বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে সরকার। অনুষ্ঠানমালার ১০ দিনের মধ্যে পাঁচদিন বিদেশি অতিথিরা থাকবেন। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের প্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন। এ দিনগুলোর অনুষ্ঠান বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে রাত ৮টায় শেষ হবে। প্রতিদিন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে। এ পাঁচদিনের অনুষ্ঠানে নির্ধারিত ৫০০ জন দর্শক থাকতে পারবেন। অনুষ্ঠানের আগে তাদের কোভিড টেস্ট করাতে হবে। টেস্টের কার্যকারিতা থাকবে ৪৮ ঘণ্টা। টেস্টের জন্য পাঁচটি সেন্টারও ঠিক করে দেয়া হয়েছে।
‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ২৬ মার্চ পর্যন্ত জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে এ অনুষ্ঠান হবে। এ সময় দেশি-বিদেশি ভিভিআইপি অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্লকরেইড শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এছাড়া ভিভিআইপি অতিথিদের মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গমনাগমন, উৎসবে যোগদানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আশপাশ এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। গত সোমবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে শিক্ষাবৃত্তি অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, আগামী ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে পাঁচ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বাংলাদেশে আসবেন। তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। ১৭ থকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত খুব বেশি প্রয়োজন না হলে চলাচল সীমিত করার অনুরোধ করা হচ্ছে। এ কদিন রাজনৈতিক দলগুলোকে কোনো কর্মসূচি না দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান আইজিপি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিভিআইপি অতিথিদের মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গমনাগমন, উৎসবে যোগদানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আশপাশ এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিদেশি অতিথিরা থাকবেন সোনারগাঁও হোটেলে। অহেতুক আড্ডা, গণজমায়েত বন্ধের পাশাপাশি সন্ত্রাসী কার্যক্রম যাতে না হয় সেজন্য চালানো হচ্ছে ব্লকরেইড।
ডিএমপি রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপির পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী পুলিশ কাজ করছে। রমনা এলাকায় যাতে মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তীতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা হিসেবে ব্লকরেইড চালানো হচ্ছে।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব-২ এর পক্ষ থেকে স্পেশাল পেট্রোল এবং গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। আশপাশের এলাকায় জঙ্গি সংগঠনগুলো কোনো কিছু যাতে না ঘটাতে পারে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের হুমকি নেই। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও যদি কোনো ধরনের তথ্য থাকে তাহলে তিনি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। গত রোববার (১৪ মার্চ) মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার (পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার বিষয়ে কম্প্রোমাইজের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে ভিভিআইপি নিরাপত্তার যে প্রটোকল রয়েছে সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। আসন্ন উৎসবে কোনো নিরাপত্তার ঝুঁকি নেই। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহ্বান জানান ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার।
তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনকে সামনে রেখে যারা মোদিবিরোধী মিছিল-মিটিং করছে কিংবা করবে তাদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান চলাকালে রাজনৈতিক কর্মসূচি না দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত ডিএমপি কমিশনার বলেন, ভিভিআইপিরা আসবেন তাই রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি না দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, অনুষ্ঠান চলাকালীন ১৭ থেকে ২৬ মার্চ রাস্তায় চলাফেরার ক্ষেত্রে কিছুটা ট্রাফিক সমস্যা হতে পারে। এ জন্য নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিস-আদালত কিংবা পরীক্ষার জন্য বের হওয়ার অনুরোধ করছি। রাষ্ট্রের সম্মানের কথা চিন্তা করে জনগণের এটুকু স্যাক্রিফাইস করতে হবে। এসবি প্রধান আরও বলেন, রাজধানীর সড়কগুলোতে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ সড়কে যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। আসন্ন উৎসবে বিদেশি অতিথিদের আমন্ত্রণ উপলক্ষে কোনো কোনো সড়কে চলাচলে কিছুটা বিঘœ হবে। নগরবাসীকে কোথাও যেতে হলে নির্ধারিত সময়ের কিছুটা আগে বের হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।