শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৪ অপরাহ্ন

মওদুদের মরদেহ নিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৯ মার্চ, ২০২১

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মরদেহ গ্রহণ করতে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ দৃশ্যের অবতারণা হয়।
এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মওদুদ আহমদের নামে ৩২টি হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়েছে। তিনি দক্ষ একজন রাজনীতিক ছিলেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের চলে যাওয়া দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তার চলে যাওয়া শুধু বিএনপি নয় সমগ্র জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা গণতান্ত্রিক আন্দোলন জোরদার করে পূরণের চেষ্টা করা হবে।
এসময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বরকত উল্লাহ বুলু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদীন ফারুক, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ জনি, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, প্রকৌশলী মো. ইশরাক হোসেন, তাবিথ আউয়াল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক উপ রাষ্ট্রপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মরদেহ ঢাকায় এসে পৌঁছেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার মরদেহ নিয়ে ঢাকায় পৌঁছান পরিবারের সদস্যরা। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিমানবন্দরের বাইরে মওদুদ আহমদের মরদেহ গ্রহণ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।
শায়রুল কবির খান জানান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মরদেহ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে দেশে এসে পৌঁছেছে। বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে তার মরদেহ।
পরদিন শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের সাধারণ জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। পরে সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টে তার প্রথম নামাজে জানাজা এবং সকাল ১১টায় নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে হেলিকপ্টারে তার মরদেহ নোয়াখালীতে নেয়া হবে।
দুপুর আড়াইটায় নোয়াখালীর কবিরহাট ডিগ্রি কলেজ মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে এবং বিকেল ৪টায় বসুরহাট কোম্পানীগঞ্জ সরকারি মুজিব মহাবিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা হবে, সাড়ে ৫টায় নিজ বাসভবনের (মানিকপুর কোম্পানিগঞ্জ) সামনে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
এদিকে মওদুদ আহমদের মৃত্যু বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারাদেশে শোক দিবস পালন করেছে বিএনপি। এ উপলক্ষে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করুন ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় মওদুদ আহমদের। ৮১ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন।
১৯৪০ সালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ করে তিনি যুক্তরাজ্যে ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল ডিগ্রি নেন। পরে দেশে ফিরে যুক্ত হন আইন পেশায়। মওদুদ আহমদ তার রাজনৈতিক জীবনে কখনো নন্দিত, কখনো নিন্দিত হয়েছেন। আলোচনায় ছিলেন পুরো রাজনৈতিক জীবনে। রাজনৈতিক নানা বাঁক বদলের সাক্ষী ছিলেন এই নেতা। কবি জসীমউদ্দীনের জামাতা ব্যারিস্টার মওদুদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মপক্ষ সমর্থন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গেও ছিলেন মওদুদ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে প্রথম পোস্ট মাস্টার জেনারেল করা হয়।
পরে দেশের প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগ দেন মওদুদ। বিএনপি গঠনে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৭৭-৭৯ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করলে মওদুদ আহমদও দলের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ১৯৮১ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমান নিহত হন এবং এক বছরের ভিতর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালে এরশাদ সামরিক শাসন জারি করার পর বিশেষ সামরিক আদালতে ১০ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছিলেন এই রাজনীতিক। ১৯৮৫ সালে সে দন্ড মাথায় নিয়েই এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতি হন মওদুদ আহমদ। এরশাদের পতনের পর ১৯৯৬ পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টিতে ছিলেন। পরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে খালেদা জিয়া সরকারের আইনমন্ত্রী হন।
মওদুদ আহমদ বাংলাদেশের প্রথম পোস্টমাস্টার জেনারেল ছিলেন। মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা জসীমউদ্দীন পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের মেয়ে। পাঁচবার মওদুদ আহমদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেওয়া বগুড়া-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com