লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার রতনপুর গ্রামের বৃদ্ধ জালাল আহাম্মদ(৭২) ও তার স্ত্রী শামছুন্নাহার(৬০) জরাজীর্ণ একটি ঘরে কোনোমতে জীবনযাপন করছেন। এরমধ্যে জালাল আহাম্মদ পঙ্গু এবং শামছুন্নাহারও বয়সের ভারে এখন স্বাভাবিকভাবে চলাফেলা করতে পারছেন না। মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশের একটি নাল জমিতে চাষাবাদ করে তারা কোনো রকমে ভরনপোষন চালাতেন। সম্প্রতি অসহায় এই দম্পতির মালিকানাধিন ও ভোগদখলীয় সেই ফসলি জমিটি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করেছেন তাদের প্রতিবেশী আমেনা বেগম। তিনি জমিটির মালিকানা দাবি করে বৃদ্ধ এই দম্পতিকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। যেকারণে বিগত প্রায় ৩ বছর ধরে চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে ওই জমিতে। এখন চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বৃদ্ধ ওই দম্পতি। গত বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) ভুক্তভোগী জালাল আহাম্মদের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি জানান, ১৯৬০ সালে তিনি এই জমিটি ক্রয় করে মালিকানা লাভ করেন। এরপর থেকে তিনি ভোগদখলে রয়েছেন। পরবর্তীতে তার আত্মীয় স্বজন থেকে বিভিন্ন দাগে জমি ক্রয় করেছিলেন আমেনা বেগমের স্বামী হোসেন আহাম্মদ। এখন সেই সম্পত্তির ঠিকঠাক দখল বুঝে না পেয়ে বৃদ্ধ জালাল আহাম্মদ ও তার স্ত্রী শামছুন্নাহারকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. আফজাল হোসেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর একটি সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। যেখানে উল্লেখ রয়েছে, ১৯৯৬ সালে জালাল আহাম্মদ তার জমিটি হোসেন আহাম্মদের নিকট বিক্রি করে দেন। সেই থেকে হোসেন আহাম্মদ গং জমিটির ভোগ দখলে রয়েছেন। তবে ওই বছরের ২০ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো মো. আবুল কাশেম সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আরও একটি সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। যেখানে কাগজপত্র ও ভোগদখলে নালিশি জমিটি জালাল আহাম্মদের মালিকানাধিন বলে উল্লেখ করা হয়। এদিকে আমেনা বেগম জানান, ১৯৯৬ সালে তার স্বামী হোসেন আহাম্মদ জমিটি ক্রয় সাফকবলা দলিলের মাধ্যমে মালিকানা লাভ করেন। সেই থেকে জমিটি তাদের দখলে ছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে তার স্বামী হোসেন আহম্মদ, দেবর এবং বড় দুই ছেলের মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েন তারা। এই সুযোগে জালাল আহাম্মদের ছেলেরা জমিটি জোরপূর্বক দখল করে নেন। পরবর্তীতে কোনো উপায় না পেয়ে আইনের আশ্রয় চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন আমেনা বেগম। স্থানীয়রা বলছেন, মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরাজমান থাকবে। তাই প্রকৃত দলিল ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে শিগগিরই মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। তাহলে ছোট্ট এই জমিটুকু নিয়ে হানাহানি ঘটার আশঙ্কা দূর হবে।