বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন

মুমিনের অনুপম বৈশিষ্ট্য

মো: আবদুল গনী শিব্বীর:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০২১

আশরাফুল মাখলুকাতখ্যাত মানবজাতির প্রতি মহান আল্লাহর মহাঅনুগ্রহ হলো হেদায়েত দান করা। যে ব্যক্তি হেদায়েত লাভ করে কেবল তার ভাগ্যে ঈমান জোটে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর প্রতি বিশ্বাসীকে মুমিন বলা হয়। পবিত্র কুরআন মাজিদে মুমিনের পরিচয় প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন, ‘যারা অদৃশ্যে ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে ও তাদের যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে এবং তোমার প্রতি যা নাজিল হয়েছে ও তোমার আগে যা নাজিল হয়েছে তাতে যারা ঈমান আনে ও আখিরাতে যারা নিশ্চিত বিশ্বাসী, তারাই তাদের প্রতিপালক নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম’ (সূরা বাকারাহ : ৩-৫)।
মুমিনের অনুপম বৈশিষ্ট্যসমূহ
ক. আল্লাহর ভয়ে ভীত : মুমিন সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘প্রকৃত মুমিন তারাই যখন তাদের কাছে আল্লাহর নাম নেয়া হয়, তখন তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে। আর যখন তাদের কাছে তাঁর (কুরআনের) আয়াত পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। তারা তাদের প্রভুর ওপরই ভরসা করে। তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমার দেয়া রুজি থেকে (আল্লাহর পথে) খরচ করে। তারাই হলো সত্যিকারের মুমিন’ (সূরা আনফাল : ২-৪)।
খ. দেহমন পবিত্র : ঈমানদার ব্যক্তির দেহমন পবিত্র ও পরিশুদ্ধ। কেননা, সে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক পবিত্রতা অবলম্বন করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরকেও ভালোবাসেন’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত-২২২)।
গ. সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণ : আল্লাহ বলেন, ‘কাজেই তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না’ (সূরা বাকারাহ : ১৫২)। তিনি আরো বলেন, ‘যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে, যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন যথাযথ সালাত কায়েম করবে; নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য’ (সূরা নিসা : ১০৩)।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমাদেরকে কি এমন একটি উত্তম আমলের সংবাদ দেবো যা তোমাদের মালিকের কাছে অধিকতর পবিত্র, তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অধিকতর সহায়ক, স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যয় করা থেকেও তোমাদের জন্য উত্তম, শত্রুর সাথে মোকাবেলা করে গর্দান দেয়া-নেয়া থেকে উত্তম? তারা বলল, হ্যাঁ অবশ্যই বলবেন। তিনি বললেন, জিকরুল্লাহ। অর্থাৎ সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করা’ ( তিরমিজি ৫/৪৫৯)।
ঘ. সালাতের প্রতি যতœশীল : ‘যারা নিজেদের নামাজে বিনয়াবনত হয় এবং নিজেদের সালাতগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে’ (সূরা মুমিনুন : ২ ও ৯)। আল্লাহ বলেন, ‘বলো, নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য’ (সূরা আনয়াম : ১৬২)।
হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমার সালাত থেকে অপর জুমার সালাত এবং এক রমজান মাসের সিয়াম থেকে অপর রমজান মাসের সিয়াম সেসব গুনাহের জন্য কাফফারা হয়, যা এর মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে থাকে; যখন কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়’ (সহিহ মুসলিম-২৩৩)।
ঙ. নেক কাজে সর্বদা লেগে থাকে : আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে এবং স্বীয় পালনকর্তার সমীপে বিনতি প্রকাশ করেছে তারাই বেহেশতবাসী, সেখানেই তারা চিরকাল থাকবে’ (সূরা হুদ, আয়াত-২৩ )। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘একজন মুসলমান যতক্ষণ পর্যন্ত তার অপর মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহও তার সাহায্যে হাত বাড়িয়ে রাখেন’ (সহিহ মুসলিম, নাসায়ি ও তিরমিজি) চ. পাপ থেকে দূরে থাকে : প্রকৃত মুমিন আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক রাসূল সা:-এর সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করে। সব প্রকার পাপকাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেষ্টা চালায়। আল্লাহ পাক বলেন, ‘(মুমিন) বাজে কাজ থেকে দূরে থাকে। নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে’ (সূরা মুমিনুন, আয়াত-৩ ও ৫)।
ছ. বড়দের শ্রদ্ধা ও ছোটদের স্নেহ করে : মুমিন তার ঈমানের দাবি অনুসারে বড়দের শ্রদ্ধা এবং ছোটদের স্নেহ করে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যারা ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না তারা আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়’ (আবু দাউদ: ৪৮৪২)।
জ. পরোপকারেই ব্রত : মুমিন ব্যক্তির জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নিজের জীবনকে অপরের কল্যাণে বা পরোপকারে বিলিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় করো এবং (তাঁর কথা) শ্রবণ করো ও (তাঁর) আনুগত্য করো এবং (তাঁর পথে) ব্যয় করো; এতেই তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। যারা তাদের আত্মার কৃপণতা (স্বার্থপরতা ও লোভ) থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণদান করো তবে তিনি তোমাদের জন্য তা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন; আর আল্লাহ অতিশয় গুণগ্রাহী, পরম সহনশীল’ (সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত : ১৬-১৭)। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি সদয় হও, তাহলে আসমানের মালিক আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি সদয় হবেন’ (তিরমিজি: ১৮৪৭)।
ঝ. আত্মসমালোচনা করে : প্রকৃত মুমিন নিজের কৃতকর্মের ব্যাপারে নিজে সচেতন। প্রতিদিনকার কর্মকা-ে কোনটি সঠিক কোনটি বেঠিক এ নিয়ে আত্মসমালোচনা করে। আত্মসমালোচনার ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আগামীকালের জন্য (অর্থাৎ আখিরাতের জন্য) সে কী প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করা। আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে আল্লাহ তাদের আত্মভোলা করে দিয়েছেন (অর্থাৎ তারা কোন কাজটি ভালো, কোনটি মন্দ তা বাছাই করা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে)। নিশ্চয়ই তারা ফাসিক’ (সূরা হাশর, আয়াত-১৮)। হাদিসে এসেছে, হজরত ওমর রা: বলেন, ‘তোমরা নিজেদের আমলনামার হিসাব নিজেরাই গ্রহণ করো, চূড়ান্ত হিসাব দিবসে তোমাদের কাছ থেকে হিসাব গৃহীত হওয়ার আগেই। আর তোমরা তোমাদের আমলনামা মেপে নাও চূড়ান্ত দিনে মাপ করার আগেই। কেননা, আজকের দিনে নিজের হিসাব নিজেই গ্রহণ করতে পারলে আগামী দিনের চূড়ান্ত মুহূর্তে তা তোমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। তাই সেই মহাপ্রদর্শনীর দিনের জন্য তোমরা নিজেদের সুসজ্জিত করে নাও, যেদিন তোমরা (তোমাদের আমলসহ) উপস্থিত হবে এবং তোমাদের কিছুই সে দিন গোপন থাকবে না’ ( তিরমিজি: ২৪৫৯)।
এ ছাড়া একজন মুমিন নিজের সুখ অন্যদের সাথে ভাগ করে, অন্যের দুঃখে কষ্ট পায়, দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন হয়, উত্তম চরিত্রে বলীয়ান হয়, তার ভাষা ও আচরণ সুন্দর হয়, সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী হয়, নীতির প্রশ্নে হয় আপসহীন ইত্যাদি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com