দেশে ভোক্তার অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। দেশের ১৬ কোটি ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে প্রতিষ্ঠানটির জনবল মাত্র ২০৮ জন। এর মধ্যে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে ১০৮ জন। শুধু রাজধানীর ২ কোটি ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে মাত্র ৫ জন কর্মকর্তা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনবল না থাকায় প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কোনো অভিযান পরিচালনার পর ফলোআপ করা সম্ভব হয় না। এতে প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে ভোক্তা অধিকার। যার সুবিধা নিচ্ছে মুনাফাভোগী একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এমন প্রেক্ষাপটেই সারা বিশ্বের মতো আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস।
দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার আগের মেয়াদে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ প্রণয়ন করেছে, যা দেশের ভোক্তা সাধারণের অধিকার সমুন্নত রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের জনগণ এর সুফল পেতে শুরু করেছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
দিনটি ঘিরে সারা দেশে লিফলেট বিতরণ থেকে শুরু করে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করবে অধিদফতর। এছাড়া ভোক্তার অভিযোগ জানানো সহজ করার লক্ষ্যে ভোক্তা হটলাইন নম্বর (১৬১২১) উদ্বোধন করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বিদ্যমান কাঠামোতে দেখা যায়, ২৪০ জন জনবলের মধ্যে বাজার তদারকির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন মহাপরিচালক ও দু’জন পরিচালক আছেন। এছাড়া মাঠপর্যায়ে কাজের জন্য প্রধান কার্যালয়সহ বিভাগীয় কার্যালয়ে মোট ১১ জন উপপরিচালক আছেন।
সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন ৮৬ জন। পরীক্ষক আছেন ৩ জন। অভিযোগ গ্রহণকারী রয়েছেন ৩ জন। নমুনা সংগ্রাহক ২ জন। সব মিলে দেশের ১৬ কোটি ভোক্তার অধিকার রক্ষায় মাঠপর্যায়ে সরাসরি কাজ করছেন মাত্র ১০৮ জন।
জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)-এর একটি সূত্র জানায়, ভোক্তা অধিকার রক্ষার জন্য একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু আইন প্রয়োগ করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক যে সক্ষমতা, তা বৃদ্ধি করা হয়নি। ফলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের জন্য শুধু মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও জরিমানা করা হচ্ছে, যা পর্যাপ্ত না। আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক জনবল বাড়িয়ে শক্তিশালী করতে হবে। তা না হলে সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের প্রতারিত করেই যাবে।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একজন উপপরিচালক বলেন, কিছু পদ এখনও খালি আছে। প্রায় ২ কোটি মানুষের ঢাকা মহানগরীতে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন উপপরিচালকসহ মোট ৫ জন কর্মকর্তা আছেন। এছাড়া ভোক্তা অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে অল্পসংখ্যক কর্মকর্তা তদারকির কাজ করছেন, যা একেবারেই অপ্রতুল। তিনি আরও বলেন, নকল ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে তদারকি করতে হবে। শহরে নিবিড় মনিটরিংয়ের কারণে ভেজালের আগ্রাসন অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্রামগঞ্জে নিয়ে গেছে। এজন্য উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অফিস প্রয়োজন, যাতে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা যায়। অধিদফতরের পক্ষ থেকে ২ হাজার ৩০৫ জন জনবলের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০৬ জনবল অনুমোদন করেছে জনপ্রশাসন। এরপর কয়েক ধাপ পার হয়ে কতজন জনবল দেয়া হয়, তার অপেক্ষা করতে হবে।