গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিবিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণের হিরিক পড়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এইসব ভবন নির্মাণ করছে। অনুমোদন ছাড়াই অসংখ্য বহুতল ভবন তৈরি হচ্ছে গোটা শহর জুড়ে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে ঝুঁকিপূর্ণ শহরে রূপান্তরিত হবে গাজীপুর। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনও পরিকল্পিত নগরায়ন বাস্তবায়ন করতে পারেনি। শহরের নির্মাণ সেক্টর সবচেয়ে বেশি ঝুকিতে রয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভবন নির্মাণে অনুমোদনের দায়িত্ব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের আওয়তাধীন। রাজউকের লোকবল সঙ্কটে দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তাব্যক্তিদের উদাসীনতা ও অবৈধ সুযোগ সুবিধা নেয়ার প্রবণতা থাকার কারণে দিনদিন অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণে জনগণ উৎসাহিত হচ্ছে। সাবেক পৌর আইনকে মেনে অনেকেই ভবন নির্মাণ করছেন। কিন্তু সেই আইনে উল্লেখ ছিল অনুমোদনের মেয়াদ ৩ বছর। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ ৭ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও পুরোনো পৌর অনুমোদনে ভবন নির্মাণ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছু নামধারী কনসালট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার যারা একটি ভবনের নকশা তৈরির কাজ করেন তারাই নাকি সিটি কর্পোরেশনের কিছু কর্তা ব্যক্তিদেরকে মেনেজ করে স্বাক্ষরিত অনুমোদনপত্র ব্যবস্থা করে দেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় কোন ধরনের বৈধ ও অবৈধ অনুমোদন ছাড়াই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভবন নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছে। এমনি একটি অবৈধ নির্মাণাধীন বাড়ির মালিক মতিউর রহমান টঙ্গীর বড় দেওড়া মৃধাপাড়া এলাকায় ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবেশী বাড়ির মালিকের একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোন আইনের তোয়াক্কা করছেন না। প্রতিবেশী শামসুল হক মৃধা এই বিষয়ে আদালতে বিগত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ইং তারিখে ১৪৫ ধারায় আদালতে পিটিশন মোকদ্দমা দায়ের করেন। যাহার আদেশ মোতাবেক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্মাণ কাজ স্থিতিশীল অবস্থায় রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলেও মতিউর স্থানীয় রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন। অভিযোগকারী প্রতিবেশী শামসুল হক মৃধা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মতিউরকে ভবন নির্মাণে আইন মেনে কাজ করার জন্য গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-১ নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্লান বহিভূত নির্মাণ কাজের বিরুদ্ধে বিগত ১ মার্চ ২০২১ইং তারিখে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এ বিষয়ে মতিউর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাড়ি নির্মাণ কাজের বিষয়ে আপনি সাদিম ভাইয়ের সাথে কথা বলেন। প্লানের বিষয়টি সে জানে। সাদিম ভাই আপনার সাথে কথা বলবে। কথিত এই সাদিম হলো গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি। পাঠক তাহলে আর বুঝতে বাকি নেই এই ছাত্রলীগ নেতার ছত্রছায়ায় প্রভাব খাটিয়ে মতিউর রহমান অবৈধভাবে বাড়িটির নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র এড. আজমত উল্লা খান বলেন, একটি কুচক্রি মহল এধরনের জগন্য অপরাধের কাজ করে থাকতে পারে। যারা এ ধরনের কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করি। তিনি আরো বলেন, একটি আধুনিক সুপরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে হলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক এর আইন মেনে প্রত্যেকে ভবন নির্মাণ করতে হবে। এখনি এর প্রতিকারের ব্যবস্থা না করলে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে ভবনের মালিকগন। খুব শীঘ্রই গোটা শহর ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে এবং সামান্য ভূমিকম্প হলেই ভবনগুলো ধসে পড়ার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও সরকার হারাবে কোটি টাকার রাজস্ব। এ বিষয়ে একাধিক ভবন মালিকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সাময়িক ভাবে কাজ বন্ধ করে দিলে পরবর্তী সময় কিছু কর্তাব্যক্তি সাথে আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে মৌখিক অনুমোদন দেয়া হয়। এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-১ এর নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সোহরাব হোসেন বলেন, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবৈধ ভবনগুলোতে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। তবে লোকবল সমস্যার কারণে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।