শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

মা-বাবার প্রতি সন্তানের কর্তব্য

মুফতি শরিফুল ইসলাম নাঈম:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ, ২০২১

পৃথিবীতে মানুষ আগমনের বাহ্যিক মাধ্যম হচ্ছে মা-বাবা। তাদের দাম্পত্য সম্পর্কে আমরা দুনিয়াতে আলোর মুখ দেখেছি। জন্মের আগে থেকেই তারা আমাদের ওপর অনুগ্রহকারী। জন্মের আগে মা গর্ভে ধারণের কষ্ট সয়েছেন। জন্মের সময় প্রসববেদনা মেনে নিয়েছেন। এত কষ্ট করে দুনিয়াতে নিয়ে আসার পর দেড় থেকে দুই বছর নিজের শরীরের এক অংশ আমাদের পান করিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমি মানুষকে স্বীয় সদাচরণের আদেশ দিয়েছি। (কারণ) তার মা তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছেন, কষ্ট করে জন্ম দিয়েছেন। গর্ভধারণ ও দুধপানের মোট সময় ৩০ মাস। (এই পুরো সময় সব ধরনের কষ্ট সহ্য করেছেন) (৪৬ : ১৫)।
এটুকুই নয়, বরং নির্দিষ্ট একটা বয়স পর্যন্ত আমাদের জীবন ধারণের ওসিলা হয়েছেন। সেটি না হলে হয়তো সূচনালগ্নেই জীবন আমাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে উঠত! শুধু দুর্বিষহই নয়, অস্তিত্বই হয়তো খুঁজে পাওয়া যেত না।
মা-বাবার এ অনুগ্রহগুলো এমন যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দ্বারা সম্ভব নয়। তাই তো তাদের এ অনুগ্রহের কথা আল্লাহ নিজের ইবাদতের পরই বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না। মা-বাবার সাথে সদাচরণ করবে। তোমার জীবদ্দশায় যদি তাদের যেকোনো একজন বা উভয়জন বার্ধক্যে উপনীত হন তখন (তাদের কোনো কথায় বা আচরণে বিরক্ত হয়ে) উফ্ বলো না। তাদের ধমক দিও না। (তথা তারা কষ্ট পাওয়ার মতো কোনো কথা বা কাজ যেন তোমার দ্বারা প্রকাশ না পায়) বরং তাদের সাথে কথা বলার সময় সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করো। তাদের সামনে দয়াবনত হয়ে বিনয়ের বাহু বিছিয়ে দাও। আর তাদের জন্য এ বলে দোয়া করো, হে প্রভু আপনি তাদের প্রতি দয়া করুন যেমন তারা আমাকে দয়া দিয়ে লালন পালন করেছেন’ (১৭ : ২৪)।
যাদের এত অনুগ্রহ আমাদের ওপর, নিশ্চয়ই আমাদের ওপর তাদের কিছু হক রয়েছে, দায়িত্ব রয়েছে। তার কিছু আদায় করতে হয় জীবিত অবস্থায় আর কিছু মৃত্যুর পর। জীবিত অবস্থায় দায়িত্বগুলো হলো- তাদের সাথে উত্তম আচরণ করা। তাদের বাধ্য থাকা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে মা-বাবার সাথে উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভধারণ করেছেন। তার দুধ ছাড়ানো দুই বছরে শেষ হয়েছে। আর আমি নির্দেশ দিতেছি যে, আমার প্রতি ও তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।’ (মনে রাখবে) পরিশেষে আমার কাছেই ফিরতে হবে (৩১ : ১৪)।

এমনকি মা-বাবা বিধর্মী হলেও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার বজায় রাখতে হবে। যতক্ষণ শরিয়তবিরোধী কোনো হুকুম না দেন ততক্ষণ তাদের কথা মানতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি মা-বাবা তোমাকে এমন কাউকে আমার সাথে শরিক করতে চাপ দেন যার ব্যাপারে তোমার জানা নেই, তাহলে তাদের কথা মানবে না। তবে দুনিয়ায় তাদের সাথে ভালো আচরণ করে যাবে’ (৩১ : ১৫)।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সা: একদা তিনবার বললেন, ‘তার নাসিকা ধুলোয় ধুসরিত হোক!’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কার ব্যাপারে এসব বদদোয়া করছেন? রাসূল সা: বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার মা-বাবা উভয়কে অথবা যেকোনো একজনকে বার্ধক্যে উপনীত অবস্থায় পেল তবুও সে (তাদের খেদমত করে) জান্নাতের পথ সুগম করতে পারল না’ (মুসলিম-২৫৫১)। তবে মা এসব সদাচরণ ও খেদমতের ক্ষেত্রে বাবার চেয়ে অগ্রগণ্য হবেন। কারণ, সন্তানের জন্য মায়ের ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্ট-মুজাহাদা বাবার তুলনায় অনেক বেশি। এ কারণেই কুরআনের একাধিক জায়গায় মায়ের কষ্টের কথা বলা হয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসূল সা:-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! উত্তম ব্যবহারের সবচেয়ে বেশি হকদার কে? রাসূল সা: বললেন, ‘তোমার মা’। জিজ্ঞেস করল, এরপর কে? বললেন, ‘তোমার মা’। এরপর আবার জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? বললেন, ‘তোমার মা’। চতুর্থবার জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তখন বললেন, ‘তোমার বাবা’ (মুসলিম-২৫৪৮)।
মা-বাবা অক্ষম হলে তাদের খরচ দেয়া। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- এক ব্যক্তি হুজুর সা:-এর কাছে এসে বলল, আমার সম্পদ আছে, সন্তান আছে। আমার বাবাও আছেন। আমার বাবা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী (এখন আমার করণীয় কি)? রাসূল সা: বললেন, ‘তুমি ও তোমার সম্পদ তোমার বাবার’। আরো বললেন, ‘তোমাদের সন্তানাদি তোমাদের সর্বোত্তম উপার্জন। সুতরাং তোমরা তাদের সম্পদ ভোগ করতে পারো’ (ইবনে মাজাহ-১৮৭০)। এসব হচ্ছে মা-বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় দায়িত্ব। মারা গেলেও কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেগুলো হলোÑ তাদের জন্য দোয়া করা, কবর জিয়ারত করা, তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সাথে সদাচরণ করা। হাদিসে এসেছে, রাসূল সা:-এর কাছে একবার বনু সালামার এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করল, আমার মা-বাবার মৃত্যুর পরও কি তাদের সাথে সদাচরণের কিছু বাকি থাকে? রাসূল সা: বললেন, ‘হ্যাঁ, তাদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করবে, মৃত্যুর পর তাদের কোনো বৈধ ওসিয়ত থাকলে সেটা পূরণ করবে, তাদের আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে আর তাদের বন্ধুবান্ধবকে সম্মান করবে’ (আবু দাউদ-৫১৪২, ইবনে মাজাহ-৩৬৬৪)।
মা-বাবার অবাধ্য হওয়া, তাদের সাথে বেয়াদবি করা, কোনো কথায় বা কাজে তাদের কষ্ট দেয়া জঘন্যতম অপরাধ; সামাজিকভাবে ও শরিয়তের দৃষ্টিতেও। হাদিসে এসেছে, সবচেয়ে জঘন্য কবিরা গুনাহ হচ্ছে- মা-বাবার অবাধ্যতা করা’ (বুখারি-৫৯৭৩)। অন্য হাদিসে আছে, মা-বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। মা-বাবার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে’ (তিরমিজি-১৯০৪)।
অনেকে আছে আবার সুন্দরী স্ত্রীর কথায় মা-বাবার অবাধ্য হয়, তাদের সাথে বেয়াদবি করে। এটি কিয়ামতের অন্যতম এক আলামত। কিয়ামতের আলামত সংক্রান্ত হাদিসে আছে, কিয়ামতের আগে মানুষ বিবিদের কথা মান্য করবে এবং মায়ের নাফরমানি করবে। বন্ধুবান্ধবকে নিকটবর্তী করবে, বাবাকে দূরে সরিয়ে রাখবে’ (তিরমিজি-২২১৬)। এ বিষয়টি বর্তমান সমাজে প্রকট আকার ধারণ করেছে। মা-বাবার অবাধ্যতার শাস্তি দুনিয়াতেও পেতে হয়। তার কোনো দোয়া কবুল করা হয় না। বর্ণিত আছে- রাসূল সা: বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা চাইলে বান্দার সব গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু মা-বাবার অবাধ্যতার গুনাহ তিনি মাফ করবেন না। আর অবাধ্য সন্তানের সাজা তার মৃত্যুর আগে দুনিয়াতেই দেয়া হবে।’ (মিশকাত-৪২১)। অভিজ্ঞতায়ও দেখা যায়, অবাধ্য ও বেয়াদব সন্তানদের পরিণাম খুবই ভয়াবহ হয়। লেখক : অনুবাদক, প্রাবন্ধিক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com