শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

ইসলামী ব্যাংকের কদর বাড়ছে

আবু নুসাইবা মুহাম্মাদ নূরুন্নবী
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১

পুঁজিবাদী ব্যাংকব্যবস্থার সাথে ইসলামী আকিদার সঙ্ঘাত ব্যাংকিংয়ের সম্পদভিত্তিক লেনদেন বৈশিষ্ট্যের কারণে বিশ^ময় ইসলামী ব্যাংকিংয়ের কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই জনপ্রিয়তার কারণে এক দিকে যেমন নতুন নতুন ইসলামী ব্যাংক ও ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে অন্য দিকে তেমনি প্রচলিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও তাদের বিদ্যমান খোলনলচে পাল্টে ইসলামী অবয়ব ধারণ করছে।
রূপান্তরের কাজটি নেহায়েত সহজ নয়। কিন্তু ঈমান যদি খাঁটি হয়, আন্তরিকতায় যদি খাদ না থাকে তবে তা কঠিনও নয়। আল্লাহ তায়ালা বলছেন : যে তাকওয়ার পথ অবলম্বন করবে আল্লাহ তার জন্য কোনো না কোনো উপায় বের করে দেবেনই এবং তাকে এমন উৎস হতে রিজিক দান করবেন যা তার কল্পনায়ও আসেনি (সূরা তালাক, আয়াত : ২-৩)। যে তাকওয়ার পথ অবলম্বন করবে আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেবেন (সূরা তালাক)। আল্লাহ তায়ালা ইসলামের জন্য যার বক্ষ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন সে তো তার রবের আলোর পথেই রয়েছে (সূরা জুমার, আয়াত-২২)।
এই লেখায় একটি প্রচলিত ব্যাংককে ইসলামী ব্যাংকে রূপান্তরের প্রক্রিয়া, কৌশল ও করণীয় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এখানে ইসলামী ব্যাংক বলতে ওই সব প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়েছে যারা তাদের সব কার্যক্রমে ইসলামী শরিয়তের নীতি ও প্রবিধি অনুসরণ করে থাকে।
একটা ব্যাংক তার বিদ্যমান মালিক পক্ষের দ্বারা যেমন রূপান্তরিত হতে পারে তেমনি বাইরের কেউ ব্যাংকটি কিনে নিয়েও রূপান্তর করতে পারেন। ব্যাংকটি আগে যে পদ্ধতিতে আমানত সংগ্রহ করত ও বিনিয়োগ দিত উভয় পদ্ধতিই এই রূপান্তরের কারণে পরিবর্তন হবে অথবা প্রভাবিত হবে।
রূপান্তরের আগের দেনা ও পাওনার কী হবে তা নিয়ে এ লেখায় আলোচনা করা হয়েছে। ব্যাংকটা যেহেতু আগে সুদভিত্তিক ছিল সেহেতু তার হাতে এমন দেনা ও পাওনা থাকতে পারে যা শরিয়াহ সম্মত নয়। এসব অননুমোদিত দেনা-পাওনার ব্যাপারেও এখানে আলোচনা করা হয়েছে। আবার একটি ব্যাংক সুদভিত্তিক হলেও তার এমন কিছু কার‌্যাবলি রয়েছে যা শরিয়তে অবৈধ নয়। এসব হালাল আইটেম এখানে আলোচিত হয়নি। কারণ এগুলো অব্যাহত রাখায় শরিয়তের কোনো আপত্তি নেই। যেমনÑ ডিডি, টিটি ও পে-অর্ডার ইস্যু করা, রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা, চেক কালেকশন করা, ডেবিট কার্ড সেবা দেয়া ইত্যাদি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, এই রূপান্তর প্রক্রিয়ার সব কাজ হতে হবে শরিয়াহ সম্মত। আর রূপান্তর পরবর্তী প্রতিটি লেনদেন যে শরিয়াহর নীতিমালা অনুযায়ী হতে হবে তা বলাই বাহুল্য। রূপান্তরের আগে সম্পাদিত শরিয়াহ অননুমোদিত লেনদেন এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। একান্ত বাধ্য না হলে এসব লেনদেন বন্ধে ও নিষ্পত্তিতে গড়িমসি করা ঠিক হবে না।
রূপান্তরকামী ব্যাংককে বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তবতা অনুযায়ী তথা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। রূপান্তরকালীন বাস্তবতা তথা বর্তমান করোনা মহামারী ঘটিত অর্থনৈতিক মন্দা ও সরকার ঘোষিত বিনিয়োগ ও আমানতের মুনাফা সংক্রান্ত নীতিমালার কারণে ¯েপ্রড কমে যাওয়া (নয়-ছয় নীতিমালা) ইত্যাদি ঘটনাবলি বিবেচনায় রেখেই পদক্ষেপ নিতে হবে। এমন পদক্ষেপ নেয়া যাবে না যাতে শরিয়তের অনুসরণ করতে গিয়ে শেষে ব্যাংকটাই ব্যর্থ হয়ে যায়। তাতে নিন্দুকরা ইসলামকে দোষ দেয়ার ওসিলা পেয়ে যাবে।
কোনো ব্যাংক যদি রূপান্তর কাজে ধীরে চলার নীতি অবলম্বন করতে চায়-শরিয়তের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য লেনদেন এখনই বন্ধ করতে প্রস্তুত না থাকে এমন ব্যাংককে এখনই ইসলামী ব্যাংক বলা যাবে না। যেমন- বাংলাদেশের যমুনা ব্যাংক লিমিটেড। তারা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের সাথে রূপান্তরের অনুমোদন পেয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে, তারা এখনই রূপান্তরে যেতে চাচ্ছে না। সরকারেরও উচিত নয় তাকে ইসলামী ব্যাংক বলে স্বীকৃতি দেয়া যতক্ষণ না সে রূপান্তর প্রক্রিয়া শেষ করছে। এখানে শেয়ারহোল্ডারদের উচিত হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রূপান্তর প্রক্রিয়া শেষ করে পাপের শৃঙ্খলমুক্ত হওয়া। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ : তোমরা স্বীয় রবের ক্ষমার দিকে আর ওই জান্নাতের দিকে দ্রুত ছোটো, যেই জান্নাত আকাশরাজি ও জমিনের সমান বিস্তৃত। এটি প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য (সূরা আল-ইমরান, আয়াত : ১৩৩)।
রূপান্তর প্রক্রিয়া সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য ব্যাংককে কিছু পূর্বপ্রস্তুতিমূলক কাজ করতে হবে। যেমন-রূপান্তরকর্মে ব্যাংক কোন পদ্ধতিতে অগ্রসর হবে সে ব্যাপারে একটি কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে কী কী লাগবে তার একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। বিদ্যমান সুদভিত্তিক লেনদেনসমূহের বিকল্প ইসলামী পদ্ধতিসমূহ কী হবে তা আগেই ঠিক করে নিতে হবে। সর্বোপরি, এ কাজ সম্পাদনের উপযুক্ত একদল লোক তৈরি করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : যে কাজ উত্তম পদ্ধতিতে সম্পাদিত হয় তাই আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়।
রূপান্তর প্রক্রিয়ার প্রয়োজনে ব্যাংককে কিছু প্রশাসনিক উদ্যোগ নিতে হবে। যেমনÑ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ব্যাংকের অপারেটিং লাইসেন্স পরিবর্তন ও সংশোধন করিয়ে নিতে হবে; ইসলামী ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংযুক্ত করে যথাযথ উপায়ে ব্যাংকের সঙ্ঘস্মারক ও সঙ্ঘবিধি সংশোধন করে নিতে হবে। এ জন্য আদালতে যেতে হতে পারে। সঙ্ঘবিধি ও সঙ্ঘস্মারক সংশোধনকালে সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে যে, ইসলামী ব্যাংকিংয়ের চেতনাবিরোধী কোনো উপাদান যেন তাতে অবশিষ্ট না থাকে। রূপান্তরের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো এবং তার কর্মচারী পদায়ন পদ্ধতি ও কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা যথাযথ পদ্ধতিতে সংশোধন করে নিতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com