বস্ত্র শিল্পের ডাইং, ফিণিশিং, স্পিনিং, পাওয়ারলোম ও তৈরি পোষাক কারখানা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী গুলোতে সূতার দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচের তুলনায় বিক্রয় মূল্য কমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন লোকসান দিয়ে সম্প্রতি শিল্পাঞ্চল খ্যাত নরসিংদী জেলার মাধবদী থানা এলাকার বেশ কিছু শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় দু’মাসের বেশী সময় ধরে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলে। গত মঙ্গলবার শিল্পাঞ্চল মাধবদী ঘুরে বন্ধ কারখানার মালিকদের সাথে কথা বলার সময় তারা বলেছেন একদিকে ঋনের কিস্তির চাপ আর অন্যদিকে তৈরি কাপড় বিক্রিতে লোকসান দিতে দিতে বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। কারন তৈরি কাপড় স্টক করলেও কখন যে বাজার চাঙ্গা হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। বিশেষ করে যে সব কারখানা ব্যাংক ঋনের ওপর নির্ভরশীল সেগুলো দেউলিয়া ঘোষনা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই বলে জানিয়েছেন মাধবদীর বেশ ক’জন কারখানা মালিক। তারা জানান লোকসান দিয়ে কাপড় বিক্রি না করলে শ্রমিক বিল পরিশোধ করা সম্ভব নয়, তাই লোকসান দিয়েই কাপড় বিক্রি করতে হয়। অপর দিকে দেশের বাইরে রপ্তানী যোগ্য প্রতিষ্ঠান গুলোতেও নানা প্রতিকূল অবস্থা ও করোনার কারণে অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে জানালেন কারখানা মালিক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, আবুল মিয়া, মকবুল হোসেন, বাবুল মিয়া সহ বেশ ক’জন শিল্প মালিক। মাধবদী থানা এলাকার ৮টি ইউনিয়নে বিক্ষিপ্ত ভাবে গড়ে উঠা হাজার হাজার কারখনায় উৎপাদিত বস্ত্র সারাদেশের বস্ত্র চাহিদার প্রায় ৪০ ভাগ তৈরি হয় এখানে। শুধু দেশেই নয় উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি এখানকার কাপড় ও তৈরি পোশাক সারাদেশে এবং বর্হিবিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু পাওয়ারলোম ও গার্মেন্টস সেক্টরে শিল্পের সাথে জড়িতরা বলেছেন দেশীয় কাপড় ও তৈরি পোষাক ও কাপড় বিক্রিতে সমস্যার মূল কারণ অবৈধ পথে শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে আসা বিদেশী কাপড় দেশীয় কাপড়ের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করতে পারছে। ফলে সাধারণ ক্রেতারা দেশীয় কাপড় বেশী মূল্য দিয়ে ক্রয় করছেনা। এ কারনে নিয়মিত শ্রমিক বিল পরিশোধ করা যাচ্ছেনা। এ ছাড়াও বিদেশ থেকে আমদানীকৃত তুলার মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও আমদানি সল্পতা সমস্যায় সুতা তৈরি সীমিত রয়েছে বলে প্রয়োজন মতো সুতা তৈরি হচ্ছেনা। ফলে দেশে তৈরি সুতার দামও বেড়েছে অনেক। আর তাই উৎপাদন মুল্য বেড়ে যাওয়ায় কাঙ্খিত মূল্যে কাপড় বিক্রি করতে না পারায় বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আস্তে আস্তে এ অঞ্চলের অধিকাংশ কারখানাই বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে বেকার হয়ে পড়া কর্মরত শ্রমিক/কর্মচারীর তালিকা ক্রমশঃবাড়তেই থাকবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিল্প সংশ্লিষ্ট অনেকে।