মহামারি করোনার সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বিশেষ কর্মসূচি নিয়ে আবারও মাঠে নামছে পুলিশ। গতকাল রোববার (২১ মার্চ) থেকে ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশেই পুলিশ সদস্যরা মাঠে থাকবেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) করোনার দ্বিতীয় ধাপ মোকাবিলায় দেশব্যাপী পুলিশের উদ্যোগ অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ করোনা রোধে ‘মাস্ক পরার অভ্যাস, করোনামুক্ত বাংলাদেশ’ এই কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেন, সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরতে হবে, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে, প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। জনসমাগম বা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় গেলে সেখান থেকে বাসায় ফিরে কাপড় খুলে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনগণকে মাস্ক পরতে বাধ্য করা হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আমরা ঠিক ‘বাধ্য’ কথাটা বলছি না। আমরা তাদের প্রেষণা ও প্রেরণা দিয়ে মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করতে চাই। তাছাড়া মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে কেন? মানুষ নিজের দায়িত্ববোধ থেকে নিজের ও নিজের পরিবারের জন্য মাস্ক পরবে বলে আশা করছি। বড় রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিলসহ জনসমাগম হয় এমন নানা অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয় পুলিশ। করোনার কারণে অনুমতি দেয়া বন্ধ থাকবে কি-না, জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, অনুমতি দেয়ার বিষয়টি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। আমরা অনুমতি দিলেও প্রতিটি অনুষ্ঠানে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। তবে বেপরোয়াভাবে মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা করতে থাকলে করোনা পরিস্থিতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে।
করোনা মোকাবিলায় পুলিশ জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে। পুলিশ সদস্যরা মরদেহ সৎকার করেছেন। খাবার বিতরণ করেছেন। এ পর্যন্ত পুলিশের ৮৭ জন সদস্য করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজারের অধিক সদস্য। দ্বিতীয় ধাপেও পুলিশ সদস্যরা মাস্ক পরতে ও হ্যাড-স্যানিটাইজার ব্যবহারে সচেতনতা তৈরি করবে।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে মাস্ক বিতরণ শুরু হয়েছে। আজ থেকে রাস্তায় থাকবে নজরদারি। করোনা মোকাবিলায় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের নির্দেশে সম্প্রতি রাজারবাগ এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে চার হাজার মাস্ক বিতরণ করেন উপপুলিশ কমিশনার (ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা।
করোনা মোকাবিলায় দেশব্যাপী পুলিশের উদ্যোগ: করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশের নির্দেশিকা (এসওপি) বিতরণ; পুলিশের লোগো সম্বলিত ফ্রি মাস্ক বিতরণ; করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ; সচেতনতামূলক মাইকিং, লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ; সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখা; করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের দাফন; পুলিশের অব্যবহৃত স্থাপনা আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রূপান্তর। এছাড়াও ইমিগ্রেশন পুলিশের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ ও কোয়ারেন্টাইনে প্রেরণ; জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে করোনা সংক্রান্ত আগত কলের সাড়াদান; পুলিশ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে কোভিড পরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রদান; পুলিশ হাসপাতালে পুলিশ ব্যতীত অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান।