শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৪ অপরাহ্ন

‘ইবাদতের প্রশান্তি ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছে’

ইসলাম ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০২১

আমি ১৯৬৪ সালে তানজানিয়ার দারুস সালামে জন্মগ্রহণ করি। আমার বাবা গ্যাবিন গ্রিন ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একজন ঔপনিবেশিক প্রাশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি পরবর্তী সময়ে বার্কলেস ব্যাংকে যোগদান করেন এবং ব্যাংকের মিসরীয় শাখায় নিয়োগ পান। আমি রাজকীয় রোমান ক্যাথলিক স্কুল, যা এমপ্লেফোর্থ (সেন্ট মার্টিনস এমপ্লেফোর্থ স্কুল অ্যান্ড কলেজ) নামে পরিচিত তাতে লেখাপড়া করি। ইতিহাস বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই কিন্তু লেখাপড়া শেষ করতে পারিনি। লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার কারণ হলো, আমি ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পুরোপুরি হতাশ হয়ে যাই। আমাদের ইউরোপকেন্দ্রিক এবং কল্পিত বিশ্ব ইতিহাস পড়ানো হয়। যেখানে মানবসভ্যতার বিকাশ ও তার পুরোপুরি গৌরব ইউরোপকে দেওয়া হয়। মিসরে অবস্থান করার কারণে এবং সেখানে সভ্যতার প্রাচীন নিদর্শনগুলো দেখার কারণে আমি জানতে পারি ইউরোপে পঠিত ইতিহাস কাল্পনিক ও মিথ্যা। আমি প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া ছেড়ে ব্যক্তিগতভাবে অধ্যয়ন শুরু করি। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল, জাতি-গোষ্ঠী, বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ ও দর্শনের সম্পর্কে জানতে শুরু করি। এভাবেই আমি ইসলামের সন্ধান পাই।
কোরআন পাঠ শুরুর পর তা আমাকে তাৎক্ষণিকভাবে আকর্ষণ করে। কোরআনের বার্তাগুলোর জাদুকরী প্রভাব ছিল। আমি বিশ্বাস করি এটা ছিল এক ঐশ্বরিক বিপ্লব। আল্লাহ আমাকে পথপ্রদর্শন করেছেন। আমি জানি না, কেন তিনি আমাকে ইসলামের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। অন্য ধর্মের প্রতি আমার আকর্ষণের কারণ হলো, আট বছর বয়স থেকে আমার খ্রিস্টবাদের প্রতি অতৃপ্তি ছিল, বহু বিষয়ে দ্বিধা ছিল। যেমন খ্রিস্টবাদে ঈশ্বরকে অনন্ত ও চিরন্তন বলা হয়েছে আবার মেরি গর্ভে তার বেড়ে ওঠা ও তার মানবীয় জন্মগ্রহণও অনুমোদন করেছে। তাহলে কি মেরি ঈশ্বরের চেয়ে মহান? এ ছাড়া ত্রিত্ববাদের ধারণাটিও আমার কাছে ধাঁধাপূর্ণ মনে হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো স্পষ্টত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। খ্রিস্টবাদের ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার পরও বেশির ভাগ শ্বেতাঙ্গ, মধ্যবিত্ত ও ইংরেজের মতো আমি বিষয়টি গোপন করতাম। কিন্তু একজন মিসরীয় যখন আমাকে প্রশ্ন করতে থাকে তখন আমার ভেতর চেতন আসতে শুরু করে। যখন আমাকে ক্রুশ দিয়ে বলা হলো ঈশ্বর এর ওপর মৃত্যুবরণ করেছেন, তখন আমি বুঝলাম ঈশ্বরের চিরন্তন হওয়ার ধারণাটি আর রইল না। আমি আরো গভীরভাবে অনুভব করলাম পশ্চিমারা শুধু জীবন উপভোগ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে। তাদের জীবনে উচ্চ কোনো লক্ষ্য নেই। অন্যদিকে দেখলাম, মিসরীয়রা দরিদ্র, জীবন-জীবিকার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, কিন্তু তারা সুখী। তারা সব কিছু আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেয় এবং ঘরে ফিরে সব কষ্টের কথা ভুলে যায়। প্রাত্যহিক প্রার্থনা তাদের প্রাত্যহিক দুশ্চিন্তাগুলো দূর করে দেয়। তারা বিনম্র, বিনয়ী ও স্রষ্টার ঘনিষ্ঠ হয়ে নামাজে দাঁড়ায়।
আমি ইংল্যান্ডে মানুষকে সুখী হওয়ার চেষ্টা করতে দেখেছি। কিন্তু সুখের মাপকাঠি বেশি উঁচু হওয়ায় তা তাদের স্পর্শের বাইরে থেকে যায়। তারা প্রার্থনা করে গান, নাচ ও হাততালির সমন্বয়ে। সেখানে না আছে বিনয়, না আছে স্রষ্টার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। ফলে তারা ইবাদতের প্রশান্তি থেকে বঞ্চিত। পশ্চিমা সমাজের সঙ্গে মুসলিম সমাজের দূরত্বের একটি দিক ব্যক্তির অবাধ স্বাধীনতা। এখানে মুসলিম যৌনতার মতো বিষয়ে অসহায় বোধ করেন। এখানে বেশির ভাগ মেয়ে ১৩ বছরের আগে তাদের কুমারিত্ব হারায় এবং একজন মেয়ের তিন থেকে চারজন ছেলে বন্ধু থাকা অস্বাভাবিক কিছু না। একজন মুসলিম ভেবে উঠতে পারে না যৌনতা, মাদক ও অবাধ যৌন ঘনিষ্ঠতার মতো বিষয়গুলোকে কিভাবে সামাল দেবে। ইসলামিক ওয়েব ডটকম থেকে আবরার আবদুল্লাহর ভাষান্তর।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com