমদানিকারকদের অসুবিধাগুলো শোনা উচিত। তিনি আরও বলেন, সব আমদানিকারক যে সৎ উদ্দেশ্যে আমদানি করে এটা বলা যাবে না। সব জায়গায় কিছু ব্যক্তিগত স্বার্থ অতিমাত্রায় থাকে। এমন আমদানিকারক যে বাংলাদেশে নেই, সেটা বলা যাবে না। এদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব সরকারের।
এই ব্যবসায়ী বলেন, চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের সমন্বয় থাকতে হবে। এ জন্য আমদানি ফ্লো বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। কিন্তু এখন চাহিদা বেশি, অপরদিকে প্রয়োজনের তুলনায় আমদানি কম। সব মিলে এখন ওভারঅল চালের দাম একটু বেশি। আমরা আশা করছি, দুই মাস পর চালের দাম কমে আসবে।
এদিকে বেসরকারিভাবে আমদানির জন্য বরাদ্দ দেয়া সব চাল আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে আনতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আমদানিকারকদের এই সময় বেঁধে দিয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর আগে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন শর্তে বেসরকারি পর্যায়ে মোট ৩২০ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়। চাল আমদানির শর্তে বলা হয়, বরাদ্দপত্র ইস্যুর সাত দিনের মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হবে। এ সংক্রান্ত তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিকভাবে ই-মেইলে জানাতে হবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা এক থেকে পাঁচ হাজার টন বরাদ্দ পেয়েছেন, তাদের এলসি খোলার ১০ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং ২০ দিনের মধ্যে বাকি চাল বাজারজাত করতে হবে। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান পাঁচ হাজার টনের চেয়ে বেশি চাল আমদানির বরাদ্দ পেয়েছে তাদের এলসি খোলার ১৫ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং ৩০ দিনের মধ্যে বাকি ৫০ শতাংশ চাল এনে বাজারজাত করতে হবে বলে শর্ত দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যারা ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঋণপত্র (লেটার অব ক্রেডিট-এলসি) খুলতে পারেনি, ইতোমধ্যে তাদের বরাদ্দপত্র বাতিল করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, কম দামে চাল আমদানি করতে না পারলে কীভাবে কম দামে বিক্রি হবে। ভারত থেকে চাল আমদানি করতে প্রতি কেজি ৪৪ টাকা পড়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের দেশের চাল নেই। বেশিরভাগই আমদানি করা চাল। তিনি বলেন, চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে অনেককে। আমার জানা মতে, তাদের অর্ধেকই চাল আমদানি করেনি। সরকার চাল আনার ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দিলে লাভ কি হবে? কেউ যদি আমদানি না করে, তার বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। আমদানি করবে কীভাবে, দাম তো বেশি। এখানে এনে যদি বিক্রি করতে না পারে, তাহলে কেন আমদানি করবে? আমদানির ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে- তা না হলে কেন আমদানি হচ্ছে না? তিনি আরও বলেন, সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে গেছে। সরিষার তেলের দাম বাড়তি। অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লে চালের দাম তো বাড়বেই। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব সরকারের। এ বিষয়টা এখন সরকারকেই চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com