শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২১ অপরাহ্ন

রংপুরের বদরগঞ্জে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাড়ি বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ

নুর হাসান চান রংপুর :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১

মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভ’মিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বাড়ী বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের মুচিরহাট এলাকায়। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ন ২ প্রকল্প ‘ক’ শ্রেনীর ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের পূর্ণবাসনে গৃহপ্রদান নীতিমালা ২০২০ অনুসরন না করে যাদের নিজস্ব জমির উপর বাড়ী আছে সেই সকল পরিবারের নামে রেজিষ্ট্রেরী সহ ঘর বরাদ্দের তালিকা হওয়ায় গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ০৮ বীর মুক্তিযোদ্ধা একমাস পূর্বে (০২ ফেব্রুয়ারী) লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের মুচিরহাট এলাকায় আশ্রায়ন প্রকল্প ২ (‘ক’শ্রেনী) ভ’মিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ২৭টি বাড়ী নির্মিত হয়েছে।সম্প্রতী ওই ২৭টি বাড়ীর চাবি ও দলিল হস্তান্তর করতে গিয়ে মুচিরহাটে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভ’মিহীনদের তোপের মুখে পড়েন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সুইট। শেষে চাবি ও বাড়ীর দলিল হস্তান্তর না করেই ফিরে আসেন। গত বৃহস্পতিবার বীরমুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে সরেজমিনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের আকমল হোসেনের ছেলে আজিজুল হক(৩৫) থাকেন আধাপাকা বাড়িতে। তেলিপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে মোকছেদুল হকের নামে সরকারি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা দুই ভাই। দুই ভাইয়ের পৃথক বাড়ি আছে। পাঁচ শতক জমির ওপর মোকছেদুল হক পরিবার নিয়ে থাকেন। তিনি মাটির ঘরে থাকলেও পাশে ইট দিয়ে দুই রুম বিশিষ্ট ঘর তুলেছেন।কবিরাজপাড়া গ্রামের নুর বক্ত(৫০) ও আব্দুল মতিন(৩৫) সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। দুইজনের পৃথক মাটির বাড়ি আছে। তাদেরকেও ওই সরকারি বাড়ি দেওয়া হয়েছে। নুরবক্ত বলেন, আমি চাইনি, তৌশিলদার আমার নামটি দিয়েছেন। আর কেউ যদি কিছু দেয় সেটা কি না করা যায়। আব্দুল মতিনের বাড়ি-ঘর থাকলেও তিনি স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন ঢাকায়। মঙ্গলবার তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার বাবা আমিনুল বলেন, ছেলে ও ছেলের বউ ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। সেখানেই আছেন। ওই গ্রামের জহির উদ্দিনের ১০ শতক জমির ওপর চারটি মাটির ঘর আছে। আবাদি জমি ও গরুও আছে। তার নামেও ওই সরকারি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জহিরকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।প্রতিবেশি বলেন, জহির বারো মাসে বাড়ির চালের ভাত খান। তার বাড়ি ও জমি থাকার পরও কিভাবে ভূমিহীন বাড়ি পেলেন? ৮০ বছর বয়সী সুমাতি বালার বসতবাড়ী না থাকায় ৩০ বছর অন্যের বারান্দায় এক সন্তান নিয়ে ভিক্ষা কারে জীবিকা নির্বাহ করছেন তার ভাগ্যে ওই বাড়ি না জুটলেও বাড়ী পাচ্ছেন ওই ইউনিয়নে যাদের আবাদি জমি ও বসতবাড়ি আছে-এমন ব্যক্তিরা। আর এসব মানুষের নামে গৃহহীন বাড়ি বরাদ্দ করায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন ওই ইউনিয়নের আটজন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ(৮০) অভিযোগ করে বলেন, গোপীনাথপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ভূমিহীনদের তালিকা প্রণয়নে চরম দুর্নীতি করেছেন। তিনি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সঙ্গে যোগসাজস করে টাকার বিনিময়ে যাদের থাকার জন্য ইট ও মাটির বাড়ি-ঘর এবং আবাদী জমি আছে তাদেরকে সরকারি বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছেন। এমন ১২জনের সার্বিক তথ্য ছক আকারে এক মাস আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু তিনি তদন্ত না করেই ওই ব্যক্তিদের বাড়ির চাবি ও দলিল হস্তান্তর করতে এসেছিলেন। আমরা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছি। তিনি চাবি-দলিল হস্তান্তর না করেই উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে চলে গেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের জন্য স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছেন। আর এই বাড়ি ভূমিহীনরা না পেয়ে অন্যরা পাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। গোপীনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন সেভেনটি বলেন, ‘ভূমিহীনদের তালিকা দুই বছর আগে উপজেলায় দিয়েছি। সেই তালিকা যাচাই-বাছাই করেছেন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা। ওই যাচাই-বাছাইয়ে আমাকে রাখা হয়নি। এ কারণে আমি অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।’ গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ভুমি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘যারা বাড়ি পাচ্ছেন তাদের সবার ১০ শতকের নিচে জমি রয়েছে। ম্যানুয়াল অনুয়াযী তারা ভুমিহীন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাড়ি-ঘর থাকলেও তারা ভূমিহীন।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান বলেন, ওই ইউনিয়নে বাড়ি বরাদ্দে অনিয়মের বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো অভিযোগ পাইনি। চাবি ও দলিল হস্তান্তর করতে গিয়ে জানতে পারি। পরে হস্তান্তর না করেই চলে আসি। তিনি বলেন, আমি এ উপজেলায় যোগদানের আগেই এই তালিকা তৈরী করেছেন চেয়ারম্যান-মেম্বাররা। সঠিক তদন্তের জন্য উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) কে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অনিয়ম পাওয়া গেলে পরবর্তীতে প্রকৃত ভূমিহীন খুঁজে বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রয়োজনে দলিলও সংশোধন করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com