কুড়িগ্রামের উলিপুওে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ফুল চাষিদের স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছে। ক্রেতা সংকটে বিক্রি করতে পারছেন না বাগানে উৎপাদিত ফুল। ফলে বাধ্য হয়ে ফুল তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে। বাগানে গেন্দা, চন্দ্র মল্লিকা, গোলাপ, প্রজাপতি, কচমচ, ডালিয়া, ক্যাপটাস, ঘাসফুল, এলোবেলা, রঙ্গন, বেলী, গন্ধরাজ ও হাসনা হেনা ফুলের চাষ হলেও করোনার প্রভাবে বিপাকে পরেছেন তারা। কৃষি অফিস ঘুরেও সরকারি সহযোগিতার অভিযোগ ফুল চাষিদের। উপজেলার পৌরসভাস্থ নারিকেলবাড়ি খামার গ্রামের আব্দুল মজিদ(৫০) বিশ বছর থেকে ফুল চাষ আর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। জীবনের শুরুতে অনেক সংগ্রাম ও সাধনায় বাঁচার পথ বেঁচে নেয় আব্দুল মজিদ। তার বড় ভাইয়ের হাত ধরে প্রবাস জীবন-যাপন করে মাত্র নয় মাস।প্রভাস জীবনের পর শুরু হয় আরেক জীবন। মানুষের প্রিয় হওয়ার ওঠার সুবাদে তৎকালিন উলিপুর ইউনিয়ন পরিষদের পর পর দু’বার সফল সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে উলিপুর পৌরসভা হওয়ায় আর নির্বাচনে অংশ নেননি তিনি। ১৯৯৬ সাল থেকেই স্বাধীন নার্সারির স্বত্তাধিকারি আব্দুল মজিদ। নারসারির শুরুতেই নানা জাতের কাঠ গাছ চাষ আর বিক্রি করতেন। জীবনের অর্ধেক সময় থেকে মানুষকে নানাভাবে সেবা দিতেন আব্দুল মজিদ। তিন সন্তান আর স্ত্রী নিয়ে সুখেই কাটে তার দিকাল। মাঝে মধ্যে নিজেই ভ্যান চালিয়ে শহরের অলিতে গলিতে ফুল বিক্রি করতেন। ধীরে ধীরে বয়স বেড়ে যাওয়ায় এখন একমাত্র ছেলে আলমগীরকে দিয়ে ভ্যান চালিয়ে গাছ বিক্রি করান। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় এক একর জমিতে ফুল চাষ করেন। প্রতি বছর বিভিন্ন জাতীয় দিবসে ও স্কুল-কলেজের গেটে গেটে ফুল বিক্রি করে পাঁচ জনের সংসার সুখেই চলে। গত ২০২০ সালের মার্চে বিশ্বে করোনা ভাইরাস দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় স্কুল কলেজ। তখন থেকেই ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। প্রতি বছর বৃক্ষ মেলায় অংশগ্রহন করে বেশ সম্মান কুড়ানো মানুষটি এখন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে স্বল্প পরিসরে ফুল চাষ করছেন। পাঁচ সদস্যের পরিবারের সবাই মিলে ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এক সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন ফুল চাষের জমিতে। কিন্তু করোনার প্রভাবে থমকে গেছে তার জীবন। এদিকে একই অভিযোগ করছেন উপজেলার ধামশ্রেণী ইউনিয়নের কাশিয়াগাড়ি গ্রামের ফুলচাষী নুরমোহাম্মদ। ৫০ সতাংশ জমি লিজ নিয়ে প্রথমে ৬হাজার টাকা দিয়ে ফুলচাষ শুরু করেন। তিনি বছওে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা আয় করতেন। কিন্তু করোনার কারণে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে বিপাকে পরেছেন তিনিও। সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় ফুলচাষী আব্দুল মজিদেও সাথে। তিনি বলেন, করোনার কারণে এনজিও থেকে ঋণ নেয়া টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। অতি কষ্টে জীবন-যাপন করলেও সরকারি কোন সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ পাইনি। ফুলচাষী নুরমোহাম্মদ বলেন, ফুলকে কেন্দ্র করেই আমাদের সব কিছু, অথচ ফুল বিক্রি করতে পারছি না। ফুল গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে, গাছ বাঁচিয়ে রাখার জন্য ফুল ছিড়ে ফেলে দিচ্ছি। জানি না কিভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করব। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া আর ঘুরে দাঁড়াতে পারব না।