ঢাকায় কোম্পানিভিত্তিক বাস প্রবর্তন
এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকায় কোম্পানিভিত্তিক বাসের প্রথম রুট চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। গত ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বাস রুট নিয়ে এক সভায় এ ঘোষণা দেন তিনি। তবে সময়মতো রুটটি চালু হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও কোম্পানিভিত্তিক বাস রুট চালুর কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। এখনো রুটটিতে চলাচলের জন্য বাস কোম্পানিই গঠন হয়নি। গড়ে ওঠেনি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। এ পরিপ্রেক্ষিতে ‘তাড়াহুড়ো’ নয়, সময় নিয়ে এবং সঠিকভাবে কাজটি সম্পন্ন করার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির সর্বশেষ সভায়ও পরীক্ষামূলক রুটটি এপ্রিলের প্রথম দিন চালু করা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র ফজলে নূর তাপস।
ঢাকায় কোম্পানিভিত্তিক বাস ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য ‘বাস রুট র্যাশনালাইজেশন’ কমিটি গঠন করে দিয়েছে সরকার। পদাধিকারবলে যার সভাপতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র। এ কমিটিই পরীক্ষামূলক রুটটি প্রবর্তনে কাজ করছে। রুটটির জন্য তিন কোম্পানির ২০৭টি বাস নিয়ে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব করেছেন বাসমালিকরা। এর মধ্যে রজনীগন্ধা পরিবহনের ১২২টি বাস, মিডলাইন পরিবহনের ৫২টি বাস ও মালঞ্চ ট্রান্সপোর্টের ৩৩টি বাস রয়েছে। বাসমালিকরা জানিয়েছেন, পরীক্ষামূলক রুটটিতে বর্তমানে কোনো বাস চলছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবহন মালিক সমিতি যে ২০৭টি বাসের তালিকা প্রস্তুত করেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই বেশ পুরনো। রঙচটা আর দুর্বল ফিটনেসের বাসগুলো পরিচালনার আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন মালিক সমিতির নেতারা। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে স্বল্প সুদে ১০০ কোটি টাকা ঋণ চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির অন্যতম সদস্য গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ্ উদ্দিন বলেন, ঋণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় আছে। ঋণ অনুমোদন হওয়ার পর মালিকরা তাদের বাসগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেবেন। এ কাজটি করতে কিছুদিন সময় লাগবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে ঋণ অনুমোদন ও বাসগুলো চলাচলের উপযোগী করে তোলা কিছুটা কঠিন বলে মন্তব্য করছেন তিনি।
ঋণ অনুমোদন ও বাসগুলো সংস্কার বা মেরামত ছাড়াও মেয়র ঘোষিত সময়ের মধ্যে পরীক্ষামূলক রুটটি চালু করতে আর কী কী প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, পরীক্ষামূলক রুটটিতে কোম্পানিভিত্তিক বাস পরিচালনা করার জন্য বাস-বে, টিকিট কাউন্টার, পার্কিংয়ের স্থানসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। কোথায় কী করতে হবে, তা আমরা এরই মধ্যে চিহ্নিত করে ফেলেছি। বিভিন্ন স্থানে কাজও শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর কাজ শেষ না করে রুট চালু করা হলে পরবর্তী সময়ে সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এজন্য তাড়াহুড়ো নয়, প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে কাজটি বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সময়মতো রুটটি চালু করার বিষয়ে আরো কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। ঘাটারচর-মতিঝিল-কাঁচপুর রুটের বিভিন্ন অংশ অন্য রুটের অনেক বাস ব্যবহার করে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক রুটটিতে অন্য বাসও ঢুকে পড়বে। এ জটিলতা এড়ানোর লক্ষ্যে বর্তমানে বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির সদস্যরা কাজ করছেন। রুটটিতে হিউম্যান হলার, সিএনজিচালিত অটোরিকশার মতো অসংখ্য ছোট গাড়িও যাত্রী পরিবহন করে। কোম্পানিভিত্তিক বাস রুট চালুর আগে এসব যানবাহনের মালিক বা চালকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। কর্তৃপক্ষও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে বলে জানিয়েছেন বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির সদস্যরা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকায় কোম্পানির ছয় রঙের বাস চলবে। আর পরীক্ষামূলক ঘাটারচর-মতিঝিল-কাঁচপুর রুটের বাসগুলো হবে সবুজ রঙের। রুটটি পরিচালনার জন্য গঠন করা হবে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। এ রুটটি থেকে আয়ের অর্থ কোম্পানির অংশীদারদের মধ্যে ভাগাভাগি করা হবে। চালক-শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেয়া হবে। কোনো ধরনের চুক্তিতে নয়, মজুরি নির্ধারণ হবে দৈনিক বা মাসিক হিসেবে। এ কোম্পানির কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে তা নির্ধারণে নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। রুটটির জন্য কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ২০ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ।