পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের রায়পাড়া এলাকায় আইনজীবী হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ১০ টি দরিদ্র পরিবারকে মামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের দাবি ওই এলাকার দেলোয়ার হোসেন ও আজাদ সহ তাদের সহযোগিদের নির্যাতন ও হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। এমনকি কেউ কেউ ভিটে ছাড়াও হয়েছেন। বুধবার বিকেলে পঞ্চগড় কায়েতপাড়া এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইনজীবী হাবিবুল ইসলাম হাবিব। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,পূর্ব থেকেই দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের সাথে তাদের বিরোধ রয়েছে। তিনি তার কেনা সাড়ে ২৩ শতক জমির মধ্যে বাড়ি করে বসবাস করছেন। কৌশলে দেলোয়াররা গোপনে ওই জমিটি তাদের দাবি করে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে মাঠ পর্চা সংগ্রহ করে। বিষয়টি জানার পর ওই আইনজীবী পঞ্চগড় সদর সেটেলমেন্ট অফিসে আপত্তি জানালে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার বিষয়টি বেঞ্চ সহকারী আব্দুস সালামকে সরেজমিনে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। আব্দুস সালাম তদন্ত করে জমিটি ওই আইনজীবীর নামে দখল দেখায় এবং সেখানে তাদের বসত বাড়ি রয়েছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে আইনজীবী গত ২৪ মার্চ সেটেলমেন্ট অফিসে পর্চা নিতে গেলে অফিসের সামনে দেলোয়ারের লোকজন তাকে বাঁধা দেয়। এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে তিনি পুলিশের সহযোগিতায় সেখান থেকে ফিরে আসেন। পরদিন আবার লোকজন নিয়ে ওই আইনজীবীর পরিবারের লোকজনদের উপর হামলা করে দেলোয়ার, দেলোয়ারের ভাই আবুল কালাম আজাদসহ তাদের লোকজন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি আরও বলেন, দেলোয়ার সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে মিথ্যে তথ্য সরবরাহ করছে। তাদের অত্যাচারে আমি ঠিক মতো কাজ কর্ম করতে পারছি না। আমার চার ভাই শিক্ষানবিশ আইনজীবী। তাদেরকেও বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি আরেও বলেন, আমার গ্রামের প্রতিবেশি অধুনামৃত ওয়ালিয়ার রহমান, পিতা- মৃত আহম্মদ আলীর সহিত আমার পিতার সুদীর্ঘ কাল যাবৎ জমা জমির বিরোধ থাকার দরুন এবং উক্ত ওয়ালিয়ারের ভাই আইয়ুব আলীর ঔরষজাত এবং একই গ্রামের আমার আপন খালাতো বোন মনোয়ারার গর্ভজাত একটি পুত্র সন্তান মোঃ আরিফ(২৭) এর পিতৃত্ব নির্ধারণ লইয়া আমার বাবা আমার খালাতো বোনের পক্ষে অবস্থান করার কারণে উপরোক্ত ব্যক্তিদ্বয় আমার পিতার ও খালাতো বোনের পরিবারের সহিত উঠেপড়ে লাগিয়া থাকাবস্থায় পূর্ব পরিকল্পনা বশতঃ উপরোক্ত ব্যক্তিদ্বয় ও তাহাদের পরিবারের অপরাপর লোকজন আমার পিতাকে জমা জমির বিরোধের দরুন ২০০৯ ইং সনে গুরুত্বর ভাবে মারপিট করিয়া জখম করিলে এবং আমার অপরাপর ছোট ভাইগণ ছাত্র ছিলেন পরিবারের কোন কর্তা না থাকার কারণে আমি জেলা আইনজীবী সমিতি পঞ্চগড়ের বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবীর পরামর্শে উপরোক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের সহিত স্বেচ্ছায় আপোষের চেষ্টা করিয়া ব্যর্থ হই। উপরোক্ত ব্যক্তিদ্বয় সরকারী চাকুরীজীবী তৎমধ্যে আইয়ুব আলী সরকারী মহিলা কলেজ পঞ্চগড়ে হিসাব রক্ষক পদে চাকুরী করে। আমার পিতার তুলনায় অনেক বিত্তবান এবং আমাদের গ্রামের এক প্রকার শাসকও ছিলেন বটে। এক পর্যায়ে আমি আমার পিতার মারপিটের দরুন সি,আর ৫৭৪/০৯ নং একটি ফৌজদারী মামলা আনয়ন করিলে উপরোক্ত আইয়ুব আলীর ২য় স্ত্রী শামীম আরা বেগম আমার পিতা সহ আমার সকল ছোট ভাইদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ভাবে মারামারি ও চুরির মামলা আনয়ন করিলে পিটিশন ২৪১/০৯ নং মামলার উদ্ভব হয় এবং সেই মামলার তদন্ত রিপোর্টে সত্যতা না আসিলেও আমার ছাত্র ভাইদের জীবন সর্বনাশের জন্য নারাজী দাখিল করিবে মর্মে ভয় দেখাইয়া উপরোক্ত ব্যক্তিদ্বয় আমাকে জব্দ করিয়া আমার আনীত সি,আর ৫৭৪/০৯ নং মামলাটি আপোষে প্রত্যাহার করাইতে মানসিক চাপ প্রয়োগ করিলে আমি স্বেচ্ছায় প্রত্যাহার করিয়া লই। পরবর্তীতে উপরোক্ত ব্যক্তিদের পরিবারের সহিত কিছুটা সুসম্পর্ক বজায় থাকাকালীন উপরোক্ত আইয়ুব আলীর স্ত্রী মোছাঃ শামীম আরা বেগম তাহার টাকার আবশ্যক বশতঃ আমার পিতার নিকট ১ বিঘা জমি বিক্রি করতঃ দখল প্রদান করে। যাহা কোন মামলার বাবদ নয়। তিনি আরোও বলেন,ওয়ালিয়ার ও তার ছেলে দেলোয়ার হোসেন রাসেল গং আমি সহ আরো কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৬৪/১০ একটি বাটোয়ারা মামলা বিজ্ঞ সিভিল আদালতে আনয়ন করে এবং উক্ত মামলায় একটি ভূয়া দলিল মুলে জমি দাবী করিলে বিজ্ঞ সহকারী জজ তেঁতুলিয়ার বিজ্ঞ বিচারক জনাব মোঃ এমদাদ মহোদয় উক্ত দলিলটি জ¦াল প্রমানিত হওয়ায় আটক করতঃ তৎমর্মে রায় ও ডিক্রী প্রদান করতঃ বিজ্ঞ বিচারক মহোদয় স্বয়ং বাদী হইয়া উক্ত ওয়ালিয়ার ও তার ছেলে দেলোয়ার হোসেন রাসেল সহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারী মামলা বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট পঞ্চগড় মহোদয়ের নিকট আনয়ন করিলে উক্ত রায় ও ডিক্রীর অসম্মতিতে উপরোক্ত ওয়ালিয়ার ও ছেলে দেলোয়ার হোসেন রাসেল গং বিজ্ঞ জেলা জজ আদালত, পঞ্চগড়ে ১০৮/১৮ নং একটি বাটোয়ারা আপীল মামলা আনয়ন করতঃ উহার বরাতে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট পঞ্চগড় আদালত হইতে জ¦াল জালিয়াতির সি,আর ৮৩১/১৮ নং ফৌজদারী মামলায় অন্তবর্তীকালীন জামিন লাভ করে। উপরোক্ত ওয়ালিয়ার রহমান ও ছেলে দেলোয়ার হোসেন রাসেল গং আমি সহ আরো অনেকের বিরুদ্ধে ৯১/১৬ একটি সিভিল পৃথক মামলা বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালত পঞ্চগড়ে আনয়ন করিলে এবং উক্ত মামলায় আমার বসতবাড়ী সহ আরো কতক দাগের জমা জমিতে ইনজাংশন চাইলে বিজ্ঞ সংশ্লিষ্ট আদালত বিধি মোতাবেক আমার বসত বাড়ীতে সার্ভে জানা কমিশনারের মাধ্যমে রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে এবং জেলা ও উপজেলা-পঞ্চগড়, মৌজা- সাতমেড়া, জে,এল নং-২, এস,এ খতিয়ান নং- ১৪৬ এর ১২৮১ দাগে আমার স্বত্ব দখলীয় পাকা বসত বাড়ী ও অপর কতক ব্যক্তির পৃথক বসত বাড়ী এবং স্বত্ব দখলীয় জমা জমি থাকায় উক্ত সিভিল মামলায় উপরোক্ত ব্যক্তিদের ইনজাংশন বিজ্ঞ সিভিল আদালত নামঞ্জুর করে। তিনি আরোও বলেন তারা আমাদের প্রতিবেশি আব্দুল খালেককে ভিটে ছাড়া করেছে। অথচ পৈত্রিক সূত্রে সেখানে ওই ব্যক্তির ৫০ শতক জমি রয়েছে। সে জমিতে তাদের ভয়ে যেতে পারছেন না ওই দরিদ্র ব্যক্তি। তারা জমি নিয়ে আমাদের এলাকার খায়রুল, বাবুল ও দুই প্রতিবন্ধী আমু ও খামুকেও হয়রানি করে চলছে। তাদের পক্ষে সাক্ষী দিতে রাজি না হওয়ায় তাদের আধিয়ার গোলাম উদ্দিন,রফিকুল, শফিকুলকে জমি থেকে সরিয়ে দিয়ে জমিগুলো দখলে নিয়েছে। ওই জমিতে তাদের বাদাম, মরিচ ও তিল রয়েছে। এছাড়া তাদের মামলায় আইনজীবীরা সহযোগিতা করছেন না বলে যে অভিযোগ করেছেন তা সত্য নয়। তার প্রত্যেকটি মামলাই আইনজীবীর মাধ্যমে করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান। একই সাথে হয়রানি করায় দেলোয়ার ও তার সহযোগিদের শাস্তি দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে পঞ্চগড় আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সহ ভুক্তভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।