শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
মাধবদীতে লোডশেডিং ও গরমে ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে চার্জার ফ্যানের বৃষ্টি প্রার্থনায় অঝোরে কাঁদলেন বরিশালের মুসল্লিরা আদিতমারীতে গ্রাম আদালত ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্মশালা নওগাঁয় বোরো ধানের সোনালী শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন ছড়ার পানিই ভরসা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর চকরিয়ায় একাধিক অভিযানেও অপ্রতিরোধ্য বালুখেকো সিন্ডিকেট রবি মওসুমে নওগাঁ জেলায় ৮৮ হাজার ১১০ মেট্রিকটন ভূট্টা উৎপাদনের প্রত্যাশা কটিয়াদীতে প্রচন্ড তাপ প্রবাহ, বৃষ্টির জন্য সালাতুল ইসস্তিকা বরিশালে দাপদাহে স্বাস্থ্য সুরক্ষার্থে শেবাচিম হাসপাতালে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু কালীগঞ্জে রাতের অন্ধকারে কৃষি জমির মাটি লুট

বেশি মাংস উৎপাদনকারী ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি নিষিদ্ধ কেন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১

সম্প্রতি ঢাকার বিমানবন্দরে ত্রিশটির মতো আমদানি করা গরু বাজেয়াপ্ত করার পর জানা যাচ্ছে, আমদানি নিষিদ্ধ এই ব্রাহমা জাতের গরুগুলো মিথ্যা তথ্য দিয়ে আনা হচ্ছিলো। ব্রাহমা জাতের গরু বাংলাদেশে উৎপাদন ও পালন নিষিদ্ধ না হলেও ২০১৬ সালে এক নীতিমালা দিয়ে এই জাতটিকে আমদানি নিষিদ্ধের তালিকায় ঢোকানো হয়েছে। ফলে ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে আটক করা ব্রাহমা গরুগুলিকে আনা হচ্ছিলো ফ্রিজিয়ান জাত বলে ঘোষণা দিয়ে।

আইন বহির্ভূতভাবে আমদানি করায় গরুগুলোকে বাজেয়াপ্ত করে সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যদিও এই ব্রাহমা জাতের উৎপাদন বাড়ার কারণে বাংলাদেশে মাংসের উৎপাদন বেড়েছে এবং চাহিদা মেটানো সহজ হয়েছে। এই জাতের গরু পালন সহজ ও লাভজনক, আর রোগ বালাইও অন্যান্য জাতের চেয়ে কম হওয়ায় স্থানীয় অনেক খামারি এই গরু আমদানি করতে চান।
ব্রাহমা জাতের গরুর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য: এই মুহূর্তে বাংলাদেশে যেসব ব্রাহমা জাতের গরু রয়েছে তার প্রায় সবই কৃত্রিম পদ্ধতিতে প্রজনন করা গরু। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. ভবতোষ কান্তি সরকার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রাহমা জাতের গরুর সিমেন বা বীজ বা শুক্রাণু এনে সরকার কয়েকটি জেলায় স্থানীয় খামারিদের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে এই জাতের গরু উৎপাদন শুরু করে।
বাংলাদেশে ২০০৮ সালে প্রথম প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ‘বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রাহমা উৎপাদন কর্মসূচি শুরু করে। শুরুতে ১১টি উপজেলায় তিন বছরের জন্য এ কর্মসূচি চালু হলেও এখন প্রায় ৫০টির মতো জেলায় চলছে এ কর্মসূচি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. সরকার বলেছেন, ব্রাহমা গরু মূলত মাংসের জাত বলে পরিচিত। দুধের জন্য এই গরুর তেমন খ্যাতি নেই। ব্রাহমা গরু দেখতে অনেকটাই দেশি গরুর মতো, কিন্তু আকৃতিতে বেশ বড় হয়। এই গরুর মাংসের স্বাদ দেশি গরুর মতো। এর গায়ে চর্বি কম হয়, যে কারণে পুষ্টিগুণ বেশি।
প্রাণী পুষ্টি ও জেনেটিক্স বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাহমা গরুর আদি নিবাস ছিল ভারতে। কিন্তু বর্তমানে যেসব ব্রাহমা গরু বাংলাদেশ, ভারত কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যায় সেগুলো মূলত ব্রাহমার সিমেন বা শুক্রাণু দিয়ে কৃত্রিম পদ্ধতিতে জন্ম নেয়া শংকর জাতের গরু। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিম্যাল নিউট্রিশন, জেনেটিক্স অ্যান্ড ব্রিডিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল-নূর মোহাম্মদ ইফতেখার রহমান বলেছেন, ব্রাহমা জাতের গরু নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে, যে কারণে এই জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এখনো চূড়ান্ত কথা বলা যায় না।
তবে সাধারণভাবে ব্রাহমা গরুর জনপ্রিয়তার প্রধান কারণের মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়—এর উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীলতা, দীর্ঘ জীবন এবং ক্রস-ব্রিডিংয়ে উচ্চফলন।
সাধারণত একটি পূর্ণবয়স্ক ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের ওজন ৮০০ কেজি থেকে ১০০০ কেজির বেশি হতে পারে, আর একটি পূর্ণবয়স্ক ব্রাহমা জাতের গরুর ওজন হবে ৫০০কেজি থেকে ১০০০ কেজি। তীব্র গরমে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় ব্রাহমা গরু সুস্থ-স্বাভাবিক থাকতে পারে।
সাধারণত একটি ব্রাহমা গরু ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো দীর্ঘ জীবন পাওয়ার নজির আছে। এছাড়া উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল হবার কারণে ব্রাহমা জাতের গরুর রোগবালাই অনেক কম হয়। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আল-নূর মোহাম্মদ ইফতেখার রহমান বলেছেন, মাংস বেশি হবার কারণে বাংলাদেশে দ্রুতই জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই জাতের গরু। কোরবানির সময় বাজারে অস্বাভাবিক দাম হাঁকানো গরুগুলো মূলত এই ব্রাহমা জাতেরই গরু।
বাংলাদেশের কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ব্রাহমা জাতের গরু নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। সেগুলোর ফলাফল জানা গেলে আগামী দিনে এ জাতের গরুর উৎপাদন দেশে আরো বাড়বে।
কেন নিষিদ্ধ করা হলো ব্রাহমা গরুর আমদানি? বাংলাদেশে যতো পশু কোরবানি হয়, এক সময় তার একটা বড় অংশ আসতো ভারত থেকে। কিন্তু ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধে সীমান্তে কড়াকড়ি দেয়। যে কারণে এক পর্যায়ে দেশিয় পর্যায়ে মাংসের চাহিদা পূরণ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. সরকার বলেছেন, সেসময় দেশিয় মাংসের চাহিদা পূরণে সরকার ব্যাপকভাবে ব্রাহমা গরু উৎপাদনের দিকে যায়।
তিনি বলেন, ব্রাহমা জাতের গরু পালন খামারিদের জন্য সহজ এবং লাভজনক হওয়ায়, আর রোগ বালাইও অন্যান্য জাতের গরুর চেয়ে কম হওয়ায় স্থানীয় খামারিদের কাছে এই গরু অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে গরুর মাংসের চাহিদা একটি বড় অংশ আসছে ব্রাহমা জাতের গরুর মাংস থেকেই। কিন্তু ২০১৬ সালে সরকারের কৃত্রিম প্রজনন নীতিমালার অধীনে বেসরকারিভাবে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে খামারিদের মাধ্যমে ব্রাহমা গরু আমদানি নিষিদ্ধ করে।
কারণ ব্যাখ্যা করে ডা. সরকার বলেছেন, এখন খামারিরা সরকারের কাছ থেকে সিমেন নিয়ে প্রজনন ঘটাচ্ছে, কিন্তু আমদানির অনুমতি পেলে খামারিরা ব্যাপক হারে এই গরু উৎপাদন করবে। তিনি বলেন, কিন্তু এই জাতের গাভী তার আকৃতি অনুযায়ী অনেক দুধ দেয় না। এখন খামারিরা যদি ব্যাপক হারে ব্রাহমা উৎপাদন করে তাহলে দেশে গরুর দুধের উৎপাদন একেবারেই কমে যাবে। মূলত সেই জন্যই বেসরকারি পর্যায়ে ব্রাহমা গরু আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারের আশঙ্কা ব্যাপক হারে ব্রাহমা গরু উৎপাদন হলে হোলস্টেইন জাতের বা ফ্রিজিয়ান জাতের গরুর উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে খামারিরা। এই জাতের গরু দুধের উৎপাদনের জন্য খ্যাত। বাংলাদেশে দুগ্ধ উৎপাদন খাতকে সুরক্ষা দেবার জন্যই মূলত নিষিদ্ধ করা হয়েছে ব্রাহমা জাতের গরুর আমদানি। খবর: বিবিসি বাংলা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com