গুনাহ মাফের অপূর্ব সুযোগ নিয়ে হাজির হচ্ছে রমজানুল মোবারক। গত বছর করোনার কারণে রমজানে আমরা মসজিদে তারাবিহ পড়তে পারিনি। কিছুটা উন্নতি হওয়ায় মসজিদে নিয়মিত হাজির হলেও করোনার প্রকোপ আবারো বাড়ছে। গত শুক্রবার আমাদের দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে বিগত ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫৫৪ জন। জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপীয় দেশসমূহ আবার লকডাউনের দিকে যাচ্ছে। বিশ্বে ইতোমধ্যেই ২৭ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ ইন্তেকাল করেছে। এককভাবে মারা গেছে আমেরিকায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার, ব্রিটেনে ১ লাখ ২৬ হাজার, ফ্রান্সে ৯২ হাজার, জার্মানিতে ৭৫ হাজার, ইতালিতে ১ লাখ ৫ হাজার, ভারতে ১ লাখ ৬০ হাজার, তুরস্কে ৩০ হাজার, বাংলাদেশে ৮ হাজার ৭৩৮ জন। মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক মুসলিম দেশগুলোতে কম।
মানুষ আল্লাহর সেরা সৃষ্টি, তাঁর প্রতিনিধি ও বড় প্রিয়ভাজন। আল্লাহ বান্দার জন্য তৈরি করেছেন অপূর্ব সৌন্দর্যম-িত ও নিয়ামতে পূর্ণ চিরস্থায়ী জান্নাত। এ জন্য প্রয়োজন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর আনুগত্য করা ও তাঁর নাফরমানি পরিহার করে চলা। মানুষ যখন জমিনে চরমভাবে জুলুম-নির্যাতন চালায় ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয় তখন আল্লাহ পাক সেই জনপদে গজব নাজিল করেন, যাতে ভালো-মন্দ উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষা গ্রহণের জন্য আল্লাহ পাক কুরআন মজিদে কিছু ঘটনার উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে নমরুদ ও ফেরাউনের জুলুম-নির্যাতনের করুণ পরিণতি এবং লুত আ:-এর জাতির অশ্লীলতার ভয়াবহ পরিণতির কথা।
লুত আ:-এর জাতি সমকামিতায় লিপ্ত হয়েছিল। নবী কোনোভাবেই তাঁর জাতিকে নিবৃত্ত করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ পাক সেই জাতিকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকা সেই পাপেই নিমজ্জিত। এ ছাড়া নগ্নতা, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতায় সমগ্র বিশ্ব আক্রান্ত। সমাজে অশ্লীল কার্যক্রমের প্রসার ঘটলে আল্লাহ পাক সেই জাতির ওপর গজব নাজিল করেন। বিপরীত পক্ষে জনপদের মানুষ যদি তাওবা করে (নাফরমানি থেকে ফিরে আসে) ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ সে সময়ে গজব হটিয়ে দেন। তাই আমরা করোনা থেকে সতর্ক হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে তাওবা-ইস্তিগফার করব।
করোনায় আমরা আমাদের অনেক প্রিয়জন ও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হারিয়েছি। আল্লাহ পাক তাঁদের ক্ষমা করুন ও জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। আল্লাহ পাক মেহেরবানি করে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং আমরা দোয়া করি তিনি যেন দয়া করে আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দেন ও সুস্থ শরীরে রোজা রাখার তৌফিক দান করেন। রমজানের রোজা মানুষকে গুনাহ থেকে মুক্তি দেয়। রোজার দিনে হালাল খাবার আল্লাহর নিষেধের কারণে আমরা পরিহার করে চলি। মানুষকে আল্লাহর হুকুম পালনে অভ্যস্ত করার লক্ষ্যেই রোজা ফরজ করা হয়েছে। দীর্ঘ একটি মাস এই প্রশিক্ষণ চলে।
সাময়িক নিষেধাজ্ঞায় আমরা দিনের বেলায় পানাহার বর্জন করে চলি এবং চলি শুধু আল্লাহর ভয়ে। এখন প্রশ্ন, আল্লাহ পাক যেসব কাজ স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ (হারাম) করেছেন তা কি কোনো বিশ্বাসী বান্দা করতে পারে? যথার্থ ঈমানদার হলে কখনোই পারে না। আসলে ঈমানের দুর্বলতার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। আজ দেশে সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, পর্দাহীনতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। রাস্তায় বের হলেই বেপর্দা নারী-পুরুষ চোখে পড়ে। মনে হয় না, এরা মুসলিম জাতির কোনো অংশ, হতে পারে ইহুদি, খ্রিষ্টান বা মুশরিক জাতিগোষ্ঠীর কেউ যারা পর্দাকে ফরজ হিসেবে জানে না।
মিরাজ থেকে ফিরে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘জাহান্নামে নারী জাতির উপস্থিতি বেশি লক্ষ করলাম।’ বিভিন্ন অপরাধের শাস্তির বর্ণনাও তিনি দান করেন। যেসব মহিলা মাথা খোলা রেখে চলাফেরা করে তাদের শাস্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘জাহান্নামে দেখলাম তাদের চুল বেঁধে লটকিয়ে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। আমাদের মা-বোন ও কন্যাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা আল্লাহ ও আখিরাতকে বিশ্বাস করেন এবং ব্যক্তিগত জীবনে নামাজ পড়েন, রমজানে রোজা রাখেন ও জাকাত আদায় করেন। দুর্ভাগ্য, পর্দার ব্যাপারে তারা বেশ উদাসীন। পর্দাহীনতা শুধু তাদেরকে নয়, তাদের অভিভাবকদেরও (পিতা-স্বামী-ভাই) জাহান্নামে ঠেলে দেবে। রাসূলুল্লাহ সা:-এর স্পষ্ট হাদিস, দাইয়ুুস কখনো জান্নাতে যাবে না। ইসলামের বিধান হলো- নারী-পুরুষ কেউ বিপরীত লিঙ্গের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করবে না। ইসলামে ঘোর আপত্তি, একজন নারী ও পুরুষের নিভৃতে একত্র হওয়া। হাদিসে বলা হয়েছে, সেখানে তৃতীয়জন হিসেবে উপস্থিত থাকে শয়তান।
এই করোনা আমাদেরকে মৃত্যুর কথা বারবার স্মরণ করে দিচ্ছে এবং সামনে রমজান। প্রস্তুতিস্বরূপ আমরা এখনই সিদ্ধান্ত নিই, ফরজ পর্দা পালনসহ আল্লাহর সব বিধিবিধান মেনে চলব। এই নিয়তের বদৌলতে আল্লাহ পাক আমাদের অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন। হে আল্লাহ! মুসলিম অবস্থায় তুমি আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখো ও মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দিও। আমীন। লেখক : উপাধ্যক্ষ (অব:), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ।